BRAKING NEWS

রাজ্যে ফের ফিরছে পাশ-ফেল প্রথা

কলকাতা, ২৪ নভেম্বর (হি. স.): রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় ফের ফিরে আসতে চলেছে পাশ-ফেল৷ বিধানসভায় শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পাশ ফেল প্রথা৷
তবে একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কোন ক্লাস থেকে পাশ-ফেল চালু করা হবে তা এখনও চুড়ান্ত হয়নি৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোন ক্লাস থেকে চালু হবে, তা পরে ঠিক করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷’
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷ এই বিষয়ে রাজ্যগুলির সম্মতি চেয়েছিল কেন্দ্রীয় মানব উন্নয়ন মন্ত্রক৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ ফেল প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পক্ষেই নিজের মত জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য৷
মনমোহন সিংহের ইউপিএ-২ সরকারের ‘শিক্ষার অধিকার আইনের’ সৌজন্যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ ফেল তুলে দেওয়া হয়৷ এবার ফের শিক্ষার গুণগত মান রক্ষার খাতিরে সেই প্রথা ফিরিয়ে আনতে চায় কেন্দ্র ৷ খুব শীঘ্রই পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য বিল পেশ করা হবে৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে৷ পাশাপাশি মানব সম্পদ মন্ত্রালয়ের ২০টি ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইনস্টিটিউশন’ তৈরি করার বিষয়েও অনুমোদন জানিয়েছে৷ তবে ক্লাস এইট পর্যন্ত পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনলেও প্রক্রিয়ায় সামান্য বদল আনছে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক৷ কেন্দ্রীয় স্কুল শিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ জানান,\”ফেল করলে পড়ুয়ার একটি বছর যাতে নষ্ট না হয়, সেই দিকে নজর রেখে আরও একটি সুযোগ দিতে চায় কেন্দ্র৷ নয়া প্রক্রিয়ায় ফেল করলে তিন মাসের মধ্যে আরও একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে৷\”
বর্তমানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘নো ডিটেনশন পলিসি’ অনুযায়ী, ক্লাস এইট পর্যন্ত কাউকে ফেল করানো হয় না৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলেও নতুন শ্রেণীতে ক্লাস করার যোগ্যতা আপনাআপনিই পেয়ে যায় পড়ুয়ারা৷ শুধু মাত্র শেখার উপর জোর দিতেই এই নীতি চালু করা হয়েছিল৷
৩৫ বছর আগে রাজ্যের স্কুলগুলির প্রাথমিক স্তর থেকে পাশ-ফেল তুলে দিয়েছিল জ্যোতি বসুর সরকার। মনমোহন সিংহের ইউপিএ-২ সরকারের শিক্ষার অধিকার আইনের সৌজন্যে সেই ছাড়ের আওতা বেড়ে হয়েছিল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ২০১৫-র অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর এক চিঠির উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জানিয়ে দেয়, তারা নীতিগত ভাবে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনারই পক্ষে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সে সময় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চায়, প্রথম শ্রেণি থেকেই ফের পাশ-ফেল ব্যবস্থা কার্যকর হোক।’’
পাশ-ফেল প্রথা নিয়ে দু’বছর আগে সমস্ত রাজ্যের মতামত চান নরেন্দ্র মোদী সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আরও কুড়িটি রাজ্য ইতিমধ্যেই পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দেয়। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, চলতি বছরের শেষে নতুন শিক্ষানীতি গৃহীত হওয়ার কথা। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যই যে ভাবে পাশ-ফেল ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিচ্ছিল, কেন্দ্রের পক্ষে তাকে উপেক্ষা করা কঠিন ছিল।
বিশিষ্ট শিক্ষকদের অনেকেই রাজ্যের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার বছর তিনেক পরে ১৯৮০ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি এবং পাশ-ফেল ব্যবস্থাকে যুগপৎ বিদায় জানিয়েছিল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘দলের নীতিগত অবস্থান পাশ-ফেল প্রথার বিরুদ্ধে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর কোনও বদল দরকার কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন গণ সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আলাপ-আলোচনা করছেন।’’ সর্বশেষ বামফ্রন্ট সরকারের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ দে অবশ্য সরাসরি বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি পাশ-ফেল প্রথা জনবিরোধী।’’
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রাথমিকে ইংরেজি এবং পাশ-ফেল তুলে দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক ছিল। একই রকম মতান্তর দেখা দেয় ইউপিএ-২ সরকারের আমলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া নিয়ে। ২০০৯ সালে সংসদে পাশ হওয়া শিক্ষার অধিকার আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা রদ হয়। ২০১০ সাল থেকে তা কার্যকর হতে শুরু করে। এ রাজ্যে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০১২ সালে। অনেকেই তখন বলেছিলেন, যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা না করেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এতে মানের সঙ্গে আপস হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন তাঁরা।
বাস্তবে হলও তা-ই। একের পর এক রাজ্যের কাছ থেকে নয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকায় ২০১৩ সালে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য হরিয়ানার তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী গীতা ভোক্কলের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে কেন্দ্র। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে খবর, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেই কমিটি প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করে। কমিটির মত ছিল, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল না থাকার বিরূপ প্রভাব পড়ছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায়।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে পালাবদল হয়। গীতা ভোক্কল কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্পষ্ট করে রাজ্যগুলির মত জেনে নিতে উদ্যোগী হয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই নিয়ে মত জানতে চেয়ে রাজ্যগুলিকে চিঠি দিতে শুরু করে স্মৃতি ইরানির মন্ত্রক। সেই সূত্রেই মমতা সরকার জানায়, তারা পাশ-ফেল ফেরাতে নীতিগত ভাবে সম্মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *