BRAKING NEWS

প্রসঙ্গ ঃ বাগিচা শিল্প

ধীরে ধীরে যেন গ্রামীণ অর্থনীতি পঙ্গু হইয়া যাইতেছে৷ অথচ এক সময়ে গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল অতি সমৃদ্ধ৷ গ্রামের প্রতিটি পরিবারে ছিল গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু৷ বর্তমানে গ্রামের সেই সুদিন আর নাই৷ গ্রাম বাঁচিলে শহর বাঁচিবে এই শ্লোগান যেন হুমকির মুখে পড়িয়াছে৷ কেননা, গ্রামের চাষিরা আর আগের মত চাষ করিয়া তেমন লাভের মুখ দেখিতেছেন না৷ বর্তমানে ধান চাষ করিয়া চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়িতেছেন৷ ইহার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের চাষিদের রক্ষা করিবার জন্য হর্টিকালচার দপ্তর এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়াছে৷ দপ্তর হিসাব করিয়া দেখিয়াছে যে, এক কানি জমি চাষের উপযোগী করিয়া চারা রোপন, ফসল উৎপাদন এবং ঘরে তোলা পর্যন্ত চাষিদের খরচ হয় প্রায় আট হইতে নয় হাজার টাকা৷ অথচ সেই ধান বিক্রয় করিয়া চাষিরা উৎপাদন খরচ পর্যন্ত তুলিতে পারিতেছে না৷ ফলে ধান বিক্রয় করিয়া অনেক চাষি ধান উৎপাদন হইতে মুখ ফিরাইয়া নিয়াছে৷ অনেকে ধানি জমিতে রাবার বাগান গড়িয়া তুলিয়াছে৷
রাজ্যের হর্টি দপ্তর চাষিদের এমন দুর্দশার বিষয়টি চিন্তা করিয়া সম্প্রতি চাষিদেরকে বিভিন্ন বাগিচা গড়িয়া তুলিবার জন্য নিবিড়ভাবে পরামর্শ দিয়াছে৷ সেই সাথে বিভিন্ন শাক-সব্জি উৎপাদনের উপরও জোর দিতে বলা হইয়াছে৷ তবে ইহা সত্য যে এক সময়ে ছোট্ট এই রাজ্য বিভিন্ন বাগিচা শিল্প এবং শাক সব্জি সহ নানা ধরনের ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ ছিল৷ সেই সময়ে বাঁশ বাগানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা৷ পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ উৎপাদন হইত৷ আর সেই বঁশ পাচার হইত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমানের বাংলাদেশে৷ নদী পথে সারি সারি বাঁশের ভেলা ফেনী নদীর দিকে ভাসিয়া যাইত৷ তেমনই নারিকেল, কাঁঠাল, লিচু ও আনারসের জন্য বিখ্যাত ছিল এই রাজ্য৷ প্রতিটি বাড়িতে ছিল বিভিন্ন ফলের গাছ৷ ইহা ছাড়াও সরকারীভাবে ছিল নানা ধরনের ফলের বাগিচা৷ এইগুলির মধ্যে ছিল নরিকেল, কঁঠাল ও লিচু বাগিচা৷ এইসব বাগিচার ফল পাচার হইত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমানের বাংলাদেশে৷ ট্রাকে করে এই সব ফল চোরা পথে চলিয়া যাইত ওই পারে৷ তেমনই পাট শিল্পেও এই রাজ্য সমৃদ্ধ ছিল৷ রাজ্যের নানা স্থানে পাট চাষ করা হইত৷ পাট শিল্পেও এই রাজ্য সমৃদধ ছিল বলিয়া রাজধানীতে গড়িয়া উঠিয়াছিল জুট মিল৷ আর বাঁশের উৎপাদন বেশি ছিল বলিয়া বাঁশের তৈরী বিভিন্ন সামগ্রীর কদর বহিঃরাজ্যেও ছিল৷ বর্তমানে সেইসব অতীত হইয়া গিয়াছে৷ প্রবীণদের স্মৃতিতে বাঁচিয়া রহিয়াছে৷ নবীন প্রজন্মের কাছে এইসব কিস্সা কাহিনীর মত মনে হইবে৷ কিন্তু, সেই কিস্সা কাহিনীকে ফের বাস্তবে ফিরাইয়া আনিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে রাজ্যের হর্টিকালচার দপ্তর৷ হর্টিকালচারের বিভিন্ন অফিসের কৃষকদেরকে বিভিন্ন বাগিচা তৈরীর উপকারীতা সম্পর্কে বিশদ তথ্য তুলিয়া ধরিয়া বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছেন৷ বর্তমানে বাগিচা শিল্প যে বিরাট অর্থকরী শিল্প সেই বিষয়টি কৃষকদের সামনে তুলিয়া ধরিতেছেন৷ এবং বাগিচা তৈরীর ক্ষেত্রে কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করিবার আশ্বাস দিতেছেন৷ এই সহযোগিতার মধ্যে রহিয়াছে বীজ, সার, ওষুধ সরবরাহ বাগিচা তৈরী হওয়া পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য৷ প্রয়োজনে কেহ ব্যাঙ্ক হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে চাহিলেও তাহাকে ঋণের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করা হইবে৷ মোটের উপর রাজ্যের হারানো বাগিচা শিল্পকে পুণরুজ্জীবিত করিবার জন্য হর্টি দপ্তর যেন আন্তরিকভাবে সচেষ্ট৷
এখন দেখিবার বিষয় রাজ্যের চাষিরা হর্টি দপ্তরের এমন উদ্যোগকে কতটুকু স্বাগাত জানাইতেছে৷ কেননা, শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করিলে হইবে না৷ এইগুলিকে বাজারজাত করিবারও ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে৷ সত্য বটে, রাজ্য ফল প্রক্রিয়াকরণের কারখানা স্থাপন করিলে বাগিচা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটিবে৷ রাজ্যে আনারস প্রক্রিয়াকরণের একটি কারখানা ছিল৷ ইহার নাম হইল ন্যারামেক৷ এই কারখানা ঝাঁপ বন্ধ হইয়া গেল৷ তাই চাষিদেরকে বাগিচা করিবার উৎসাহ দিলে চলিবে না৷ বাগিচার ফল বিক্রয় করিবার পথও দেখাইতে হইবে৷ এই পথ না দেখাইলে অরণ্য রোদনই সার হইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *