হিন্দুরাই এদেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক ,শক্তিশালী সমাজ গঠনে প্রত্যেকের ভূমিকা নিতে হবে ঃ মোহন ভাগবত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ ডিসেম্বর৷৷ সমাজ গঠনে শক্তির প্রয়োজন৷ আর এই শক্তির জন্য সংগঠিত হওয়া আরো বেশি প্রয়োজন৷ এই বিষয়টি হিন্দু সমাজ উপলব্ধি করতে পেরেছে৷ কারণ, প্রকৃত অর্থে হিন্দুরাই এদেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক৷ রবিবার আগরতলা বিবেকানন্দ ময়দানে ত্রিপুরা হিন্দু মালায়মা সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত জমায়েতে একথা বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক মোহন ভাগবত৷ তাঁর কথায়, শুধু ঈশ্বর আর সরকারের উপর বিশ্বাস করে থাকলে হবে না৷ সংগঠিত শক্তিশালী সমাজ গঠনের জন্য প্রত্যেকের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে৷
এদিন এই জমায়েতে রাজ্যের বিভিন্ন মন্দির ও আশ্রমের সাধুসন্তদের পাশাপাশি বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অরুনোদয় সাহা, গাইনোকলোজিস্ট ডাঃ এ কে রায়, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিশোর দেববর্মা, রাজ্য সরকারের প্রাক্তন প্রধান সচিব বিকে রায়, পূর্ত দপ্তরের প্রাক্তন সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ভবানী শংঙ্কর দেববর্মা, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এন জেনা, অধ্যাপক সুকান্ত বনিক, অল ইন্ডিয়া রেডিওর প্রাক্তন স্টেশন ডিরেক্টর মনোজ দেববর্মা, সুকল অব সায়েন্সের কর্ণধার অভিজিৎ ভট্টাচার্য প্রমুখ৷ এছাড়া শান্তিকালী আশ্রমের প্রধান চিত্ত মহারাজ, জগন্নাথ জিও মন্দিরের ভক্ত মহারাজ সহ আরো অনেকেই এদিন উপস্থিত ছিলেন৷
সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, হিন্দু জমায়েতে স্বয়ংসেবক এবং কার্যকর্তারা রক্তঘাম ঝরিয়েছেন৷ চার প্রচারক দীনেন্দ্রনাথ দে, শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সুধাময় দত্ত এবং শ্যামল সেনগুপ্ত এই রাজ্যেই কাজ করেছেন৷ তাঁরা তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন৷ আর আজকের হিন্দু জমায়েতে উপস্থিতি প্রমাণ করে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়নি৷ এই রাজ্যের হিন্দু সমাজ বুঝতে পেরেছে, এবার তাদের শক্তির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ আর শক্তির জন্য সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন৷
তিনি আরও বলেন, হিন্দুরা পরম্পরাগতভাবে মেনে আসছে সত্যই পাথেয়৷ কিন্তু বাদবাকি দুনিয়া সত্যকে মানতে রাজি নয়৷ তারা গায়ের শক্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছে৷ ফলে যুগ যুগ ধরে বিবর্তনে হিন্দু সমাজ নানা কারণে শক্তি হীন হয়ে পড়ছে৷ তাছাড়া, শক্তি না থাকলে, দুর্বলতা থাকলে নানা ধরনের রোগ-আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় মানব শরীরে৷ সমাজেও তাই তৈরি হয়৷ ফলে সংগঠিত শক্তিশালী সমাজ আবশ্যক৷
ভারতবর্ষে যে কোন ধরণের অবস্থার জন্য দায়ী হিন্দু সমাজ৷ কারণ হিন্দুরা পরম্পরাগতভাবে এই দেশের বাসিন্দা৷ হিন্দুরাই এ দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক৷ শুধু ঈশ্বর আর সরকারের উপর বিশ্বাস করে থাকলে হবে না৷ সংগঠিত শক্তিশালী সমাজ গঠনের জন্য প্রত্যেকের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
মোহন ভাগবত বলেন, হিন্দু কোনও সম্প্রদায় নয়৷ স্বয়ম্ভু, সনাতন ধর্ম, জীবনধারণের পথ৷ আর বিভিন্ন সময় সৃষ্ট বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সমস্যা সমাধানের সাময়িক পথ দেখালেও পরবর্তী সময় মানুষকে কট্টরপন্থার দিকে ধাবিত করেছে৷
আরএসএস প্রধান বলেন, সমাজ ঐক্যবদ্ধ না থাকলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ এই অবস্থায় বিভিন্ন সময় মানব সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ভিন্ন বিচারধারা সৃষ্টি হয়৷ পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় সৃষ্ট সম্প্রদায়গুলি প্রথমদিকে শান্তির কথা বলে এগিয়ে গেলেও পরবর্তী সময় কট্টরপন্থার দিকে এগিয়ে গেছে৷ সমাজে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি করছে তারা৷ এক্ষেত্রে হিন্দুত্বের চিন্তা-চেতনাই সমস্যার সমাধান ঘটাতে সক্ষম, দাবি আরএসএস প্রধানের৷
তিনি বলেন, ভারত অন্য দেশের উপর কোনও দিন আক্রমণ করেছে এমন ঘটনার উল্লেখ কোথাও নেই৷ কিন্তু যখন আজকের তথাকথিত উন্নত দেশগুলি সভ্যতার আলো দেখেনি, তখনই ভারতবর্ষ থেকে বিভিন্ন জ্ঞান নিয়ে বহির্দেশে গমন করেছেন এ দেশের প্রাজ্ঞরা৷ কিন্তু তাঁরা সেই দেশে কবজা করেননি৷ সভ্যতার বিস্তার ঘটিয়েছেন৷ এটাই ভারতীয়ত্ব তথা হিন্দু সংসৃকতি৷
বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারত যদি জাগে তবে বিশ্ব জাগবে৷ আর নিত্যদিন এই চিন্তার শিক্ষা এবং সেই মানসিকতা তৈরির কাজটি আরএসএস এত বছর ধরে করে আসছে৷ একজন ভাল বক্তার কথায়, সাময়িক পরিবর্তন আসে মনে৷ কিন্তু নিত্যদিন এর চর্চা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছা যায়৷ ভাগবত জানান, সমাজকে সুসংগঠিত করার জন্য হিন্দু জীবনশৈলীকে পাথেয় করে প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের গঠন করার উদ্দেশ্যে আরএসএস এর শাখা চালানো হয়৷ সেখান থেকে স্বয়ংসেবকরা সেবাব্রতী হয়ে উঠেন৷ তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রতিদিন এক ঘন্টা করে শাখায় এসে নিজের শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার জন্য তিনি রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান৷
হিন্দু জমায়েতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত রবিবার এভাবেই সংঘের কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দেন৷ তিনি বলেন, সমগ্র দেশে এক লক্ষ ৭০ হাজার সেবা প্রকল্প চলছে৷ সংঘের দ্বারা পরিচালিত এইসব সেবাকার্যে স্বয়ংসেবককে কোনও না কোনও সেবাকাজে যুক্ত হতে হবে নইলে, অপূর্ণতা থেকে যায়৷
তিনি বলেন, সংঘের শাখায় এলে আপাতদৃষ্টিতে ব্যক্তির জীবনের লাভ খুব বেশি হয় না৷ তবে শিরায় শিরায় ভারতমাতার প্রতি ভক্তিভাব সঞ্চালিত হয়৷ আরও বলেন, ভগবান আর সরকারের উপর দায়ভার ছেড়ে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা সমাজ চায় না৷ নিজের ও সমাজের সক্রিয় উদ্যোগ থাকতে হয়৷ সমাজকে ঠিক করতে হবে৷ তা হলে সমগ্র দেশের অবস্থা ঠিক হবে৷ সরকারও সঠিকভাবে কাজ করবে৷ অন্যথায় সরকার দিয়ে কিছু হওয়ার নয়৷ তবে ঋষি অরবিন্দের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ধর্ম প্রতিষ্টা হতে চলেছে৷
সরসংঘচালক উল্লেখ করেন, এ দেশ কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি অমর্যাদা করে না৷ সংঘ চিন্তাধারায় বিশ্বাসী৷ কারণ হিন্দু থেকেই তাঁরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন৷ তাই এদেশের মুসলিমরা তাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ভুলতে পারেন না৷ অন্য দেশের মুসলিমরা মূর্তি পূজায় বিরোধী৷ আর এদেশে দরগায় গিয়ে প্রার্থনা করেন তাঁরা৷ কীর্তনের আদলে কাওয়ালি হয়৷ আরাধনার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও সবাই হিন্দু৷ আর এর মধ্যে বিভেদ থাকতে পারে না, দাবি করেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত৷
এদিন এই জমায়েতে প্রদেশ বিজেপির সভাপতি ও প্রভারী সহ একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব অংশ নিয়েছিলেন৷ বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে অধিকাংশরাই এদিন এই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *