মাম্প্স, হাম বা মিজেল্স এবং রুবেলা ইনফেকশন

মাম্প্স , এই রোগটা একটি আরএনএ ভাইরাস যাকে আমরা বলি মিক্সোভাইরাস প্যারাটিভাইটিস থেকে সৃষ্টি হয়৷ গালের দুদিকে প্যারোটিও গ্ল্যান্ড বড়

ডাঃ সত্যজিৎ চক্রবর্তী

হয়ে যায়, যার জন্য বাচ্চারা ব্যথায় মুখ খুলতে পারে না, আর জ্বরে ভুগে৷ এই রোগে প্যারোটিও গ্ল্যান্ডে পঁুজ হয় না৷ এছাড়াও নীচের চোয়ালের নীচে অন্যান্য গ্ল্যান্ডও ফুলতে পারে৷ এই রোগে সমস্ত শরীরে ব্যথা থাকে৷ পৃথিবীর সর্বত্রই এই রোগ হতে পারে৷ খুবই অসুস্থতা হয়, কিন্তু মৃত্যু খুবই কম হয়৷ যেসব বাচারা এর টিকা নেয়নি তাদের মধ্যে রোগটা খুব বেশি দেখা যায়৷ একবার মাম্প্স রোগে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয়বার এই রোগটা আর হয় না৷ মানে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়৷
এই ভাইরাস রক্তে, পেচ্ছাবে, সিএসএফ এ এবং মানুষের দুধে পাওয়া যেতে পারে৷
৫-৯ বছর বয়সের বাচ্চাদের এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে যে কোন বয়সেই মাম্প্স হতে পারে৷ মায়ের দুধ খেয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়ার দরুণ শিশুরা ৫ মাস বয়স পর্যন্ত এই রোগ থেকে রক্ষা পায়৷
শীতে এবং বসন্তে এই রোগটা বেশি হতে দেখা যায়৷ বেশি ভীড়ে বাস করলে রোগটা মহামারির মতও হতে পারে৷ রোগটা হতে ২-৪ সপ্তাহ বা ১৪-১৮ দিন সময় লাগতে পারে৷ অনেক সময় টেস্টিস্, সিএনএস বা প্রস্টেটও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ মাম্প্স এর ফোলা সাধারণত ১-২ সপ্তাহে কমে যায়৷
জটিলতা , স্ক্রোটাসে ইনফেক্শন, ওভারিতে ইনফেকশন, প্যানক্রিয়াস, হেপাটাইটিস এসব হতে পারে৷
কানে না শোনা, জোরায় জোরায় ব্যথা এসবও হতে পারে৷ শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষ ১ লক্ষ লোকের মধ্যে কানে না শুনতে পারে৷ শতকরা ১৫ ভাগ লোকের রোগ হতে পারে৷ কেউ কেউ আবার এনকেফেলাইটিসে ভুগতে পারে৷ গর্ভবতী অবস্থায় প্রথম দিকে এই মাম্প্স হলে, বাচ্চাটার অপারেশন হতে পারে৷ জন্মগত সমস্যায় অবশ্য এরা ভোগে না৷
হাম , এই রোগটিও এক ধরনের আরএনএস মিক্সোভাইরাস থেকে হয় যাকে আমরা ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে হাম বলি৷ জ্বর, সর্দিকাশি এবং তারপরে সারা শরীরে লাল লাল দানা বা রেশ বেরোয়৷ বাচ্চারা অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারাও যায়৷ মানুষের মধ্যেই হাম রোগ হয়৷ পৃথিবীর সর্বত্রই এই রোগ দেখা যায়৷ আধুনিক শিল্পোন্নত দেশগুলিতে এই রোগ এখন দেখাই যায় না৷ কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷
১৯৮০ সালে যখন টিকা বহুল পরিমাণে ব্যবহার শুরু হয় নি তখন ২৬ মিলিয়ন শিশু সমস্ত বিশ্বে মারা গিয়েছিল৷
ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফ, এরা এই রোগের প্রতিরোধে দুটো টিকার ব্যবস্থা করেছেন৷
ভারতবর্ষে এই রোগ বেশি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে আর পাহাড়ি অঞ্চলে৷ ডব্লিউএইচও বলছেন উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ৫ বছর বয়সের নীচে প্রায় শতকরা ২ ভাগ বাচ্চা এই রোগে মারা যায়৷ যে কোন সময়েই এই রোগটি হতে পারে, তবে শুকনো আবহাওয়াতে বেশি হয়৷ আমাদের দেশে শীত ও বসন্তে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ ১০ দিন সময় লাগে হাম হতে আর ১৪ দিন লাগে দানা বেরুতে৷
অপুষ্টিতে ভোগা শিশু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ রোটা ধরা যায় লাল লাল দানা দেখে আর মুখের ভেতরে কপলিক স্পট দেখে৷ বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়, পাতলা পায়খানা হয়, মুখের ভেতরে ঘা হয়, নিউমোনিয়া, কান পাকা এসব হতে পারে৷ এনকেফেলাইটিস বা সাবএকিউট প্যান এনকেফেলাইটিস হতে পারে৷ এই সমস্ত রোগীদের ভিটামিন এ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়৷ বাচচারা না হলে অন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
রুলো বা জার্মান হাম , এই রোগ সাধারণ সর্দি, কাশির মত হয় এবং দিন তিনেক থাকে৷ ম্যাকুলো প্যাপুলার র্যাস বেরোয়৷ আরএনএ ভাইরাস থাকে টোবিং বলা হয় তার থেকে এই রোগের সৃষ্টি৷ ৫০-৬৫ শতাংশ লোকের বিশেষ কোন অসুবিধে হয় না৷ সর্দি, গলা ব্যথা বা অন্ধ জ্বর থাকতে পারে৷ র্যাশ বেরিয়ে যায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই৷ প্রথমে মুখে তারপর সারা শরীরে৷ চোখে কনজাংটিভ হতে পারে৷ খুব কমক্ষেত্রে জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা হতে পারে৷
এই সাধারণ রুবেলা যদি গর্ভবর্তী মহিলাদের হয় প্রথম বার সপ্তাহে, তাহলে তাদের বাচ্চার জন্মগত বিকলাঙ্গ দেখা দেয়৷ যেমন মাইক্রোসেফলি, চোখে ছানি, বুদ্ধি কম হওয়া ইত্যাদি৷
এই জন্যই বলা হয় যে কোন মহিলা যেন গর্ভবতী হবার আগেই দুটি এমএমআর টিকা নিয়ে নেন৷ সুন্দর সুস্থ স্বাস্থ্যবান সন্তান তো সবাই চায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *