BRAKING NEWS

বিজ্ঞানের আকাশে নক্ষত্র পতন, প্রয়াত স্টিফেন হকিং

লন্ডন, ১৪ মার্চ (হি.স.): বিজ্ঞানের আকাশে নক্ষত্র পতন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়ে ছিল ৭৬। তাঁর পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পরিবারের তরফ থেকে তাঁর তিন সন্তান লুসি, রবার্ট এবং টিম এক বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় বাবা আজ মারা গিয়েছেন। তিনি একজন মহান বিজ্ঞানী ও অসাধারণ মানুষ ছিলেন। যার কাজ এবং পরম্পরা বহু বছর বেঁচে থাকবে। তাঁর সাহস, অধ্যাবসায়, প্রতিভা বিশ্বজুড়ে বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলতেন এটা মহাবিশ্ব থেকে অধিক হবে না। যদি বাড়িতে ভালবাসার মানুষ বসবাস না করে। তাঁর অনুপস্থিতি চিরকাল আমারা অনুভব করব।’
তত্ত্বীয় কসমোলজি আর কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষ হকিংয়ের প্রধান গবেষণা ক্ষেত্র ছিল। প্রথম জীবনে বৈজ্ঞানিক রজার পেনরাজের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ আপেক্ষিকতায় সিংগুলারিটি সংক্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন তিনি। ব্ল্যাক হোল নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্যই তিনি বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছিলেন। পাশপাশি বিজ্ঞানের জটিল তত্বকে সহজ, সরল করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য তিনি নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে গিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ৮ ই জানুয়ারি ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন স্টিফেন হকিং। ১৯৫৯ সালে ভর্তি হন অক্সফোড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে গবেষক হিসেবে যুক্ত হন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই সেন্টার অফ থিওরিটিক্যাল কসমোলজি রিসার্চ ডিরেক্টর হন।রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টসের সাম্মানিক ফেলো ছিলেন তিনি। পাশপাশি পোটেনফিসিয়েল অফ সায়েন্সের সদস্য ছিলেন।১৯৬৩ সালে তিনি মটোর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন। ব্ল্যাক হোল নিয়ে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তাঁর লেখা বই ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ জনপ্রিতা অর্জন করে। প্রায় ১০ মিলিয়ন কপি ওই বইটির বিক্রি হয়। আইনস্টাইনের পরে তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয়তম বিজ্ঞানী। ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ ছাড়াও তাঁর লেখা অনান্য বইগুলি হল দি ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল, মাই ব্রিফ হিস্ট্রি, অন দি স্লোডার অফ জায়েন্ট। আমেরিকার তরফ থেকে তাঁকে প্রেসিডেন্সিয়েল মেডেল অফ ফ্রিডম সম্মানে ভূষিত করা হয়।
তাঁর মৃত্যুতে বিজ্ঞান মহলের পাশাপাশি গোটা বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শরীর সিংহভাগ অংশ অকেজো থাকার পরেও হাল না ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর এর জন্যই বহু মানুষের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎসস্থল। ২০১৪ সালে তাঁর জীবনীর উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। দি থিওরি অফ এভরি থিং নামে ওই ছায়াছবিতে তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেন এডি রেডমেনি।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স লি এক শোকবার্তায় জানিয়েছেন, ‘আমরা এক বিশাল বুদ্ধিমত্তা ও সুন্দর মনকে হারালাম। শান্তিতে থাকুন স্টিফেন হকিং।’ আমেরিকার আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যুইট করে জানানো হয়েছে, প্রসিদ্ধ পদার্থ বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দূত ছিলেন তিনি। তাঁর থিওরিগুলি বহু সম্ভাবনার দিক খুলে দিয়েছে। আর সেই গুলিকে আমরা অনুসরণ করে চলেছি।
স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মাইক্রসোফটের সিইও সত্য নাডেলা। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, এক মহানকে আজ আমরা হারালাম। বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। জটিল তত্ব এবং ধারণাকে তিনি সরল করে জনগণের কাছে উপস্থাপনা করেছেন। মহাবিশ্বকে জানতে তাঁর নিরলস পরিশ্রম এবং ইচ্ছা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *