BRAKING NEWS

নভেম্বরের মধ্যেই সংগঠন গোছাতে চায় দিলীপ-মুকুল জুটি

কলকাতা, ২৪ নভেম্বর, ( হি.স.): জানুয়ারিতে রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। তার আগে চলতি মাসের মধ্যে সব সাংগঠনিক কাজ শেষ করার টার্গেট দিয়েছিলেন বি জে পি-র কেন্দ্রীয় কমিটির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় । শেষবার কলকাতায় এসে সংগঠনের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে গিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ । আর তাই এই মাসের মধ্যেই দলের নেতাদের সাংগঠনিক কাজ শেষ করার কড়া নির্দেশ দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্যে বুথ কমিটি, মণ্ডল কমিটি, জেলা কমিটি ও বিস্তারক যোজনায় বুথে বুথে দলের সদস্য পদ তৈরি সহ সব কাজ দ্রুত শেষ করার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন দিলীপবাবু । কারণ অমিত শাহকে জানুয়ারি মাসে সাংগঠনিক কাজের একটি রিপোর্ট দিতে হবে । তাতে অমিত শাহ সন্তুষ্ট না হলে সাংগঠনিক কাজের বাড়তি দায়িত্ব মুকুল রায়ের হাতে চলে যেতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ। তাই নিয়ম করে জেলার সভাপতি, পর্যবেক্ষক ও রাজ্য কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন । কথা বলছেন সদ্য দলে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের সঙ্গে । মুকুল- দিলীপ জুটির দিকে তাকিয়ে শুধু দলীয় কর্মীরাই নয়, তাকিয়ে সারা রাজ্যের মানুষ ।
একটা ভাত টিপলেই বোঝা যায় গোটা হাঁড়ির সব চাল সেদ্ধ হয়েছে কি না । কিন্তু রাজনীতিতে সেটা সম্ভব নয় । তাই সবে বিশ দিনের সম্পর্ককে নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা মুশকিল । তবু এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জুটি মুকুল-দিলীপ আলোচনার কেন্দ্রে । আর তাতে নতুন জুটির কাঁধে ভরসা রেখে অগ্রগতির আশা জাগতেই পারে বি জে পি-তে । কারণ, দুই নেতার মধ্যে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যথেষ্ট ।
ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিতে বরাবরই সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত এবং ছোটখাটো নীতির ক্ষেত্রেও মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আর এস এস -এর সিলমোহর জরুরি বি জে পি-র জন্য । আর এই ব্যাপারে অজ্ঞই মুকুল রায় । সেটাই স্বাভাবিক । কাছ থেকে দেখেননি আর এস এস-কে । অন্য দিকে শৈশব থেকে সঙ্ঘ পরিবারের আবহে বড় হওয়া দিলীপ ঘোষ আর এস এস-এর নাড়ি-নক্ষত্র সব জানেন । এ ব্যাপারে মুকুলের খামতি পূরণ করে দিতে পারবেন দিলীপ । সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক এই ক্ষেত্রে মুকুল রায়ের ‘ঘোষ স্যার’ হতেই পারেন ।
মুকুল রায় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ । কিন্তু বি জে পি-তে নতুন । দিলীপ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, দূরে থাকলেও আসলে কাছেই ছিলেন মুকুল রায় । বি জে পি-র সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ দীর্ঘ সময়ের । তবু একটা নতুন দল মানে অনেক কিছুই জানার থাকে । তবে মুকুল রায় ঝানু রাজনীতিক হিসেবে সেটা কলকাতায় আসার আগেই যে বেশ কিছুটা আয়ত্বে এনে ফেলেছেন, সেটা স্পষ্ট। বি জে পি-র আদব-কায়দা, সাংগঠনিক পদ্ধতি, অতীত ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে বইপত্র পড়ে বা কথা বলে ইতিমধ্যেই যে তিনি তৈরি, তা মুকুল রায় বুঝিয়ে দিয়েছেন । তবে এই ব্যাপারে আরও পোক্ত করে দেওয়ার জন্য পাশে রয়েছেন ক্যাপ্টেন দিলীপ । তৃণমূল কংগ্রেসে থাকার সময়ে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখলেই চলত । কিন্তু বি জে পি-তে সেটা চলে না। তাই ইতিমধ্যেই নিজের অফিসে রাখার জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর ছবি বাঁধিয়ে ফেলেছেন মুকুল রায় । বেশ বড় বড় ছবি ।
রাজনীতিতে জুটি বাঁধতে গেলে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা দরকার ফুটবল ময়দানের মতোই । কলকাতায় এসে রাজ্য বি জে পি অফিসে ঢুকেই দিলীপ ঘোষকে নিজের ‘ক্যাপ্টেন’ বলে ডেকেছেন । অন্য দিকে দিলীপ ঘোষ মুকুলকে রাজনীতির ক্ষেত্রে অগ্রজের সম্মান দেখিয়েছেন । এখনও পর্যন্ত পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা প্রকাশ করে এসেছেন, সেটা বজায় থাকলে তা বি জে পি-র জন্য লাভদায়ক হতে পারে । এখনও পর্যন্ত দলীয় কর্মী সমর্থকদের কাছে যে বার্তা এই নয়া জোট পাঠাতে পেরেছে, তা পজিটিভ ।
ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন মুকুল রায় । তবে তিনি সেই বৈঠকে বার বার বলেছেন, দিলীপ ঘোষের নির্দেশ মেনেই কাজ করব । এ নিয়ে দুই নেতাও দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন । তাতে যা ঠিক হয়েছে তাতে প্রথমদিকে জেলায় জেলায় দলের ঘরোয়া বৈঠকে মুকুলকে সঙ্গে দেবেন দিলীপ । একই সঙ্গে বড় সভা হলেও সেখানেও জোট বেঁধে কাজ হবে । আর নতুনদের দলে আনার ক্ষেত্রে বিপক্ষের গোলে বল বাড়াবেন মুকুল । নিজেদের গোল সামাল দেবেন দিলীপ । এটা যদি হয় ,তবে সেটা শাসক তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে ।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিজেপি মুকুল রায়কে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর পিছনে মূল লক্ষ্য শাসক শিবিরে ফাটল ধরানো । সেই কাজটা হলেও ফাটল এখনও খুবই সামান্য । পঞ্চায়েত ভোটের আগে এবং বিশেষ করে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ক্ষয়ের মধ্য দিয়েই জয় পেতে চায় বি জে পি । তাই আপাতত প্রচারে বেশি করে থাকবেন মুকুল রায় । দিলীপ ঘোষ যা যা অভিযোগ তুলেছেন, সেটা মমতার একদা ডান হাত মুকুলের মুখ থেকে শুনলে সাধারণের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে । রাজ্য রাজনীতিতেও আলোড়ন তুলবে । সংখ্যালঘু উন্নয়ন থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নিয়ে অন্য কাজে লাগানোর মতো বিষয় যেমন থাকবে তেমনই সারদা, নারদ কাণ্ডে তৃণমূলকে বিব্রত করার কাজটিও করবেন মুকুল রায় ।
বি জে পি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এমন ছকেই এগোতে চাইছে পদ্মের নয়া জোট । আর এতে সায় রয়েছে আর এস এস-এরও। রাজ্য বি জে পি-র সভাপতি হওয়ার পরে পরেই নিজে বিধানসভা ভোটে নির্বাচিত হয়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন দিলীপ । এর পরে রাজ্যে দলের সংগঠন কিছুটা হলেও বেড়েছে । সঙ্ঘের নিজের লোককে সভাপতির আসনে রেখে মুকুলের উপরে নির্ভর করে বি জে পি-র সংগঠন ও শক্তি বাড়ানোই লক্ষ্য সঙ্ঘে র। নিয়ন্ত্রণটা থাকবে দিলীপের হাতেই । নির্ভরযোগ্য ডিফেন্স । সম্ভাবনাময় স্ট্রাইকার মুকুল রায় ।
এদিকে, দলের জেলা সভাপতি, জেলার পর্যবেক্ষক, জেলা কমিটির সদস্যদের উপর নজরদারির জন্য রাজ্য কমিটির নেতাদের বসানো হয়েছে। জেলার সাংগঠনিক কাজের সব হিসেব রাজ্য কমিটিকেই পাঠাতে হবে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখের মধ্যে জেলার সব রিপোর্ট পাঠাতে হবে রাজ্য কমিটিকে ।
দিলীপ ঘোষ শুক্রবার বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যে সব সাংগঠনিক কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েছি । জেলার সব স্তরে নেতার সঙ্গে বৈঠক করছি । কথা বলছি । সব কাজ ঠিকঠাকভাবে চলছে কি না, জেলার ও মণ্ডলের সব কাজ ঠিক করে হয়েছে কি না তার রিপোর্ট নিয়েছি । আর জেলায় বুথ কমিটি তৈরি ও সদস্য পদ বাড়ানোর সব কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে । অমিত শাহ রাজ্যে আসবেন তাই কোনও সাংগঠিক কাজ আর বাকি রাখা চলবে না’ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *