‘উত্তর-পূর্বের উন্নয়নই কেন্দ্ৰীয় সরকারের একমাত্র ও প্ৰধান লক্ষ্য, চালু হবে শিলং-শিলচর বিমান’, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

শিলং (মেঘালয়), ১৬ ডিসেম্বর, (হি.স.) : ‘পনেরো বছরের কংগ্রেস শাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে মেঘালয়। কেন্দ্রের বর্তমান সরকার এই ধ্বংসলীলা আর চলতে দেবে না। এর একটা গতি করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র। এই ধ্বংসলীলা রুখতে পারে একমাত্র সকলের উন্নয়নের মাধ্যমে। ফলে মেঘালয়-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকেই কেন্দ্ৰীয় সরকার একমাত্র এবং প্ৰধান লক্ষ্য করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।’ তাই এর অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে আজ ভারতমালা প্ৰকল্পের বলে জাতীয় সড়ক উদ্বোধন করতে এসেছেন তিনি। জাতির উদ্দেশে শিলং-নংস্টয়েন-রংজেং-তুরা দুই লেনের জাতীয় সড়ক উদ্বোধন করে পলো ময়দানে বিশাল এক দলীয় সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই খাসি ভাষায় স্থানীয় জনসাধারণকে সম্ভাষণ করে আসন্ন বড়দিন ও খ্রিস্টমাস দিবসের উষ্ণ অভিনন্দন জানালে প্রচণ্ড হর্ষধ্বনি ও হাততালি দিয়ে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তুলেন অসংখ্য শ্রোতা-দর্শক। পরিবর্তন সভা শীর্ষক মঞ্চে উঠলে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে খাসি পরম্পরা পোশাক ও টুপি জাইমফং পরানো হয়। এর পর যথারীতি ভাষণ দিতে উঠে প্রথমেই কংগ্রেসের ১৫ বছরের ‘অপশাসন’-এর ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ‘উন্নয়নমূলক বিবিধ নতুন নতুন প্রকল্প জারি করা হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য। এতে করেই এই অঞ্চলে এতদিনের অন্যায় অবিচার কমানো সম্ভব হবে। ২০২২-সালের আগেই নতুন ভারত নিৰ্মাণ আমার লক্ষ্য।’ বলেন, ‘কেবল রাস্তা তৈরিই নয়, রেল মানচিত্রেও সন্নিবিষ্ট হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব রাজধানী শহর। নিৰ্মাণ হবে ১,৩৮৫ কিমি দৈৰ্ঘ্যের ১৫টি নতুন রেলসড়ক। এর জন্য ৪৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে রূপায়িত হবে বিশাল প্রকল্প।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী নংথমবাম বীরেন সিংহ, অসমের অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রভৃতি দফতরের মন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় ডোনারমন্ত্রী ড. জীতেন্দ্র সিং, বিজেপি-র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অদূর ভবিষ্যতে শিলং থেকে শিলচর-সহ উত্তরপূর্বের সব রাজধানী পর্যন্ত বিমান পরিষেবা চালু করা হবে। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পৰ্যটন শিল্পের বিকাশে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেঘালয়ের স্থানও। পৰ্যটন মানচিত্ৰে মেঘালয়ের স্থান আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সড়কের জন্য ৩২ হাজার কোটি টাকা ধার্য করেছে কেন্দ্র। এতে নিৰ্মাণ হবে চার হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক।
প্রধানমন্ত্রীমোদী আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিবর্তন চেয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ সূচনা হয় অসম বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে। জানান, বিজেপির নেতৃত্বে এর পর সরকার চলছে অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরেও। এখন মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম তাঁর দলের লক্ষ্য, জানান নরেন্দ্র মোদী।
ডা. মুকুল সাংমা নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। একজন চিকিৎসক-মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এ ধরণের ঘৃণ্য কাজ তিনি আশা করেননি। যে সরকারের আমলে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়, সেই সরকারকে আর ক্ষমতায় উচিত কি না জনতার কাছে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী মোদী। মেঘালয়ে ১,৭০০ জন প্রাথমিক শিক্ষকের প্রয়োজন। কিন্তু কেন তাঁদের নিয়োগ করছে না কংগ্রেস সরকার জানতে চান তিনি। বেকারত্বের জ্বালায় ধুঁকছে রাজ্য। সব দেখেও গা নড়ছে না মুকল সাংমার সরকার। এটা মেঘালয়ের আমজনতার দুর্ভাগ্য বলে মনে করেন মোদী।
উপস্থিত জনগণকে স্মরণ করিয়ে বলেন, নর্থ-ইস্ট কাউন্সিলের বৈঠকে মোরারজি দেশাইয়ের পর তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি গত বছর সশরীরে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেছিলেন। জনতাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক ভাবে এই পরিষদ গঠন হয়েছিল সেই ১৯৭২ সালে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তার গঠন হয়েছিল, তা হয়নি কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের আগে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আজকের ২৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দু লেনের ১০৬ নম্বর জাতীয় সড়ক শিলং-নংস্টয়েন এবং ১২৭-বি জাতীয় সড়ক নংস্টয়েন-রংজেনের উদ্বোধন কার্যক্রম বয়কট করেছে মেঘালয়ের কংগ্রেস সরকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, পূর্তমন্ত্রী এমএম ডাংগো, লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই সাংসদ ভিনসেন্ট পালা এবং ওাংসুক সিয়েম উপস্থিত থাকার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও এঁদের কেউই রহস্যজনকভাবে আসেননি।\
দলীয় সভায় বক্তব্য পেশ করেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ এবং অসমের মন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *