BRAKING NEWS

১০৩২৩ ঃ অস্থায়ী শিক্ষক পদে ছয় মাসের জন্য নতুন নিয়োগের রায় সুপ্রিম কোর্টের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ ডিসেম্বর৷৷ ১০৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকুরী বাতিল হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বরেই৷ তবে, তাঁরা অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ ছবি নিজস্ব৷

ছয় মাস চাকুরী করতে পারবেন৷ রাজ্য সরকার নতুন শর্তাবলীসহ তাঁদের নিয়োগ করবে৷ বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল ও বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের ডিভিশন বেঞ্চ৷ তাতে, রাজ্য সরকারের আপাত স্বস্তি মিললেও চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নতুন নিয়োগ নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এদিন রায় ঘোষণার পর এই বিষয়ে মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশমূলে ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরীর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত করেছে৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে দুটি ইন্টারলোক্যুটরী এপ্লিকেশনের মাধ্যমে যে আবেদন করেছিল তাতে প্রথমটি ছিল রাজ্যে ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরীর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে আরও এক বছর বৃদ্ধি করার জন্য৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং অস্নাতক মিলে রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক পদ খালি ছিল৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের টিআরবিটি কাজ করছে৷ শিক্ষক নিয়োগের একটি পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে৷ এতে সর্বসাকুল্যে ১৯২০ জন শিক্ষক শিক্ষিকা টিআরবিটির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন৷ শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের অফার দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে ১ জানুয়ারী ২০১৮ থেকে সুকলগুলিতে বিশাল সংখ্যায় শিক্ষক শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে পঠন পাঠনের যে অসুবিধার সৃষ্টি হবে, তা অনুধাবন করে সুপ্রিম কোর্ট যেন তাঁদের চাকুরীর মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে সেজন্য আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ কারণ, তাঁদের চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে ঐসময়ের মধ্যে টিআরবিটির মাধ্যমে আরও একটি পর্য্যায়ে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ করা যাবে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত নভেম্বরে টিআরবিটি শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তা দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, গত সোমবার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপিত হয়েছিল৷ সেদিন ১৪ ডিসেম্বর পুণরায় শুনানির দিন ধার্য্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই অনুযায়ী আজ সুপ্রিম কোর্ট ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরীর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত করার আদেশ দেন৷ কিন্তু, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ৩০ জুন পর্যন্ত অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নতুন শর্তাবলী সহ নিয়োগের বিষয়টি গোপন রাখেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এদিন তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল গোপাল সিং চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি জানিয়েছেন৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকুরীচ্যুতদের চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির কথাটি রয়েছে বলে তিনি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন৷
অথচ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরী সমাপ্ত হচ্ছে৷ এরপর তাদের ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নতুন শর্তাবলী সহ নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার৷ ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর অস্থায়ী শিক্ষকদের চাকুরী থাকবে না৷ এই রায়ের প্রেক্ষিতে নতুন কোন আবেদন জানানো যাবে না৷
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন ১২ হাজার অশিক্ষক পদে নিয়োগে স্থগিতাদেশ তুলেনি সুপ্রিম কোর্ট৷ সম্ভবত, ১৬ জানুয়ারী আদালত অবমাননা সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল জানিয়েছেন, অশিক্ষক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাটি শুনানি পরবর্তী সময়ে হবে৷
এদিন এই রায় ঘোষণার পর চাকুরীচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ একাংশ শিক্ষক শিক্ষিকা এদিন এই রায়ে অত্যন্ত খুশী বলে জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে, তাদের মধ্যেই একাংশ শিক্ষক শিক্ষিকা এই রায়ের প্রতি সাধুবাদ জানালেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তারা বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে, এই রায়ে আপতত রাজ্য সরকার খুবই স্বস্তি পেয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী এদিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্বস্তি মিলেছে৷ ডিসেম্বরের পর ছয় মাস সুকলগুলিতে পঠন পাঠন স্বাভাবিক থাকবে৷ তবে, এই সময়ের মধ্যে রাজ্যে শিক্ষকের শূন্যপদগুলি পূরণ করার জন্য নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে৷
কিন্তু, ডিসেম্বরের পর চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের অস্থায়ী শিক্ষক পদে নতুন শর্তাবলী সহ ছয়মাসের জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেও চর্চা শুরু হয়েছে৷ অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগে বেতন কাঠামো নির্দ্ধারণে রাজ্য সরকারকে বেগ পেতে হতে পারে৷ অস্থায়ী পদে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ফিক্সড পে স্কেল দেওয়া হবে নাকি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা যে স্কেল পাচ্ছেন তা বহাল রাখা হবে, এই বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *