BRAKING NEWS

পর্যটন পর্ব : বিভিন্ন কর্মসূচির এক ঝলক

নয়াদিল্লি, ১৮অক্টোবর ।। ভারতে যে ক’টিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে তার মধ্যে অন্যতম হল পর্যটন। সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত স্তরের মানুষদের অন্তর্ভূক্তিমূলক কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহদান করা হয় পর্যটন ক্ষেত্রটিতে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক বৃহৎ চালিকাশক্তি হিসাবে পর্যটনকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবং জনসচেতনতা প্রসারের উদ্দেশ্যে পর্যটন পর্ব-এর আয়োজন করা হয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির একটি বিশেষ মঞ্চই হল পর্যটন পর্ব। এর মূল বিষয়বস্তু বা থিম হল, ‘সকলের জন্য পর্যটন’। দেশের সংগঠিত এবং অসংগঠির ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মানুষ এই উপলক্ষে একযোগে মিলিত হয় দেশের পর্যটন ব্যবস্থার প্রসার ও উন্নয়নে।

পর্যটন পর্ব চলাকালীন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি এবং দক্ষতা বিকাশ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় যাতে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারেন দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পর্যটন প্রসারের ক্ষেত্রে এক বিশেষ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার জন্য। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা যাতে পর্যটন সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত থেকে তাঁদের পঠনপাঠন ও কর্মপ্রচেষ্টাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই লক্ষ্যে এক বিশেষ উৎসাহমূলক ও উৎসাহব্যঞ্জক উদ্যোগই হল পর্যটন তথা পর্যটন পর্ব। পর্যটনের ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদের নানাভাবে সহায়তা করা হয় যাতে আয়ের উপযুক্ত উৎস খুঁজে নিয়ে তাঁরা তাঁদের জীবনধারণের মান উন্নত করার সুযোগ পেতে পারেন। একইসঙ্গে, স্থানীয় ও আঞ্চলিক শিল্পকলা, সাংস্কৃতিক অনুশীলন, হস্তশিল্পের প্রতি আগ্রহ, রন্ধন শিল্পে নৈপুণ্য ইত্যাদি বিষয়গুলিকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির এক একটি দিক হিসেবে তুলে ধরা হয় এই পর্যটন পর্বে।

আতিথেয়তা শিল্প প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের কাছে এক চ্যালেঞ্জ বিশেষ। তাই, পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুযোগ দেওয়া হয় পর্যটন শিল্পের একটি বিশেষ অংশ ও অঙ্গ রূপে নিজেদের উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার। পর্যটন পর্বের পেছনে যে প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ রয়েছে, তা যাতে কোনভাবেই না শিথিল হয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করতে পর্যটন মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শুধুমাত্র দক্ষ মানবসম্পদের যোগানই যথেষ্ট নয়, একইসঙ্গে যাঁরা পর্যটন সংক্রান্ত নানা ধরনের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রকেও আরও উন্নত করে তোলার। দক্ষতার ক্ষেত্রে যাতে কোনরকম ঘাটতি না থাকে, সেই লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামোর প্রসারে এবং স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়গুলিকে উৎসাহদান করে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক।

মন্ত্রকের ‘স্বদেশ দর্শন’ এবং ‘প্রাসাদ’-এর মতো দুটি প্রধান কর্মসূচিতে বিভিন্ন পর্যটন স্থানের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে একদিকে যেমন বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়, অন্যদিকে তেমনই স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহদানও করা হয়।

সারা দেশে পর্যটন পর্বের ত্রয়োদশ দিবসের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা ও সাফল্য

পর্যটন পর্ব-এর ১৩ দিনের মাথায় এক বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে পর্যটন মন্ত্রক। প্রাক্তন সমরকর্মীদের কল্যাণ সম্পর্কিত দপ্তর, পর্যটন বাণিজ্য সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার এই কর্মশালার আয়োজনে নানাভাবে সাহায্য করে। পর্যটন ক্ষেত্রে প্রাক্তন যুদ্ধকর্মীদের পরিষেবাকে কাজে লাগাতেই এই ধরনের এক কর্মশালার আয়োজন।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং আইজিএনসিএ চেন্নাইতে আয়োজন করে কুড়াই ওনরাম ইল্লাই, এমএস, অর্থাৎ ‘সঙ্গীতের মধ্যে বেঁচে থাকা’ শীর্ষক এক বিশেষ প্রদর্শনী। চেন্নাইয়ের ললিতকলা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত হয় এক কর্মশালাটি।
ঝাড়খণ্ড সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের উদ্যোগে হাজারিবাগে আয়োজন করা হয় আদিবাসী ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে এক বিশেষ পদযাত্রার। সংস্কৃতি স্মারক সংগ্রহশালার সহযোগিতায় এই পদযাত্রা আয়োজিত হয়।

উৎসবের মরশুমকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এবং নবোদয় বিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন স্থান সফর ও পরিদর্শনের। কলকাতার ভারতীয় পর্যটন দপ্তর ওড়িশা সরকারের সহযোগিতায় চিলকা হ্রদে (রম্ভা) আয়োজন করে পর্যটন ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, খাদ্য সম্ভার বিক্রয় ও প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্যুইজ প্রতিযোগিতা।

গুয়াহাটির ভারতীয় পর্যটন দপ্তর রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আয়োজন করে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম-এর। হোটেলগুলির জন্য পর্যটন সম্পর্কিত এক কর্মশালা এবং পর্যটনের আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য পৃথকভাবে আরেকটি কর্মশালার আয়োজন করা হয় গুয়াহাটির লালমাটিতে।

মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, ঝাড়খণ্ড এবং গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকেও আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, প্রতিযোগিতা ইত্যাদির।

রেল এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের মতো কেন্দ্রীয় দপ্তর ও মন্ত্রকগুলিও নানাভাবে সহায়তা করে পর্যটন পর্ব-কে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার। দিল্লির ভারতীয় পর্যটন দপ্তর আইএইচএম এবং আইআইটিটিএম-এর সহযোগিতায় লালকেল্লায় পর্যটন ও হস্তশিল্প সম্পর্কে এক প্রদর্শনী, সরোজিনী নগরের সঞ্জয় পার্কে যোগ প্রদর্শনী, মেহরৌলিতে ঐতিহ্যের লক্ষ্যে পদযাত্রা, কুতব মিনারে যোগচর্চা ও যোগ প্রদর্শনী, ইত্যাদিরও আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে, নয়াদিল্লির ইন্দ্রপুরী মার্কেট এবং চণ্ডীগড়ের ৪২ নম্বর সেক্টরে দোকানদার, হকার এবং রিকশা ও অটো-রিকশা চালকদের জন্য আয়োজিত হয় ‘অতিথি দেব ভবঃ’ নামে এক বিশেষ সচেতনতামূলক কর্মসূচিরও।

‘দেখো আপনা দেশ’ আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া-র ওপর ক্যুইজ, ‘দেখো আপনা দেশ’ ব্লগ প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া জাগিয়ে তোলে এই পর্যটন পর্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *