BRAKING NEWS

প্রসঙ্গ ঃ তৃণমূল

রাজ্য স্তরে তৃণমূলের অস্তিত্ব কতটুকু রহিয়াছে তাহা দাড়ি পাল্লায় ওজন করিবার পর্যায়ে গিয়া পৌঁছিয়াছে৷ বলা যাইতে পারে যে, রাজ্যে তৃণমূল নামে একটা রাজনৈতিক দল ছিল তাহা যেন রাজ্যবাসী ভুলিয়া গিয়াছে৷ এমনই এক দুঃসময়ে রাজ্য তৃণমূলকে চাঙ্গা করিতে পাঁচ আগষ্ট রাজ্যে আসিতেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক তথা সল্টলেকের মেয়র সব্যসাচী দত্ত৷ তিনদিন তিনি রাজ্যে অবস্থান করিবেন৷ তৃণমূলের নেতাদের সহিত শলা পরামর্শ করিয়া নতুন ফর্মুলা বাহির করিবার চেষ্টা করিবেন৷ উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, সব্যসাচীর পূর্বে ত্রিপুরার দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের সহ সভাপতি মুকুল রায়৷ তিনি রাজ্য তৃণমূলকে শক্তিশালী করিবার জন্য কতবার রাজ্যে উড়িয়া আসিয়াছিলেন তাহার কোনও হিসাব নাই৷ রায়বাবু বারবার আসিয়া দাবি করিয়াছিলেন যে একমাত্র মমতার নেতৃত্বে রাজ্য তৃণমূল সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করিবে৷ ঠিক সেই সময়ে কংগ্রেসের ছয় বিধায়ক কংগ্রেস দলত্যাগ করিয়া তৃণমূলে যোগ দিয়াছেন৷ ইহার ফলে মমতা আপ্লুত হইয়া উঠিলেন৷ ভাবিলেন তাহাদেরকে দিয়া ত্রিপুরা হইতে বামফ্রন্ট সরকারকে হঠাইয়া দিয়া তৃণমূল সরকার গঠন করিবে৷ এই বিষয়টি বিবেচনা করিয়া সেই সময় তিনি আস্তাবল ময়দানে আনুষ্ঠিত প্রদেশ তৃণমূলের সভায় ছুটিয়া আসিলেন৷ এবং তাহার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে মঞ্চের এই প্রাপ্ত হইতে ওই প্রান্তে হাঁটিয়া হাঁটিয়া অভিমত ব্যক্ত করিয়াছিলেন যে, ১৮-এর নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতায় আসিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ কিন্তু, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় সবকিছু যেন পাল্টে গেল৷ তৃণমূলে দেখা দিল মহা সুনামি৷ অব্যাহত ভাঙনে ঘাসফুল মাটিতে লুটাইয়া পড়িল৷ তছনছ হইয়া গেল মমতার ঘাসফুলের সাজানো বাগান নব্য তৃণমূলী তথা কংগ্রেস হইতে আসা ছয় বিধায়কও তৃণমূল ছাড়িলেন৷ জ্যাকসন গেইট সংলগ্ণ তৃণমূল ভবনও ছন্নছাড়া হইয়া পড়িল৷ ওই ভবন হইতে তৃণমূলের সাইনবোর্ড ফেলিয়া দিলেন বিধায়ক আশীষ সাহা৷ সেই সুবাদে রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত এমন কোন নেতা তৃণমূলে আর রহিল না৷
ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে তৃণমূলের হাল ধরিলেন দুলাল দাস৷ তৃণমূলের নতুন অফিস হইলো জয়নগরে৷ রাজ্যস্তরে তৃণমূল যখন শূণ্যের কোটায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছে ঠিক তখনি মমতা ফের ত্রিপুরার দিকে নজর দিলেন৷ এইদিকে ১৮-এর নির্বাচন ঘনাইয়া আসিয়াছে৷ নির্বাচনের আর মাত্র ছয়মাস বাকি৷ রাজ্য জুড়িয়া বহিতেছে নির্বাচনি হাওয়া৷ এইবার এই হাওয়া যেন আগেভাগে আসিয়া গেল৷ ঠিক এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল যেন শূণ্য হইতে শুরু করিতে চাহিতেছেন৷ তবে কি ১৮-এর নির্বাচনে তৃণমূল লড়াই করিবার জন্য প্রস্তুত হইতেছে৷ প্রশ্ণ হইলো এই ক্ষেত্রে তৃণমূলের তেমন নেতা কই? রাজ্যে গ্রহণযোগ্য একজন নেতাও খঁুজিয়া পাওয়া যাইবে না৷ তবে সব্যসাচীর এই সময়ে আসিবার রহস্য কী? তাও আবার রাজ্যে আসিয়া তিনি তিনদিন থাকিবেন৷ তবে ইহা সত্য যে, তৃণমূল লইয়া রাজ্যবাসী এখন আর কোনও মোহ নাই৷ মমতার চমক এই রাজ্যে আর তেমন চটক সৃষ্টি করিতে পারিতেছে না৷ ইহার পরও রাজ্যে ঘাসফুল ফুটাইতে মমতার আগ্রহ রহস্য বলিয়া মনে হইতেছে৷ তবে জানা গিয়াছে যে, সব্যসাচী রাজ্যে আসিয়া তৃণমূলের রাজ্য কমিটি গঠন করিবেন৷ এই কমিটির মাথায় নাকি বসানো হইবে একজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে৷ রাজনীতিতে তাহার এমন পরিচিতি নই৷ তবে তাহার বাবা ছিলেন কংগ্রেসের এক সময়ের নেতা৷ মমতার হাবভাব দেখিয়া বোঝা যাইতেছে যে, তিনি যেন তেন ভাবে ত্রিপুরাকে ধরিয়া রাখিতে চাহিতেছেন৷ কিন্তু, নেতার যে বড্ড অভাব৷ সেই সাথে রহিয়াছে কর্মী সমর্থকদের ঘাটতি৷ বর্তমানে রাজধানীতে তৃণমূল হাঁপানী রোগীর মত কিছুটা শ্বাস লইলেও মহকুমা স্তরে তৃণমূলের ঝাঁপ বন্ধ হইয়া গিয়াছে৷ ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে সব্যসাচী রাজ্যে আসিতেছেন৷ প্রশ্ণ হইল, মুকুলবাবু যাহা পারিলেন না তাহা কী সব্যসাচীবাবু পারিবেন? মুকুল যখন ছিলেন তখন রাজ্যে তৃণমূলের পালে জোর হাওয়া বইছে৷ আর সব্যসাচী যখন আসিতেছেন তখন রাজ্যে তৃণমূল মৃতপ্রায়৷ এমন মৃতপ্রায় তৃণমূলে জল দিয়া তৃণমূলকে কতটুকু উজ্জীবিত করিতে পারিবেন তাহা এখন দেখিবার বিষয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *