BRAKING NEWS

স্বাধীনতা দিবসের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচারে কাঁচি চালানোর সিদ্ধান্তে প্রসার ভারতী ও রাজ্য সরকারের সংঘাত তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা / নয়াদিল্লি, ১৬ আগষ্ট৷৷ স্বাধীনতা দিবসে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভাষণ সম্প্রচারে প্রসার ভারতীর কাঁচি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকার বনাম প্রসার ভারতীর সংঘাত তীব্রতর হয়েছে৷ প্রসার ভারতীর তরফে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে লেখা চিঠিকে কেন্দ্র করে প্রসার ভারতীর ভূমিকা নিয়েই দেশজুড়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছে৷ বিষয়টি জাতীয় স্তরে প্রচার মাধ্যমেও গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছে৷
রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ৭১ তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভাষণ সম্প্রচারের জন্য আকাশবাণী ও দূরদর্শনের আগরতলা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তা আগাম রেকর্ড করার আবেদন জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে৷ এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেই ভাষণ রেকর্ড করে আকাশবাণী ও দূরদর্শনের আগরতলা কেন্দ্র৷ কিন্তু ১৪ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টায় আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রসার ভারতীর নির্দেশ মোতাবেক রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত মুখ্যমন্ত্রীর রেকর্ড করা ভাষণ ১৫ আগষ্ট সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে৷ কিছুক্ষণ পর একই বক্তব্য জানিয়ে দেয় আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রও৷ প্রসার ভারতীর মতে, রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ স্বাধীনতা দিবসের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্যের উপযোগী নয়৷ তাই এই নির্দেশনামা৷ অল ইন্ডিয়া রেডি ও এবং প্রসার ভারতীর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বাধীনতা দিবসের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর রেকর্ড করা ভাষণকে এই অনুষ্ঠানের উপযোগী করে পরিবর্তনের মাধ্যমে পুণগর্ঠন করতে হবে৷ প্রসার ভারতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণের পরিবর্তন করতে রাজী হলে তবেই সেই ভাষণ ১৫ আগষ্ঠ সম্প্রচার করা হবে৷ সোমবার সন্ধ্যায় প্রসার ভারতীর এই নিষেধাজ্ঞার কথা অল ইন্ডিয়া রেডিও-র ডিরেক্টর জেনারেলের পক্ষে এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস (পোলিসি) সঞ্জয় দোসাঝ আকাশবাণী ও দূরদর্শনের আগরতলা কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন৷ প্রসার ভারতীর সিইও দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এ নিয়ে যৌথভাবে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন৷ আকাশবাণী ও দূরদর্শনের আগরতলা কেন্দ্রের স্থানীয় কর্মকর্তাগণ যথারীতি প্রসার ভারতীর এই সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানিয়ে দেন৷ সোমবার সন্ধ্যায় প্রসার ভারতীর এই নিদের্শিকা পাওয়ার পরই তা সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর প্রদত্ত ভাষণের কোনও শব্দ, বাক্য বা কোনও অংশের পরিবর্তন করবেন না বলে জানিয়ে দেন৷ প্রসার ভারতীর এই নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞাকে তিনি অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও অসহিষ্ণু পদক্ষেপ বলে মনে করেন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী আজ জাতীয় স্তরের বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমকে এবিষয়ে বলেন, দেশের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছিলেন৷ তিনি মনে করেন স্বাধীনতা দিবসে এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক৷
এই ঘটনায় সিপিএম পলিটব্যুরো এবং ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ সিপিএম পলিটব্যুরো মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি যারা এই পদক্ষেপের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে৷ ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি এই ঘটনাকে জরুরী অবস্থার সাথে তুলনা করেছে৷ এক বিবৃতিতে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি বলেছে, আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অসহিষ্ণু ও স্বৈরাচারী মনোভাব কীভাবে রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলিকে গ্রাস করেছে এ ধরনের বেনজির ঘটনা তার জ্বলন্ত নিদর্শন৷ রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ সেন্সর করার এই উদ্ধত আদেশ সার্বিকভাবে জনগণের বাক্স্বাধীনতা ও রাজ্যের স্বশাসন ও দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, যা কোনও ভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়৷ এর মধয দিয়ে রাজ্যের জনগণকে অপমানিত করা হয়েছে৷ বিবৃতিতে রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটি সতর্ক করে বলেছে, এই ঘটনা অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যখন সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা হয়েছিল৷
এদিকে, তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা প্রসার ভারতীর এই পদক্ষেপ দূর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন৷ বুধবার মহাকরণে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ তাতে, প্রসার ভারতীর পদক্ষেপের প্রতিবাদ এবং সমালোচনা করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, প্রসার ভারতীর এধরনের সিদ্ধান্ত বড়ই দূর্ভাগ্যজনক৷ তিনি এর তুলনা জরুরী অবস্থার সাথে করেছেন৷ তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী বলেন, প্রসার ভারতীর এই পদক্ষেপ অঘোষিত জরুরী অবস্থার ছোটখাটো সংস্করণ৷ তাঁর প্রশ্ণ, মুখ্যমন্ত্রী এমন কী বলেছেন যা প্রচার করা যাবে না৷ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে৷ তিনি জানান, বিষয়টি প্রচারে নিয়ে যাওয়া হবে৷
এদিকে, বিজেপি রাজ্য কমিটি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ বিজেপি রাজ্য কমিটির বক্তব্য, প্রসার ভারতীর কাজকে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী এবং অসহিষ্ণু বলে বক্তব্য রাখা মুখ্যমন্ত্রীর উচিৎ হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বা কোনও সরকারী স্বশাসিত সংস্থার কাজের প্রতিবাদ করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে৷ কিন্তু যে ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করেছেন তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ বিজেপি রাজ্য কমিটি আরও বলেছে, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ সরকার নিজেদের সাফল্যের কথা, নীতির কথা বলতে পারেন, কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিক বিবাদ কেচ্ছা তুলে আনার জায়গা স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের মাধ্যমে হতে পারে না বলে দাবি করেছে বিজেপি রাজ্য কমিটি৷
এদিকে, স্বাধীনতা দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচারিত না হওয়ায় দেশজুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্র জাতীয় স্তরের এবং রাজ্যের প্রচার মাধ্যমগুলিতে এক চিঠি পাঠিয়ে জানায়, স্বাধীনতা দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছে৷ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ১২ মিনিটের ভাষণ সম্প্রচার করেছে দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা৷ গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, আজ বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে পুণঃসম্প্রচারিত হয়েছে অনুষ্ঠানটি৷ চিঠিতে দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা স্বাধীনতা দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়নি এই সংবাদ তীব্রভাষায় প্রত্যাখান করার পাশাপাশি ঘটনাটি সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেছে৷ দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা সূত্রে খবর, পূর্ব সূচী অনুযায়ী স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের রেকর্ডেড ভাষণ সকাল সাড়ে নয়টায় সম্প্রচার হওয়ার কথা ছিল৷ একই সময়ে অল ইন্ডিয়া রেডিওতেও সম্প্রচারের কথা ছিল৷ কিন্তু, প্রসার ভারতীর নির্দেশে সেই ভাষণ সম্প্রচার ঐ নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এমনকি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর রেকর্ডেড ভাষণ দিনের অন্য কোনও সময়েও সম্প্রচার করা হয়নি৷
এদিকে, দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলার এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য সরকার পাল্টা প্রশ্ণ তুলে জানতে চেয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ পরিবর্তনের বিষয়ে কোন কথা ঐ চিঠিতে উল্লেখ নেই কেন৷ তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের তরফে জারী করা প্রেস বিবৃতিতে এই প্রশ্ণ তুলার পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, প্রসার ভারতী এখন তাদের অগণতান্ত্রিক এবং কর্তৃত্ববাদী অবস্থান সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা শুরু করেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *