BRAKING NEWS

আশা ও নিরাশার খেলা

নোটবন্দী, জিএসটি এই দুইটি চালু হইবার পর দেশবাসী ধরিয়া নিয়াছিলেন যে, ইহার সুফল সরাসরি দেখা যাইবে৷ এত বড় দুই উদ্যোগ নেওয়ার পর দেশের সাধারণ মানুষ কোনও সুফল সরাসরি দেখিতে পাইয়াছেন এমন বলা যাইতেছে না৷ জিনিষপত্রের দাম হু হু করিয়া বাড়িয়াই চলিতেছে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গরীব অংশের মানুষের জীবনে দুর্দিন নামিয়া আসিয়াছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আচ্ছে দিনের’ দেখা কি দেশবাসী সত্যিই পাইবেন, এই প্রশ্ণই বড় হইয়া দেখা দিয়াছে৷ দেশের ধনীক পঁুজিপতি গোষ্ঠীর পৃষ্টপোষণা যতবেশী বাড়িবে ততই গরীব অংশের মানুষকে সেই বঞ্চনা অবহেলার মধ্যেই কাটাইতে হইবে৷ বহুমুখী পদক্ষেপের কারণে বহু ছোট ব্যবসায়ী, ছোট খাটো দোকানী এখন দিকভ্রান্ত অবস্থায়৷ কোথায় দাঁড়াইবে? বহুমুখী পদক্ষেপ বলিতে বুঝা যাইতে পারে যে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের থাবা একই সাথে ঝড়ের গতিতে নামিয়া আসিয়াছে৷ রাজনৈতিক দলগুলির হাতে বিশাল পরিমাণ অর্থের ছড়াছড়ি৷ কোথা হইতে এইসব টাকা আসিতেছে? কে হিসাব দেখিবে? অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট ওষুধের দোকান, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কি ঝাপ বন্ধ করিয়া ফেলিবে? এই প্রশ্ণই আজ বড় হইয়া দেখা দিয়াছে৷ অথচ কালো ব্যবসায়ীর টাকায় কোনও রকম হাত পড়ে নাই৷ বহাল তবিয়তে, দিলখুস ভাবে আছে এই পয়সা ওয়ালারা৷ একদিকে দুর্নীতি রোধে দফাওয়ারী পদক্ষেপ অন্যদিকে সীমাহীন দুর্নীতি জাঁকাইয়া আছে৷ চাপা ক্ষোভ বাড়িতেছে৷ মানুষের বিশাল প্রত্যাশার মাঝে যেন ক্রমাগত আঘাতই আসিতেছে৷
কথায় আছে, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়’৷ একদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ অন্যদিকে কর্পোরেট জগতে কি চলিতেছে? কোটি কোটি টাকার খেলা৷ এই দ্বিচারিতা দেশবাসীর স্বপ্ণকে ধুলায় মিশাইয়া দিতেছে৷ আজ সাধারণ মানুষ এক বিরাট সন্ধিক্ষণে দাঁড়াইয়া আছে৷ কেন্দ্রে বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হইয়াছে৷ শুধু কেন্দ্র নহে রাজ্যে রাজ্যে থাবা বিস্তৃত হইতেছে৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তো গলা চড়াইয়া বলিয়াছেন আমরা পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় থাকিব৷ বিজেপি সভাপতির এই লক্ষ্য পূরণে গোটা দেশে অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটাইয়া দেওয়া হইয়াছে৷ একের পর এক রাজ্য বিজেপির পদানত হইতেছে৷ এইবার ত্রিপুরার মানুষের চরম পরীক্ষার দিন সমাগত৷ ত্রিপুরা বিজয়ের সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়াছে অমিত শাহের দল৷ কিন্তু, ত্রিপুরার সেই একই প্রশ্ণের উত্তর মিলিল না৷ নোট বন্দীর মাধ্যমে কি পরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার হইয়াছে কিংবা জিএসটির যাঁতাকলে কত মানুষের পেটে লাথি পড়িয়াছে? সুখ চিরস্থায়ী করিতে হইলে দুঃখকে মানিয়া নিতেই হইবে৷ কিন্তু, কতদিন? সত্যি, সোনালী দিন আসিবে? ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সাফল্য এখন বিজেপিকে উজ্জীবিত করিতেছে৷ সেই উজার করা সমর্থনের মূল্য কি মোদি সরকার দিতে পারিবে? এই প্রশ্ণের গুরুত্ব কতখানি? প্রধানমন্ত্রী মোদি গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে কতখানি বিশ্লেষণ করিতেছেন? এই প্রশ্ণগুলি আসিতেছে এই কারণে যে, দেশের ভাগ্যবিধাতা কোন্ পথে? সংশয় সন্দেহ দেখা দিতেছে৷ জিনিষপত্রের দাম কমিতেছে না কেন? গরীব অংশের মানুষের সামনে এই প্রশ্ণই তো সমস্ত ব্যর্থতার দিকগুলি তুলিয়া ধরিতেছে৷ নোটবন্দী এক বিপ্লবাত্মক ঘটনা৷ কিন্তু, কালো টাকা কত উদ্ধার হইল তাহাই জানিল না দেশবাসী৷ জিএসটি চালু হইল৷ সুফল মিলিবার জন্য কি আরও অপেক্ষা করিতে হইবে? সোজা কথায়, দেশবাসী এখন আশা ও নিরাশার শিকার৷ এই অবস্থা হইতে বোধহয় সহসা মুক্তি নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *