BRAKING NEWS

শহরের ড্রাগ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছাত্র-ছাত্রীরাই

কলকাতা,১২ ডিসেম্বর ( হি.স.) : শহরের অভিজাত কলেজ এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে ড্রাগ পৌঁছে যাচ্ছে সহজেই । মিলছে অনলাইনেও । কেউ বা কিনছে ডিলারের মাধ্যমে । অনেক ছাত্রছাত্রী তো আবার লেনদেনের কাজ করছে । তারাই এই ড্রাগ ব্যবসার ক্রেতা বিক্রেতা । বুধবার এই ভয়ঙ্কর তথ্য জানিয়েছে, নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো ।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব এদিন বলেন, ‘ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু প্রথম সারির স্কুল,কলেজের নাম উঠে এসেছে । সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এল এস ডি, হাসিস, চরস কিনছে । কেউ পেডলারের কাজ করছে । তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হবে’।
পাশাপাশি তিনি জানান, ঘটনার কিংপিন নিলয় অনলাইনে ড্রাগ কিনত । তাকে জেরা করে ‘ডার্কনেট লিংক’নামের একটি অনলাইন শপিং সাইটের নাম পাওয়া গিয়েছে । বাই পোস্টে এবং কুরিয়রের মাধ্যমে এই জিনিস তাদের কাছে আসত ।
বেশ কিছু দিন আগে দিল্লি ও তার আশপাশের কয়েকটি স্কুলের কাছে ওই এম ডি এম এ ক্যান্ডি বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায় । লজেন্সের মতো দেখতে এই সব নেশার ওষুধ বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার আশঙ্কা তৈরি হয় । সতর্ক করতে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো প্রচার করা শুরু করে । সেই সময়ে কলকাতাতেও প্রচার করা হ য় । দিলীপবাবুর কথায়, ‘এর আগে কলকাতায় কখনও এম ডি এম এ সেবনের খবর আমরা পাইনি । এই প্রথম । ক্যান্ডিগুলো একেবারে লজেন্সের মতো দেখতে । সহজেই বাচ্চাদের আকৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়’।
বাইশ বছরের দুই যুবককে গ্রেফতার করার পরে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো জনতে পেরেছে, সল্টলেক, রাজারহাট ও খিদিরপুর এলাকার কয়েকটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজের এক বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে নিয়মিত নিষিদ্ধ মাদক সরবরাহ করেন তাঁরা । শুধু তা-ই নয়, প্রথমে নেশায় চুর হওয়ার পরে চটজলদি কিছু কাঁচা টাকা পাওয়ার জন্য বহু কলেজপড়ুয়া মাদক বিক্রির ব্যবসাতেও নেমে পড়েছেন । গত রবিবার নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর হাতে ধরা পড়েছিলেন মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত তিন জন । তাঁদের মধ্যে রবার্ট ডিক্সন এবং নিখিল লাখওয়ানি শহরে মাদক সরবরাহ করতেন । তাঁদের মোবাইল ঘেঁটে শহরের কিছু তরুণ-তরুণীর ফোন নম্বর পাওয়া যায় । সেই ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেই উঠে আসে নিলয় ঘোষ এবং জেরম ওয়াটসনের নাম । নিলয়ের বাড়ি সল্টলেকে । উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান । নিজে ম্যানেজমেন্ট পড়েছেন । একটি ওয়েব পোর্টালে গিয়ে তিনি এম ডি এম এ নামে এক ধরনের নেশার ওষুধ কিনতেন । দিলীপবাবু জানিয়েছেন, তিন ভাবে পাওয়া যায় এম ডি এম এ । নববর্ষ ও বড়দিনের প্রাক্কালে চাহিদা বেশি থাকায় এই ধরনের নেশার সামগ্রীর দামও চড়তে থাকে । একটি ক্যান্ডির দাম ৮০০ টাকা । এল এস ডি ব্লটও কিনতেন নিলয় । ব্লট প্রতি দাম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, ‘এম ডি এম এ-র ক্রিস্টাল ও পাউডার জলে গুলে খেয়ে নেশা করা হয় । ক্যান্ডি লজেন্সের মতো চুষে খায় । এল এস ডি ব্লট জিভের তলায় রাখতে হয়’ । ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজ করা জেরম থাকেন পার্ক স্ট্রিটে । নিলয় নেট মারফত মাদক নিয়ে এসে অন্যদের সঙ্গে জেরমকেও সরবরাহ করতেন । জানা গিয়েছে, নিজে ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন জেরম । সেই সব পার্টিতেও চলত মাদক সেবন । রবিবার থেকে তাঁদের দু’জনের মোবাইলের উপরে নজর রাখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা । সোমবার দুপুরে তাঁদের কথা হয় । রবিবার রাত দুটো নাগাদ সল্টলেকের ৯ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছ থেকে মাদক-সহ দু’জনকে হাতেনাতে ধরা হয় । তাঁদের দু’জনের কাছ থেকে সব মিলিয়ে ২৬.৬ গ্রাম এমডিএমএ এবং ১৪৮টি এলএসডি ব্লট পাওয়া গিয়েছে । ২৬.৬ গ্রাম এমডিএমএ-র মধ্যে পাউডার ও ক্রিস্টাল মিলিয়ে ১৪.৫ গ্রাম ছিল । বাকিটা ক্যান্ডি । সঙ্গে ১০ গ্রাম এম ডি এম এ থাকলেই অভিযুক্তের ন্যূনতম ১০ বছরের সাজা হওয়ার কথা বলে দিলীপবাবু এ দিন জানান । দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘কোথা থেকে এই মাদক আসত, তা জানতে নিলয়ের ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন পরীক্ষার জন্য সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে ‘।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর এক পদস্থ অফিসার জানান, বিট কয়েনের মাধ্যমে এই লেনদেন হয় । বিট কয়েনের অর্থ ভারচুয়াল মানি । অনলাইন অ্যাকাউন্টে অর্থের বিনিময়ে এই কয়েন কিনতে হয় । নেশার জিনিস কেনার সময় এই বিট কয়েনের মাধ্যমেই পেমেন্ট করতে হয় । সাইবার বিশেষজ্ঞদের চোখে ধুলো দিতেই মাদক পাচারকারীরা তৈরি করে ফেলেছে এই ভারচুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক । এটি ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে অর্ডার দিলে ক্রেতার আইপি অ্যাড্রেসের নাগাল পাবেন না দুঁদে গোয়েন্দাও । দিলীপ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘শহরের অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও হয়তো একই ভাবে মাদক সেবন বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত । এমনকী, স্কুলের কিছু পড়ুয়াও জড়িত থাকতে পারে । নিয়মিত কলেজ ও স্কুলগুলিতে সচেতনতা শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ‘।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *