BRAKING NEWS

জি বি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধন ধার করা চিকিৎসকদের দিয়ে চলবে পরিষেবা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ ডিসেম্বর৷৷ চুক্তির ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হবে জিবি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের জন্য৷ ধার

জি বি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী সহ অন্যান্যরা৷ মঙ্গলবার তোলা ছবি নিজস্ব৷

করা চিকিৎসকদের দিয়ে আদৌ ট্রমা কেয়ার সেন্টারের সুফল পাবেন কি রাজ্যবাসী, সেই প্রশ্ণ উঠেছে৷ দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর রাজ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হল ট্রমা কেয়ার সেন্টার৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সকলেই স্বীকার করেছেন এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে৷ তবে, উপস্থিত সকলেই অবাক হয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব সমরজিৎ ভৌমিক এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা, জে কে দেববর্মনের বক্তব্যে৷ তাঁদের বক্তব্য, এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারের জন্য নিউরো সার্জন এবং নিউরো এনেস্থেটিক চুক্তির ভিত্তিতে আনা হবে৷ শুধু তাই নয়, কিডনির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও চুক্তির ভিত্তিতে আনা হবে৷ স্বাভাবিকভাবেই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ছাড়াই তড়িঘড়ি এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ণ উঠেছে৷
আপাতত এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রয়েছেন অর্থপেডিক, সার্জারি, এনেস্থেশিওলজি এবং রেডিওলজির কনসালটেন্ট৷ রয়েছেন সাতজন রেসিডেন্ট ডক্টর, নয়জন নার্স, চারজন টেকনিশিয়ান এবং ২৭ জন সহকারি কর্মী৷ এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে অত্যাধুনিক সামগ্রী রয়েছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই কর্তা৷
এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কবে নাগাদ আসবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় স্বাস্থ্য দপ্তর৷ জনৈক চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিউরো সার্জন এবং নিউরো এনেস্থেটিক ছাড়া এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারের উদ্দেশ্য সফল হবেনা৷ এই ঘাটতির কারণেই যে ট্রমা কেয়ার সেন্টার গঠনের কৃতিত্ব দাবি করতে পারবেনা রাজ্য সরকার, তা এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তার বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে৷
সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্তের মতে, এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে৷ কঠিন সমস্যা হলে বহিঃরাজ্যের সাহায্য নিতে হবে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর বক্তব্য, এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে দুর্ঘটনাজনিত চিকিৎসার সমস্তটা করা সম্ভব হবে এমনটা নয়৷ তবে, প্রাথমিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের পুরো চিকিৎসা করা সম্ভব না হলেও এই ট্রমা কেয়ার সেন্টার অনেকটাই সহায়ক হবে রোগীদের জন্য৷
এদিকে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, যারা আপৎকালীন দুর্ঘটনায় পতিত হন কিংবা জটিলভাবে যারা সড়ক দুর্ঘটনায় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হন তাদেরকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যেই এই ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হলো৷ এখানে রয়েছে সমস্ত ধরণের অত্যাধুনিক উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবার সরঞ্জাম৷ তিনি বলেন, এই রকম একটি কেন্দ্র রাজ্যে গড়ে তোলার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রয়োজন অনুভব হয়েছিলো৷ কিন্তু আর্থিক ব্যবস্থার সংকুলান, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সদের অপ্রতুলতার জন্য তা আগে পড়ে তোলা সম্ভব হয়নি৷ তবে দেরীতে হলেও আজ তা রাজ্যবাসীর প্রতি উৎসর্গিত করা হলো৷ যা রাজ্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে আরও একটি সাফল্য৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সরকার বলেন, শুধু এখানে থেকে থাকলেই চলবে না৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলা, ঊনকোটি জেলা ও ধলাই জেলার যে কোনও একটি হাসপাতালকে চিহ্ণিত করে আরও একটি ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করার কথাও তিনি বলেন৷ কারণ আপৎকালীন সময় কিংবা দুর্ঘটনার পরবর্তীতে মুমূর্ষু রোগীকে আগরতলাতে নিয়ে আসতে অনেক সময় লেগে যায়৷ তাই সময় সাশ্রয়ের জন্য ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে৷ এর জন্য এখন থেকেই স্বাস্থ্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে৷ তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগীর আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আগরতলা সেন্টারে নিয়ে আসা হবে৷ তেমনিভাবে, গোমীত ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় কোনও একটি হাসপাতালে এই সেন্টার চালু করতে হবে ওই এলাকার জনগণের জন্য৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সরকার বলেন, তবে আমরা চাই কাউকে যাতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে এই ট্রমা সেন্টারে আসতে না হয়৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে রাস্তাঘাট বেড়েছে, গাড়ি বেড়েছে, জনগণের যাতায়াত বেড়েছে, বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য৷ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, আর তার সাথে যান দুর্ঘটনাও বেড়েছে৷ তবে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে তারজন্য ব্যাপক সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে৷
বিশেষ করে যারা যানবাহন চালান তাদেরকে আরও সতর্ক হয়ে যানবাহন চালাতে হবে৷ এই কাজে তিনি পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকে দায়িত্ব সহকারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, আই জি এম হাসপাতালে নির্মীয়মান বিশাল বাড়িটি তৈরী হওয়ার পর এখানে একটি ডিজাস্টার কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে৷
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, এই ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু হওয়ার ফলে রাজ্যের জনগণ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন৷ নিতে পারবেন এর অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ সুবিধা৷ রাজ্যে এই সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ট্রমা সেন্টারের জন্য ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এইমস৷ এর জন্য তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, এই সেন্টারটি রাজ্যের মূল সেন্টার হিসেবে কাজ করবে৷ তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সকল অংশের জনগণের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ এই কর্মসূচিতে জনসাধারণের সুবিধার্থে আই জি এম ও জি বি হাসপাতালে ৩৩৩ রকমের প্রয়োজনীয় অষুধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালগুলিতেও কমপক্ষে ৮০ শতাংশ বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় ঔষুধ রাখা হবে৷
অনুষ্ঠানে সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত ও মেয়র পারিষদ কৃষ্ণা মজুমদার রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এই সেন্টারের গুরুত্বের উল্লেখ করে আলোচনা করেন৷ মোট ১৬৬০২৩ স্কোয়ার মিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আপৎকালীন দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদেরকে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে৷ রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, যা ২৪ ঘন্টা পরিষেবার থাকবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *