BRAKING NEWS

রাজ্যভাগের চক্রান্তকারী আইপিএফটি শিখণ্ডি হিসাবে কাজ করছে বিজেপির ঃ মানিক সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যভাগের উস্কানি শাসক দল সিপিএম ও তার অঙ্গ সংগঠন গণমুক্তি

মঙ্গলবার বিবেকানন্দ ময়দানে গণমুক্তি পরিষদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি নিজস্ব৷

পরিষদকে ভিষণ চিন্তায় ফেলেছে৷ বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের একাংশ রাজ্যভাগের শ্লোগানে প্রলুব্ধ হচ্ছেন, তা ভাবাচ্ছে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের৷ তাই উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় সমাবেশের মঞ্চে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যভাগের চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ একই সাথে রাজ্যভাগের চক্রান্তকারী আইপিএফটি বিজেপির শিখণ্ডি হিসাবে কাজ করছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি৷ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ত্রিপুরাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ভেস্তে দেবেন জাতি-উপজাতি উভয় অংশের মানুষ৷ তাই তিনি জোর গলায় দাবি করেন, আগামী বিধানসভা নির্র্বচনে এই সমাবেশের পরিণাম প্রতিফলিত হবে৷
মঙ্গলবার উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে আশানুরূপ লোক সমাগম হয়নি৷ অবশ্য এর পেছনে প্রাকৃতিক দুর্র্যেগ অন্যতম কারণ ছিল৷ ভারি বর্ষণের ফলে সমাবেশ স্থলে মানুষের উপস্থিতি খুবই কম লক্ষ্য করা গেছে৷ অবশ্য এই সমাবেশকে ঘিরে খোয়াই এবং পশ্চিম জেলায় একাধিক স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনায় বহু জিএমপি সমর্থক সভাস্থলে আসতে পারেননি৷ এদিন সমাবেশে নেতৃত্বদের বারে বারেই বলতে শোনা গেছে, দুর্র্যেগপূর্ণ আবহাওয়া এবং দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবের কারণে গণমুক্তি পরিষদের বহু কর্মী সমর্থক সমাবেশে হাজির হতে পারেননি৷
এদিন সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বিশেষ করে রাজ্য ভাগের চক্রান্তকে ঘিরে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেছেন৷ তাঁর সাফ কথা, উপজাতি কল্যাণে বামফ্রন্ট সরকার কাজ করেনি তা চিহ্ণিত করে দেখান৷ তা না করে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা হচ্ছে কেন, প্রশ্ণ ছুড়ে দেন মানিক সরকার৷ তাঁর কথায়, একসময় স্বাধীন ত্রিপুরার আওয়াজ উঠেছিল৷ বিদেশি বিতারণেরও ডাক দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সেদিন স্বাধীন ত্রিপুরার ডাক উপজাতি অংশের জনগণ মেনে নেয় নি৷ স্বাধীন ত্রিপুরার শ্লোগান যারা দিয়েছিল সেই উপজাতি যুব সমিতির নাম পাল্টে এখন হয়েছে আইপিএফটি৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে তাই এডিসি এলাকা নিয়ে এখন পৃথক রাজ্যের দাবি তোলা হচ্ছে৷
পৃথক রাজ্যের নামে রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে দায়ী করেছেন৷ তাঁর কটাক্ষ রাজ্যে আইপিএফটি বিজেপির শিখণ্ডি হিসাবে কাজ করছে৷ কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে জনগণের কল্যাণে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার৷ তাই বামফ্রন্টকে এই রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বাঁছাই করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে ১৯৭৭ সালের পর থেকে বামফ্রন্ট সরকারের মাধ্যমেই উপজাতিদের উন্নয়ন শুরু হয়৷ বর্তমানে যে সমস্ত রাজ্যে উপজাতিরাই সংখ্যাগুরু সেসব রাজ্যের তুলনায় ত্রিপুরার উজাতিদের উন্নয়ন কর্মসূচী অনেক বেশী সফল হয়েছে৷ বর্হিরাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা এসে এসব সাফল্য দেখে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেন৷ এই সাফল্য বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের সহ্য হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি৷
এই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমত তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আরএসএস’র দিকেও তোপ দাগতে ছাড়েননি মানিক সরকার৷ তাঁর অভিযোগ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কারণেই এরাজ্যেও আরএসএস এবং অন্যান্য বিভেদকামী শক্তি মাথা চারা দিয়ে উঠছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রের সরকারের মূল চালিকা শক্তি আরএসএস৷ তারা গরীব বিরোধী৷ কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বড়লোকদের স্বার্থেই তারা কাজ করে চলেছে৷ তিনি উদ্বেগের শুরে বলেন, এদের নীতির কারণেই কৃষক আত্মহত্যা বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে৷ এরই সাথে প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন, কৃষি, শিশু ও নারী কল্যাণে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় বলে দাবি করেন মানিক সরকার৷
এদিন তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, রাজ্যের উপজাতি এলাকায় আরএসএস সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তাদের শাখা সংগঠন কল্যাণ আশ্রম দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তারা খুব বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে এমনটা না হলেও, হিন্দু ও খ্রিস্টানের মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে এখন সমস্য তৈরির চেষ্টা চলছে৷ অবশ্য উপজাতিদের জমির অধিকার কিংবা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় দাবি করেন রাজ্যের সামগ্রীক পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি এবং তাদের শাখা সংগঠনগুলি৷
এদিকে, জিএমপির সমাবেশকে ঘিরে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সহ সমাবেশের উপস্থিত সমস্ত নেতৃবৃন্দ সমসুরে আইপিএফটিকে কাঠগড়ায় দার করিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্য ভাগের শ্লোগান মানুষ এখন আর গ্রহণ করছেন না৷ আইপিএফটির কথায় রাজ্যবাসী বিভ্রান্ত হচ্ছেন না৷ তাই, হতাশা থেকে জিএমপির সমাবেশ বাঞ্চাল করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল আইপিএফটির দুর্বৃত্তরা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নবীন প্রজন্মের একাংশকে নানা ভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত আইপিএফটি৷ তাই, তাদের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য তিনি সকলকে সতর্ক করেন৷ পাশাপাশি গণমুক্তি পরিষদের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন বন্ধু জয় করে আনার চেষ্টা করুন৷
এদিন সমাবেশে গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপর আক্রমণের প্রসঙ্গে আইপিএফটির পাশাপাশি বিজেপি’র দিকেও তোপ দাগেন৷ তাঁর সাফ কথা, আইপিএফটিকে বিজেপি ইন্ধন যোগাচ্ছে৷ তাই, এধরনের অস্থির পরিস্থিতি রাজ্যে সৃষ্টি হচ্ছে৷ এদিকে, গণমুক্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাধাচরণ দেববর্র্ম এবং উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী অঘোর দেববর্র্মও আইপিএফটি এবং বিজেপিকেই মূল নিশানা করে বক্তব্য রেখেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *