BRAKING NEWS

চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের অবরোধে সংকটে রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ ডিসেম্বর৷৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ মনু থানাধীন এসকে পাড়ায় রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাজ্যকে

শুক্রবার ধলাই জেলার মনু থানার অধীন এস কে পাড়ায় রেল লাইন অবরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ৷ ছবি নিজস্ব৷

এক গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছেন৷ এই অবরোধের জেরে রাজ্যে রেল পরিষেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ রাজধানী এক্সপ্রেস এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শুক্রবার আগরতলায় আসতে পারেনি৷ শিক্ষকপদে চাকুরীতে নিশ্চিয়তার দাবিতে এই অবরোধ আন্দোলনের জেরে এদিন শতশত রেল যাত্রী মহা বিপাকে পড়েছেন৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের চাকুরীতে নিশ্চিয়তার আশ্বাস রাজ্য সরকার না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ আন্দোলন জারি থাকবে৷ এই অবরোধকে ঘিরে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা দেখাদিয়েছে৷ এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের চাকুরীতে নিশ্চিয়তার আশ্বাস দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ পাশাপাশি তিনি জানান, তাদের অবরোধ তুলে দিতে রাজ্য সরকার কোন ধরনের বল প্রয়োগ করবেনা৷ স্বাভাবিকভাবে আবারো রাজ্য এক সংকটময় পরিস্থিতি মুখোমুখি হয়ে পড়েছে৷

চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ তাদের চাকুরীতে নিশ্চিয়তার জন্য রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন৷ এই সময়ের মধ্যে তাঁদের চাকুরীতে পুনর্বহালের নিশ্চিয়তা রাজ্য সরকার না দিলে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে বলে তাঁরা হুমকি দিয়েছিলেন৷ সেই মোতাবেক রাজ্য সরকারের তরফে কোন আশ্বাস না পাওয়ায় শুক্রবার মনুথানাধিন এসকে পাড়ায় রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ৷ এদিন সকাল ৭ টায় এসকে পাড়া রেল স্টেশনের সামনে রাস্তায় গণবস্থান সংগঠিত করেন তাঁরা৷ এই গণবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত নেন দুপুর থেকে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করবেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা৷ দুপুর ২ টায় এসকে পাড়া রেল ব্রিজের নিজে রেল অবরোধ করেন তারা৷ এর পর দুপুর তিনটায় এসকে পাড়া রেল স্টেশন সংলগ্ণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা৷ তাতে রেল চলাচল ব্যাঘাত ঘটে৷ এদিন কেবলমাত্র দিনের প্রথম প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি চলাচল করতে পেরেছে৷ আগরতলা-ধর্মনগর এবং ধর্মনগর-আগরতলা ট্রেনটি এদিন যথাসময়ে চলাচল করেছে৷ এরপর আরকোন ট্রেন চলাচল করতে পারেনি৷ এদিকে, আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে দুইদিকের যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে৷ তাতে যাত্রীরা মহাসমস্যায় পরেন৷

শুক্রবার ধলাই জেলার মনু থানার অধীন এস কে পাড়ায় আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কে অবরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ৷ ছবি নিজস্ব৷

অবরোধের খবর পেয়ে ছুটে যান ধলাই জেলা শাসক, ধলাই জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লংতড়াইভ্যালি মহকুমা শাসক৷ তাঁরা অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান৷ ধলাই জেলা পুলিশ সুপার অবরোধকারীদের জানান, এই অবরোধের ফলে বহু রেল যাত্রী বিপাকে পড়েছেন৷ যেকোন সময় যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন৷ তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা পুলিশের দায়িত্ব৷ এরজন্য তাঁরা অবরোধ তুলে নেবেন না৷ এই অবরোধ আন্দোলনকে ঘিরে এসকে পাড়ায় বিশাল পুলিশ ও টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছে৷ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা ক্রমাগত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন৷

অবরোধকারী চাকুরীচ্যুত শিক্ষক উত্তম কুমার দে জানিয়েছেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শিক্ষকদের চাকুরী আরো এক বছর বাড়ানোর আবেদনের উপর শুনানি হবে৷ পাশাপাশি, অশিক্ষক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আদালত অবমাননা মামলারও শুনানি হবে৷ ওই দিন সুপ্রীম কোর্টের রায় সন্তোষজনক হলে অবরোধ তুলে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে৷ তাতে স্পষ্ট, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশের এই রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে৷ এদিকে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের তরফে হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে চাকুরীর নিশ্চিয়তা না মিললে ধাপে ধাপে সারারাজ্যে অবরোধ করা হবে৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরে রাজ্যে গভীর সংকট নেমে আসবে৷
গত জুলাই মাসেও আইপিএফটির রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধে সংকট দেখা দিয়েছিল রাজ্যে৷ টানা এগারদিন অবরোধের জেরে নানা ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছে রাজ্যকে৷ আবারও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে রাজ্য৷ জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ ফলে, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি বিকল্প পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হবে৷ এক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হবে৷ পাশাপাশি রেল অবরোধের জেরে পণ্যবাহী কোন ট্রেন রাজ্যে আসতে পারবে না৷ বিশেষ করে পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ খাদ্য ভান্ডারে আগামী কয়েকদিনের সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে খাদ্য দপ্তর জানিয়েছে৷ কিন্তু, অবরোধ অনির্দিষ্টকাল চললে ভাড়ারে টান পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে খাদ্য দপ্তরের জনৈক আধিকারীক চিন্তা ব্যক্ত করেছেন৷

এই অবরোধ আন্দোলন নিয়ে শুক্রবার মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীতে নিশ্চিয়তা দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ আইনের মধ্যে থেকেই রাজ্য সরকারকে কাজ করতে হবে৷ তাঁদের জন্য সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়৷ এদিন তিনি জানান, তাঁদের অবরোধ তুলে দিতে রাজ্য সরকার বল প্রয়োগ করবেনা৷ ফলে এই অবরোধ সহজে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না৷

এদিকে, সুপ্রিমকোর্টের আদেশে রাজ্যের যে ১০,৩২৩ শিক্ষক কর্মচ্যুতির মুখে দাড়িয়ে আছেন তাদের একটি অতিক্ষুদ্র অংশ রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার সময়সীমা দিয়ে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোদ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন৷ শাসক দলিয় শিক্ষক সংগঠন টিডিটিএ (এইচবিরোড) এর তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ প্রতীরক্ষার পর ২০১০ সালের প্রথম ভাগে ৪৬১৭ জন স্নাতক, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ১১০০ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষক এবং ২০১৩ সালের শেষ ভাগে ৪৬০৬ জন অস্নাতক শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয় হয়েছিল রাজ্য বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরে৷ কিন্তু এই চাকরিগুলি চ্যালেঞ্জ করে ৫৮ টি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মে মাসে মাননীয় ত্রিপুরা হাইকোর্ট ও ২০১৭ সালের মার্চ মাসে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট এই চাকরিগুলি বাতিল করে দেন৷ বর্থমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার আদালতের রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের চাকরির সময়সীমা বাড়াবার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেছেন৷ আবার শিক্ষা অধিকার আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের শিক্ষাদন ব্যতীত অন্য কাজ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যে ১২ হাজার অশিক্ষক পদে নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছিলের তার উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার জন্যও সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেছেন৷ এমতাবস্থায় ১০৩২৩ শিক্ষকদের সংগঠনের নামে একটি অতিক্ষুদ্র অংশ ৪৮ ঘন্টার সময়সীমা দিয়ে ৮ই ডিসেম্বর, ২০১৭ থেকে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে৷ এ ধরনের আত্মঘাতী আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আবেদন জানাচ্ছে টিজিডিএ (এইচবিরোড)৷ সমিতি মনে করে, একমাত্র রাজ্য সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের ভরসাস্থল হতে পারে৷ তাই রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখার জন্য টিজিটিএ (হগব) এর তরফে এক বিবৃতিতে আবদন করা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *