BRAKING NEWS

রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় নবযুগ আনতে তৎপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জিবিতে ডাক্তার সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পায়ে বেড়ি, আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার জোর উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ মার্চ ৷৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় নবযুগ আনতে চাইছে নতুন সরকার৷ সেই লক্ষ্যেও তৎপর হয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মঙ্গলবার আগরতলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মনের পৌরোহিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবি নিজস্ব৷

সুদীপ রায় বর্মন৷ জিবি হাসপাতালের চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের পায়ে বেড়ি পড়াতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর৷ পাশাপাশি জটিল রোগের চিকিৎসায় চুক্তিভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার উদ্যোগও নিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, চিকিৎসক স্বল্পতা মেটাতে চিকিৎসকদের অবসরের বয়স সীমা আরো ৫ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া জিবি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের খোলনলচে বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে৷ এমনকি, প্রত্যন্তে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকদের পাঠাতে বদলী নীতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ মঙ্গলবার মহাকরণের ২নং কনফারেন্স হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ আধিকারীকদের বৈঠকে এমন আরোও কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷

এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন বলেন, স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ আধিকারীকদের নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে৷ তাঁর কথায়, এখন থেকে তিন মাস অন্তর রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পর্যালোচনা করা হবে৷ পর্যালোচনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্যের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতেই হবে৷

এদিনের বৈঠকের নির্যাশ থেকে মনে হচ্ছে, কেবল দৃষ্টিভঙ্গি বদলের সাথে সাথেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সম্ভব৷ কারণ, এদিন স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ পদাধিকারীরা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেঁরাতে খুব একটা মেহনতের প্রয়োজন হবে না৷ প্রথমেই রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল জিবি হাসপাতালের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জিবি হাসপাতালে আঁধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্সের পাশাপাশি সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ জে কে দেববর্মার কথায়, খুব শীঘ্রই আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য আঁধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স চালু করা হবে৷ সাথে বসানো হবে সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা৷

এদিন তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার মান আরোও বাড়াতে রাজ্যের বাইরে থেকে চুক্তি ভিত্তিক স্পেশালিস্ট ও সুপারস্পেশালিস্ট নিউরোলজি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি প্রমুখ চিকিৎসকদের আনা হবে৷ প্রয়োজনে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ি সাম্মানিক দেওয়া হবে৷ এবিষয়ে মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কথায়, রাজ্য থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বহু রোগীকে রেফার করা হচ্ছে৷ তাতে প্রচুর অর্থ রাজ্য সরকারের ব্যয় করতে হচ্ছে৷ কিন্তু স্পেশালিস্ট এবং সুপারস্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের বহিঃরাজ্য থেকে এরাজ্যে নিয়ে আসা হলে কাউকেই অন্য রাজ্যে চিকিৎসার জন্য ছুঁটতে হবে না৷ তাতে, রাজ্য সরকার এবং রোগীর পরিবার উভয়েরই সাশ্রয় হবে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রেফারের জন্য যে অর্থ খরচ হচ্ছে প্রতি বছর, প্রায় সমান টাকায় রাজ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে চিকিৎসক ঘাটতি রয়েছে৷  তাই চিকিৎসকদের অবসরের বয়স সীমা আরো পাচ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চিকিৎসকদের চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হবে৷

এদিকে, জিবি হাসপাতালেরজরুরি বিভাগে এখন থেকে মেডিক্যাল অফিসারদের পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগের পিজি স্টুডেন্টদেরও থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে৷ এরজন্য জরুরি বিভাগের স্থান পরিবর্তন করা হবে৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগে এই নয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি বহিঃবিভাগের সময় শেষ হওয়ার পর বিকেল ৪৩০ মিনিট থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন৷ রাত ১১টার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত চিকিৎসকরা অন কলে থাকবেন৷ তবে তাদের নামের তালিকা জরুরি বিভাগে বোর্ডে উল্লেখ করা থাকবে৷ মেডিক্যাল সুপার প্রতিদিন এই সূচি নির্ধারন করবেন৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কথায়, এই উদ্যোগের ফলে রোগীর পরিবার জানতে পারবেন প্রয়োজনে কোন চিকিৎসককে গভীর রাতেও ডেকে আনা যাবে৷

এদিন স্বাস্থ্য অধিকর্তা আরো জানিয়েছেন, রাজ্যের একুশটি হাসপাতালকে ই-হসপিট্যালের আওতায় আনা হবে৷ আগামী মাস তিনেকের মধ্যেই ই-হসপিট্যাল চালু করা হবে৷ জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতে এই উদ্যোগ গ্রহণের ফলে রোগীরা অনলাইনেই অ্যাপয়েন্টম্যান্ট নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য পরিষেবাও নিতে পারবেন৷ এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টেলি মেডিসিনকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকরা যেতে চান না৷ তাই আজকের পর্যালোচনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত জেলা,  মহকুমা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর বদলি নীতি কার্যকর করা হবে৷

জিবি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবাকে আরো উন্নতমানের নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, এখন থেকে কাজের গুণমানের ভিত্তিকে প্রতিমাসে বাছাই করে চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরষৃকত করবে স্বাস্থ্য দফতর৷

এদিকে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন অধিকর্তা ডাঃ সৈলেশ কুমার যাদব বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ১৩৯ টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে৷ তা সত্বেও ইমার্জেন্সি রেসপন্স সিস্টেমে ১০২ ডায়েল করলেই ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করা হবে৷ এরজন্য ৫০ টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ এই অ্যাম্বুলেন্স গুলিতে জিপিএসের মাধ্যমে ট্রেক করা সহজ হবে৷ তিনি আরো জানান, ১০৪ ডায়েল করলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন অভিযোগ জানানো যাবে৷ এদিন তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আয়ুষ্মান ভারত যোজনা চালু করা হবে৷ তার কথায় মা ও শিশু সুরক্ষার জন্য আগরতলা সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গোমুতি ও ধলাই জেলা হাসপাতালে মেটারন্যাল ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট খোলা হবে৷ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অন্তগর্ত আইজিএম হাসপাতাল, খোয়াই, ধলাই ও ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের বিনামূল্যে সিটি স্ক্যান পরিষেবা দেওয়া হবে৷

প্রেসক্রিপশন লেখার ধরন চালাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইটি  বেসড প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে চিকিৎসকদের৷ এছাড়া সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু জেনেরিক মেডিসিনই প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারবেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে কি ওষুধ লিখছেন সেদিকেও নজরদারী চালানো হবে৷ এদিকে জেনেরিক মেডিসিন সমস্ত জেনেরিক কাউন্টারে মজুত থাকার বিষয়টি রাজ্য সরকার সুনিশ্চিত করবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মাসিতে ওষুধের গুণমান যাচাইয়ের জন্য প্রতিনিয়ত ড্রাগ কন্ট্রোলারকে নজরদারী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ এদিনের বৈঠকে স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যস্তর থেকে শুরু করে জেলা এবং মহকুমা স্তর পর্যন্ত পরিকাঠামো গত দিক দিয়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু সেই পরিকাঠামো ব্যবহার করার মানুষের অভাব ভিষণভাবে রয়েছে৷ কারণ, দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বেহাল করে রেখেছে বলে এদিনের বৈঠকে চর্চা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *