খগেন দাশের জীবনাবসান

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ জানুয়ারি৷৷ বামফ্রন্ট ত্রিপুরা কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ খগেন দাশের জীবনাবসান হয়েছে৷ রবিবার ভোরে কলকতায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর৷ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন৷ তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ তাঁর মৃত্যুতে সিপিআইএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী গভীর শোক প্রকাশ করেছে৷ দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার রাত ৩টা ২৫ মিনিটে কলকাতার প্রিটোরিয়া স্ট্রীটের ত্রিপুরা ভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন সি পি আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক কমরেড খগেন দাস৷ বয়স হয়েছিল ৮১ বছর৷ সি পি আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি কলকাতায় ত্রিপুরা ভবনে ছিলেন৷ তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তাঁর শোকার্ত পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে৷
কলকাতায় তাঁর জীবনাবসানের খবর রাজ্যে আসতেই গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে৷ রাজ্যে সি পি আই(এম) এর সমস্ত কর্মসূচী দুদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়৷ পার্টির পতাকা রবি ও সোমবার অর্ধনমিত থাকবে৷
সকালেই কলকাতায় মুজফফর আহমেদ ভবনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা কমরেড খগেন দাসের সংক্ষিপ্ত স্মরণ সভা ডাকে৷ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন৷ তাঁর মরদেহ মুজফফর আহমেদ ভবনে নিয়ে আসা হলে শ্রদ্ধা জানান সি পি আই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রামচন্দ্র পিল্লাই, প্রকাশ কারাত, মানিক সরকার, বিমান বসু, সূর্য্যকান্ত মিশ্র সহ পলিটব্যুরো সদস্যরা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা৷
আজ সন্ধ্যায় কমরেড নিরঞ্জন দেববর্মার সভাপতিত্বে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি এক সভায় মিলিত হয়ে বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কমরেড খগেন দাসের প্রয়াণে গভীর শোক জানায়, তাঁর স্মৃতির প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ বামফ্রন্ট প্রয়াত কমরেড খগেন দাসের পরবিার পরিজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানায়৷ ত্রিপুরায় সি পি আই(এম) এবং বামফ্রন্ট যখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংগ্রামের মুখোমুখি তখন কমরেড খগেন দাসের এই প্রয়ান বিরাট ক্ষতি৷ এই সময়ে রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে তাঁর নেতৃত্ব ও অভিভাবক সুলভ দিকনির্দেশের অভাব নিশ্চিতভাবেই অনুভূত হবে৷ নির্বাচন ঘোষণার পর সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় কমরেড খগেন দাসের আহ্বান ছিল আরও বেশি জনসমর্থনে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়তে হবে৷ সি পি আই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী তাঁর সেই শেষ আহ্বানকে সার্থক করে তুলে আরও বেশি ভোটেও বেশি আসনে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়েই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবার এবং তাঁর আরব্ধ কাজ পূর্ণ করার অঙ্গীকার করছে৷
এদিকে, বিজেপি প্রদেশ কমিটির তরফ থেকে প্রাক্তন সাংসদ তথা বরিষ্ঠ কমিউনিস্ট নেতৃত্ব খগেন দাশের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে৷ দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ত্রিপুরার প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্ষীয়ান নেতা খগেন দাশের প্রয়াণে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য কমিটি গভীর শোক প্রকট করছে এবং উনার পরিবার ও আত্মীয় পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে৷ প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ খগেন দাশ একজন বিচক্ষণ ও জনপ্রিয় রাজনেতা ছিলেন৷ রাজ্যের প্রতি উনার অবদান রাজবাসী সর্বদাই শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করবে৷ উনার প্রয়ানে রাজ্যবাসী এবং অভিজ্ঞ, দূরদর্শী ও কর্মকুশল রাজনেতাকে হারালো৷ ভারতীয় জনতা পার্টি ঈশ্বরের নিকট উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছে এবং উনার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে৷
দলের পক্ষ থেকে এই বিবৃতিতে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনীরও বর্ননা দেওয়া হয়েছে৷ দল জানিয়েছে, কমরেড খগেন দাসের জন্ম ১৯৩৭ সালের ৪ সেপ্ঢেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার মেহেরকালীর দুর্গাপুর গ্রামে৷ তার বাবার নাম হরিশ চন্দ্র দাস৷ ১৯৫৫ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতায় যান৷ সেখানে সুরেন্দ্র নাথ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম এবং বি এড পাশ করেন৷ কলকাতাতেই বামপন্থী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন৷ এর আগে সুকল জীবনে ১৯৫৪ সালে তদানিন্তন -পূর্ব পাকিস্তানে মৌলানা ভাসানি এবং শেখ মুজিবর রহমানের দলের হয়েও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেন৷ ১৯৬৬ সালে ত্রিপুরায় এসে রানিরবাজার বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতার কাজ নেন৷ তখন থেকেই শিক্ষক-কর্মচারী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন৷ কংগ্রেসের স্বৈরাচারী শাসনে চাকুরিচ্যুত হন তিনি, অনিল সরকার, শ্রীশ ভট্টাচার্য প্রমুখ৷
১৯৬৮ সালে তিনি সি পি আই(এম)’র সভ্যপদ অর্জন করেন৷ ত্রিপুরা রাজ্য গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক৷ পরে যুক্ত হন কৃষক আন্দোলনে৷ ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক৷ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ছিলেন কৃষক সভার রাজ্য কমিটির সহসভাপতি৷ জরুরী অবস্থার সময়ে কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং শেষ পর্যায়ে কারারুদ্ধ ছিলেন৷
কমরেড খগেন দাস ১৯৭৮ সালে প্রথম বার মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন৷ ১৯৮৩ সালে দ্বিতীয় বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য ও রাজস্ব মন্ত্রী ছিলেন৷ ১৯৯৩-৯৮ পর্বে ছিলেন তৃতীয় বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কমরেড দশরথ দেবের রাজনৈতিক সচিব৷ ১৯৯৮-২০০২ পর্যন্ত তিনি রাজ্য সভার সদস্য ছিলেন৷ ২০০২-২০১৪ পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসন থেকে জয়ী হন৷ রাজ্যের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরেও বরাবর সোচ্চার ছিলেন৷ ১৯৯৮ সালে তিনি সি পি আই (এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন, ২০০৫ সালে দিল্লিতে সি পি আই(এম) ’র অষ্টদশ পার্টি কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *