BRAKING NEWS

হিন্দুত্ব ভারতবর্ষের মূল চালিকাশক্তি ও পরিচয় : মোহন ভাগবত

গুয়াহাটি, ২১ জানুয়ারি, (হি.স.) : হিন্দুত্ব ভারতবর্ষের মূল চালিকাশক্তি। হিন্দুত্বই ভারতবর্ষের পরিচয়। বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক মোহন ভাগবত। গুয়াহাটির খানাপাড়ায় পশু মহাবিদ্যালয় ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘লুইতপাড়িয়া হিন্দু সমাবেশ’-এ ভাষণ দিতে গিয়ে এ ভাবেই জাগ্রত হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মোহন ভাগবত।
উত্তর অসম প্রান্ত এবং মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের পূর্ণ গণবেশধারী ৩৫ হাজার স্বয়ংসেবক-সহ প্রায় এক লক্ষ দর্শক-শ্রোতার সমাবেশে বৌদ্ধিক রাখতে গিয়ে সরসংঘচালক ভাগবত বলেন, আজকের হিন্দু সঙ্গমে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও আপ্লুত। আজ যে বিপুলসংখ্যক স্বয়ংসেবক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন, তা একদিনের ফসল নয়। ৯২ বছরের অক্লান্ত সাধনার ফল। এ প্রসঙ্গে তিনি উপস্থিত সকল নাগরিককে সংঘ কী বুঝতে দৈনন্দিন শাখায় যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। বলেছেন, শাখায় না গেলে সংঘের দর্শন জানা যাবে না। লুইতপাড়িয়া হিন্দু সমাবেশের মাধ্যমে সংঘ শক্তি প্রদর্শন করছে বলে যারা প্রচার করছিল তার জবাব দিতে গিয়ে সরসংঘচালক বলেন, সংঘ কখনও শক্তি প্রদর্শন করে না। শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং সমাজ তথা দেশ যাতে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সে প্রচেষ্টা করছে। শক্তি প্রদর্শন করতে হয় না, তা এমনিতে প্রস্ফুটিত হয়। এবং এই বল কেবলমাত্র হিন্দুত্ব। আজ দেশের কোণায় কোণায় সংঘের শাখা চলছে। গড়ে উঠেছেন অসংখ্য স্বয়ংসেবক-কার্যকর্তা। তাঁরাই দেশের শক্তি। তা দেখানোর দরকার নেই।
স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে মোহন ভাগবত বিশ্বের যেখানে হিন্দুত্ব নিষ্পেষণের বলি হচ্ছে, সেখানে ভারতকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। বলেন, যেখানেই হিন্দুরা সংকটে থাকুন না-কেন, তাঁদের পাশে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে ভারতকে।
মোহন ভাগবত আরও বলেন, হিন্দুত্বের মানে ব্যক্তিস্বার্থ নয়, সমাজের কল্যাণ, স্বদেশের কল্যাণ এবং বিশ্ব কল্যাণ। এই তিন মন্ত্রের আধারেই নিরলসভাবে সংঘ কাজ করে চলেছে। বলেন, ২০০০ বছর আগে থেকে বিশ্বের শান্তি কামনায় বহু আত্মনিয়োগ করেছেন। শেষে দেখা গেছে এই ভারতবর্ষে এলেই শান্তির নতুন দিশা পাওয়া যায়। ভারত হল বিশ্বের প্রাচীনতম রাষ্ট্র। তাই, প্রাচীনতম এই রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। অতএব, গোটা বিশ্বে শান্তির বার্তা বা রাস্তা আমাদেরই দেখাতে হবে। সর্বোপরি সময় এসে গেছে, এখনই ভারতকে শিরদাঁড়া তুলে উঠে দাঁড়াতে হবে। তবে এ কাজ যে কঠিন তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন ভাগবত। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের খাবার-দাবার পৃথক, বেশভূষণ পৃথক, ভাষা পৃথক, জীবনশৈলী, আচার-অনুষ্ঠানও পৃথক। হলে কী, আমাদের ভাবনা, আত্মীয়তা পৃথক নয়, এক। আমরা এক সূত্রে গাঁথা। আমরা মানে ভারতীয়রা সর্বক্ষেত্রে সন্তুষ্ট, এটাই ভারবর্ষের মূল আধার। এই দেশ হিন্দুময় বলেই তা সম্ভব। সকলকে সুখে-সমৃদ্ধিতে ভরপুর হতে পরিশ্রমের যে প্রয়োজন তারও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সরসংঘচলক বলেন, আমাদের বেদ বিশ্বের সব থেকে প্রাচীন বিজ্ঞান-নির্ভর সাহিত্য। অথর্ববেদের উদ্ধৃতি দিয়ে পৃথিবীর সৃষ্টির বর্ণনাও করেছেন তিনি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কুফল সম্পর্কেও বক্তব্য পেশ করেছেন সরসংঘচালক। প্রসঙ্গক্রমে তিনি শ্রীমন্ত শংকরদেবের উদ্ধৃতিও দিয়েছেন। বলেন, কোটি কোটি জন্মের পুণ্যকর্মের ফলে মহান মনীষীরা ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য দেশে যুগের পর যুগ জন্মলাভ থেকে বহু পুণ্য ভারতে ক্ষণকালের জন্ম। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, ভারত সমরসে পরিপূর্ণ বলেই এই দেশে জন্ম লাভ পূণ্যকর্মের ফল। ভারতে রয়েছে করুণা, দয়া, ক্ষমা, যা অন্য দেশে নেই বললে চলে।
পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে মোহন ভাগবত বলেন, ভারতের প্রাচীন সভ্যতার মূল প্রতীক সিন্ধু, সরস্বতী, মোহনজোদোড়ো, হরপ্পা প্রভৃতির অবস্থান পাকিস্তানে। তবু দেশ ভাগের সময় তারা কখনও বলেনি ভারতের সব প্রতীকচিহ্ন আমাদের কবজায়, তাই ভারতবর্ষের নাম আমরা চাই। কখনও বলেনি। কেন বলেনি, কেননা ভারত নামেই আমাদের পরিচয়। আর এই পরিচয়ের মানে হল হিন্দুত্ব। বলেন, যতদিন হিন্দুত্ব থাকবে ততদিন ভারত জীবিত থাকবে।
তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, আমাদের দেশ হিন্দু রাষ্ট্র। হিন্দুত্বের আধারেই আমাদের অস্তিত্ব টিঁকে থাকবে। আমরা কারোর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষন করি না। সকলের সুখ, শান্তি কামনা করি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে সৃষ্ট পাকিস্তানের সঙ্গে শত্রুতা আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু পাকিস্তান শত্রুতা জিইয়ে রেখেছে। বলেন, সংঘ চায় সদ্ভাব, সহিষ্ণুতা, অনুশাসন, ত্যাগ, সমর্পণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।
আজকের লুইতপাড়িয়া হিন্দু সমাবেশ-এর মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, পূর্ণ গণবেশ পরে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁই, অসমের তিন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, নবকুমার দলে, পরিমল শুক্লবৈদ্য (পূর্ণ গণবেশ পরে), বিধানসভার উপাধ্যক্ষ দিলীপকুমার পাল, অসম ও নাগাল্যান্ডের ১২ জন জনজাতি রাজা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধু-সন্ত, অসমের প্রায় সব সত্রের সত্রাধিকাররা। ছিলেন, অখিল ভারতীয় সহ-সরকার্যবাহ ডঃ কৃষ্ণগোপাল, ভি ভাগাইয়া, অখিল ভারতীয় সহ-প্রচারপ্রমুখ সুনীল দেশপাণ্ডে প্রমুখ।
সমাবেশে ছিলেন ১৯৪৭ সাল থেকে অসমে যতজন প্রচারক সমাজের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে গিয়েছেন, সেই ত্যাগী জীবিত ব্যক্তিরা।
মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে নিয়ে উত্তর অসম প্রান্ত। অনুষ্ঠিত সমাবেশে উত্তর অসম প্রান্তের অন্তর্গত চার হাজার গ্রাম ও শহর থেকে পূর্ণ গণবেশধারী ৩৫ হাজার স্বয়ংসেবক অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মেঘালয় থেকে চার হাজার এবং নাগাল্যান্ড থেকে প্রায় দুই হাজার পূর্ণ গণবেশধারী এদিন নানা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া উত্তর অসম প্রান্তের সকল খণ্ডের অন্তর্গত ৫০ শতাংশ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে স্বয়ংসেবক এবং সাধারণ নাগরিকরা এদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সংঘের কার্যক্রম উপভোগ করেছেন। এদিন মূল কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিকেল দুটোয় ধ্বজোত্তলনের মাধ্যমে। চলেছে ৩.৪৫ মিনিট পর্যন্ত। সমাবেশে যোগ-আসন প্রদর্শনের পাশাপাশি সামূহিক সাংঘিক গীত পরিবেশন করেছেন স্বয়ংসেবকরা। পরে একক সংগীত পরিবেশনও হয়েছে। বিশাল সংখ্যক স্বয়ংসেবকদের পাশাপাশি সকল আমন্ত্রিতদের জলপানের যোগান দিয়ছেন গুয়াহাটি মহানগরের ২০ হাজার পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *