BRAKING NEWS

গোয়ায় আন্তৰ্জাতিক চলচ্চিত্ৰ মহোৎসবে প্ৰদৰ্শিত ‘চামেলি মেম সাহেব’

গুয়াহাটি, ২২ নভেম্বর (হি.স.) : গোয়ায় চলমান আন্তৰ্জাতিক চলচ্চিত্ৰ মহোৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে সদ্য-প্ৰয়াত অভিনেতা, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক আব্দুল মজিদের সৃষ্টি ‘চামেলি মেম সাহেব’। আন্তৰ্জাতিক চলচ্চিত্র মহোৎসবে প্রয়াত আব্দুল মজিদকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর মেকুইঞ্জ ছবিঘরে তাঁর জনপ্রিয় ছায়াছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ‘চামেলি মেম সাহেব’-এর বিশেষ প্ৰদৰ্শনী হয়েছে।
মহোৎসবে আব্দুল মজিদ-সহ দেশের নয়জন প্ৰয়াত শিল্পীকে মরণোত্তর সম্মান দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটির এক বেসরকারি হাসপাতালে ‘চামেলি মেম সাহেব’-এর স্ৰষ্টা আব্দুল মজিদের জীবনবসান ঘটেছিল ৮৬ বছর বষ়সে।
১৯৭৫ সালে তাঁর নির্দেশিত এবং অভিনীত ‘চামেলি মেম সাহেব’ জনপ্রিয়তার শিখরে চলে যায়। সাংবাদিক তথা বিশিষ্ট লেখক নিরোদ চৌধুরী রচিত ‘চামেলি মেম সাহেব’ ছবিতে জর্জ বেকার এবং বিনীতা বরগোহাঁইকে মূল চরিত্রে আনার পাশাপাশি টলিউডের তদানীন্তন বিখ্যাত অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায় এবং তরুণ কুমারকে এনেছিলেন আব্দুল মজিদ। চা বাগানের ব্রিটিশ মালিক বার্কলি সাহেব (জর্জ বেকার) তাঁর বাগানের এক শ্রমিককন্যা চামেলি (বিনীতা বরুগোহাঁই)-র প্রেমে পড়েন। নিখাদ প্রেম কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছিলেন ভূপেন হাজরিকা (প্রয়াত)। এই ছায়াছবি গোয়ায় অনুষ্ঠিত ৪৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ শিরোপাও অর্জন করে। তাছাড়া ২৩তম জাতীয় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এও ‘চামেলি মেম সাহেব’ আঞ্চলিক ভাষায় শ্রেষ্ঠ অসমিয়া চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছে। খোদ আব্দুল মজিদ পান জাতীয় স্বীকৃতি। কেবল অসমিয়া নয়, বাংলা-সহ কয়েকটি ভাষায়ও ছায়াছবি তৈরি করেছেন তিনি। বহুভাষিক সিনেমা ও নাট্য নির্দশনার জন্য ১৯৭১ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ সম্মান লাভ করেছিল ‘চামেলি মেম সাহেব’ । এই ছবি বাংলা ভাষায়ও নির্মিত হয়েছিল। এছাড়া তাঁর নির্দশিত সাম্প্রতিককালের অসমিয়া টিভি সিরিয়াল ‘নামঘরিয়া’ও বেজায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
১৯৫০ থেকে তিনি তাঁর ক্যারিয়ার তৈরি করতে নামেন। প্রথমে নাটক, এর পর সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দিশনাও করেছেন। প্রায় ২০০-এর বেশি ছায়াছবিতে অভিনয় করে এক বিরল অবদান রেখে গেছেন আব্দুল। তিনি সিনেমা, নাটকের জন্য স্ক্রিপ্টও লিখেছেন বহু। তাঁর রচিত ও লিখিত ‘বনচিতা’ থেকে যাত্রা শুরু করে ক্রমান্বয়ে ‘ধূলি মাখোটি’, ‘সিহঁত আহিছে’, ‘চোরে এট আল’, ৫৮-য় ‘রঙা পুলিশ’, ৬৮-তে ‘মরম তৃষ্ণা’, ৭৫-এ ‘চামেলি মেম সাহেব’ (স্ক্রিপ্ট নিরোদ চৌধুরী), ৭৭-এ ‘বনহংস’, ৭৮-এ ‘বনজুই’, ৮১-তে ‘পোনাকান’, ৯০-এ ‘উত্তরকাল’ এবং সবশেষে ‘সাত নম্বরর সন্ধানত’ ছায়াছবি তৈরি করেছেন আব্দুল মজিদ।
বহু সম্মান ও পুরস্কার ভূষিত আব্দুল মজিদ লাভ করেছিলেন। অসম সরকারের বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা পুরস্কার (১৯৯৬), অসম সাহিত্য সভা এবং দ্য অসম ট্রিবিউন পত্রিকা গোষ্ঠী, গুয়াহাটি প্রেস ক্লাব, অসম জাতীয় বিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মাননা সংবর্ধনা ইত্যাদি। ১৯১৫ সালে তাঁকে দেওয়া হয় লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। অসম নাট্য সম্মিলনীর সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন আব্দুল মজিদ।
প্রসঙ্গত, ১৯৩২ সালের ১৬ নভেম্বর যোরহাটের পুরনি বালিবাটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আব্দুল মজিদ। তাঁর পরিচালিত শেষ ছায়াছবি ‘সাত নম্বরর সন্ধানত’ (অসমিয়া)। নাট্যকার হিসেবেও তাঁর এক পৃথক পরিচিতি রয়েছে। ১৯৫৮-এ ‘রঙা পুলিশ’ ছায়াছবির মাধ্যমে তাঁর সিনেমা জগতে প্রবেশ। এর পর ছয়টি জনপ্ৰিয় অসমিয়া ছবি নির্মাণ করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *