BRAKING NEWS

জিএমপির কর্মীদের উপর একযোগে হামলা নানা স্থানে, ৩২ টি গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত শতাধিক, ১৪৪ ধারা জারী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতায় উত্তাল রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ খোয়াই, ১৯ সেপ্ঢেম্বর৷৷ আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যাচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ৷ এরই

হামলায় আহতদের খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ছবি নিজস্ব৷

সাথে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের রাশ বদল হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ অন্তত মঙ্গলবার খোয়াই ও পশ্চিম জেলায় বিক্ষিপ্ত ঘটনায় সেই বিতর্কে নয়া মাত্রা এনে দিয়েছে৷ গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আইপিএফটির বিরুদ্ধে৷ অন্যদিকে, অভিযোগের খণ্ডন করে পাল্টা কটাক্ষ এনসি দেববর্র্মর, কোন ঘটনা ঘটলেই এরজন্য আইপিএফটিকে দায়ী করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে৷ এসবের মাঝে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা৷ অভিযোগ হামলা পাল্টা হামলা, গাড়ি ভাঙচুড় সত্বেও পুলিশ প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে৷ গণমুক্তি পরিষদের সমাবেশকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল কিনা সে বিষয়েও পুলিশের গোয়েন্দাদের ব্যর্থতাই উঠে এসেছে৷ কারণ, এদিন খোয়াই আগরতলা রোডে আক্রমণের শিকার হয়েছেন ন্যুনতম ৮০ জন৷ জিরানীয়ায় খণ্ড যুদ্ধে পুলিশ সহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন জিরানীয়া এবং রাণীর বাজার থানায় ওসি৷ এছাড়াও কল্যাণপুর, মোহনপুরেও হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ অভিযোগ উঠেছে, হামলাকারীরা পুলিশ এবং টিএসআর জওয়ানদের সামনেই হামলা চালিয়েছেন৷ শুধু তাই নায় পুলিশের লাঠি ছিনিয়ে নিয়ে গাড়ি ভাংচুড় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠছে এদিন বিক্ষিপ্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ রাজ্য পুলিশ৷ অবশ্য ঘটনার কিছুক্ষনের মধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফে বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷
এদিন সকালে খোয়াই জেলার ছনখলা এলাকায় জিএমপির সমর্থকদের গাড়িতে আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ এই আক্রমণের পেছনে আইপিএফটি জড়িত বলে দাবি করেছে গণমুক্তি পরিষদ৷ তাদের বক্তব্য, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পাহাড়ে লুকিয়ে ছিল আইপিএফটির সমর্থকরা৷ গণমুক্তি পরিষদের সমাবেশকে বাঞ্চাল করার উদ্দেশ্যেই লাঠি, দা, গুলতি নিয়ে তৈরি ছিলেন আইপিএফটির সমর্থকরা৷ ছনখলা এলাকায় গণমুক্তি পরিষদের সমর্থকদের গাড়ি আসছে দেখেই তাদের উপর হামলা চালানো হয়৷ ভাঙচুর করা হয়েছে প্রায় ৩২ টি গাড়ি৷
এদিকে গণমুক্তি পরিষদের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ আগরতলায় ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের সমাবেশে আসার পথে আই পি এফটি (এন সি)র আশ্রিত দুর্বৃত্তরা খোয়াই, মোহনপুর, জিরানীয়া এবং তেলিয়ামুড়া মহকুমার কয়েকটি জায়গায় জঙ্গল থেকে ঢিল ছুড়ে এবং গাড়ী থামিয়ে হামলা চালিয়ে বেশকিছু লোককে আহত করেছে৷ খোয়াই এবং তেলিায়মুড়ার কয়েকটি জায়গায় রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে রাস্তার উপর গাছ ফেলে সমাবেশে আসা গাড়ীগুলি আটকানোর চেষ্টা করেছে৷ মোহনপুরের তমাকারী ও ছনখলা, জিরানীয়া মহকুমার খুমুলুঙ, বেলবাড়ী, অমরেন্দ্রনগর, জম্পুইজলা এবং খোয়াইয়ের রাজনগর সহ আরো কিছু জায়গায় হুজ্জুতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে৷ সমাবেশে লোকজন চলে আসলে কয়েকটি জায়গায় সি পি আই (এম) পার্টি অফিসের উপর হামলা চালিয়েছে৷ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে আসা লোকজনদের উপর আইপি এফ টি দুর্বৃত্তদের এই পরিকল্পিত আক্রমণে উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই জেলা, খোয়াই এবং জিরানীয়ার ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন৷ তার মধ্যে বেশ কিছু মহিলাও রয়েছেন৷
ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ আই পি এফ টি দলের এন সি দেববর্মা গোষ্ঠী তিপ্রাল্যান্ডের হঠকারী শ্লোগান তুলে, ক্রমশঃ আরো জনবিচ্ছিন্ন এবং রাজনৈতিক দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে নিজের গা বাঁচাতে বিজেপি দলের ইন্ধনে এই জাতীয় হিংসাত্মক পথে দলের কিছু উগ্র সমর্থকদের ঠেলে দিয়ে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মারাত্মাক উস্কানি দিচ্ছে৷
ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ রাজ্যের সকল অংশের শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক জনগণকে এই জাতীয় অন্যায় এবং অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে৷ জি এম পি, আই পি এফ টি দলের নেতৃত্বের প্রতি হুশিয়ারী দিচ্ছে, এই জাতীয় হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দলীয় সমর্থকদের বিরত করুন, নতুবা চরম মূল্য দেওয়ার জন্য তাদের তৈরী থাকতে হবে৷ জি এম পি তার সভ্য/সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে শান্তি রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রয়াস জারি রেখে কোনরকম প্ররোচনায় পা না দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে৷
গণমুক্তি পরিষদের এই অভিযোগ পুরো খারিজ করে দেন আইপিএফটি সভাপতি এনসি দেববর্র্ম৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, কোন ঘটনা ঘটলেই তার জন্য আইপিএফটিকে দায়ি করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, এদিন খোয়াই জেলার ছনখলা এলাকায় আইপিএফটির খোয়াই শাখায় সম্মেলন ছিল৷ এই সম্মেলন উপলক্ষ্যে বহুমুখ আইপিএফটি সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন৷ তখনই বিধায়ক পদ্ম দেববর্র্মর গাড়ি আইপিএফটি সমর্থকের সুকটিতে ধাক্কা দেয়৷ এর থেকেই ঘটনার সূত্রপাত৷ তিনি বলেন, প্রথমে দুই দলের সমর্থকদের তর্কাতর্কি শুরু হয়৷ একসময় তা হাতাহাতিতে বদলে যায়৷ তিনি জানান, গণমুক্তি পরিষদের সমর্থকদের হামলায় আইপিএফটির চারজন সমর্থক আহত হয়েছেন৷ তারা বর্তমানে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন৷ এদিকে, চম্পকনগরে যে ঘটনা ঘটেছে তার সূত্রপাত গত ১৭ তারিখ রাতে হয়েছিল৷ এনসি দেববর্র্ম জানান, সেদিন রাতে চম্পকনগর বেলবাড়ি এলাকার কাশিদাস পাড়া সংলগ্ণ শম্ভুচন্দ্র পাড়ায় সিপিএমের কয়েকজন সমর্থক মদমত্ত অবস্থায় আইপিএফটির কর্মী বিশু দেববর্র্মকে মারধোর করেছিলেন৷ তাতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন৷ তাকে জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ একই দিনে ললিত বাজারেও সিপিএমের সমর্থকদের হাতে আইপিএফটি কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ বিশু দেববর্র্মকে আক্রমণের ঘটনায় ১৮ তারিখ সকালে আইপিএফটির পক্ষ থেকে চম্পকনগর ফাঁড়িতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ কিন্তু, পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ তাই আজ সকালে আইপিএফটির সমর্থকরা চম্পকনগর পুলিশ ফারির সামনে রাস্তা অবরোধ করেন৷ তাতে পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা আশ্বাস দেন অপরাধিকে শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে৷ এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে অবরোধ প্রত্যাহার করে ফিরে যাওয়ার সময় গণমুক্তি পরিষদের সমর্থকদের গাড়ি ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল৷ তখন তাদের সাথে আইপিএফটির সমর্থকদের বচসা বাঁধে৷ এর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ এনসি দেববর্র্ম জানান, গণমুক্তি পরিষদের সমর্থকদের হামলায় দুই আইপিএফটি কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন৷
এদিন দিনভর শাসকদল এবং আইপিএফটির মধ্যে চলতে থাকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি৷ এসবের মাঝেও বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা৷ সমালোচকদের মতে, আইন শৃঙ্খলার রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা এদিনের ঘটনাকে মারাত্মক ধারণ করতে সহায়তা করেছে৷ এর দায় পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও নিতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *