BRAKING NEWS

নির্বাচনে টাকার শ্রাদ্ধ

উদার গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান হইতেছে ভোটপর্ব৷ গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণ৷ নির্দিষ্ট সময়ে জনগণ তাহাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করিয়া সরকার গঠনে মুখ্য ভূমিকা লইয়া থাকেন৷ কিন্তু, এই ভোটপর্বকে কেন্দ্র করিয়া চলিতে থাকে টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ৷ বিশ্বের বৃহত্তম উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষে এই টাকা ছড়ানো পর্ব উত্তরোত্তর প্রকট হইতেছে৷ রাজনৈতিক দলগুলি নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করিয়া নিজস্ব ক্ষমতাকে জাহির করে৷ আর ইহাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনগণকে৷ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয়ভাবেই আম জনতা বঞ্চনার শিকার৷ দক্ষিণপন্থী দলগুলি সাধারণতঃ প্রত্যক্ষভাবে আম জনতার কাছ হইতে টাকা সংগ্রহ করে না৷ বড় বড় কর্পোরেট হাউসগুলি টাকা যোগানের মূল উৎস৷ অন্যদিকে সিপিআইএম এর মতো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাইয়া রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসীন দলগুলি মূলতঃ বিভিন্ন ধরনের চাঁদা, অনুদান এবং সরকারী অর্থানুকূল্যের উপর নির্ভরশীল৷ আদর্শগত ভাবে কমিউনিস্টরা নির্বাচনের পরিপন্থী হইলেও শাসন ক্ষমতায় থাকার অভিলাষে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আদর্শচ্যুত হইতে বা নিত্য নতুন পন্থা অবলম্বন করিতে দ্বিধা বোধ করে না৷ মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতাসীন সিপিআইএম তো ভারতবর্ষের তৃতীয় বিত্তশালী রাজনৈতিক সংগঠন৷
ত্রিপুরা রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেক লক্ষ্য রাখিয়া ইতিমধ্যে টাকা সংগ্রহের তোড়জোড় শুরু হইয়াছে৷ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নামে চাঁদা সংগ্রহের তৎপরতা শুরু হইয়াছে৷ ১৯৮৮ সনের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের পর এইবারের মেতা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন বামফ্রন্ট (মূলতঃ সিপিআইএম) আর হয়নি৷ দিল্লীর আনুকূল্যও কল্পনাতীত৷ সিপিএম নেতৃত্বও বিষয়টি বিলক্ষণ অনুধাবন করিয়া থাকেন৷ বেকার কর্মচারীদের ধূমায়িত ক্ষোভ প্রশমন করিবার উপায় না থাকিলেও অর্থ সংগ্রহে তৎপর৷ ভোটপর্বকে নিজেদের মতো পরিচালিত করিবার সম্ভাবনা কম থাকায় শাসক দল ভোটের ফলাফল সম্পর্কে বড্ড উদ্বিগ্ণ৷ এহেন পরিস্থিতিতে দলীয় মুদ্রাভান্ডারকে স্ফীত করিবার নানাবিধ কৌশল অবলম্বন হইতেছে৷ আবার ভোটারদের মধ্যেও ইতিমধ্যেই জিগির উঠিয়াছে ভোট না নোট- কোনটা চাই? রাজ্যের কর্মচারীরা প্রত্যাশিত পে-স্কেল হইতে বঞ্চিত হওয়াায় ক্ষোভ ক্রমশঃ ধূমায়িত হইতেছে৷ ব্যবসায়ীদের উপরও মোটা অঙ্কের চাঁদা ধার্য্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত৷ আসন্ন দুর্গাপূজাও আতঙ্কের অন্যতম কারণ৷ আবার জিএসটি লাগু হওয়ায় কলোধন মজুত করা বা বিতরেেণর প্রয়াস কঠিন হইয়া পড়িয়াছে৷ গাঁটের পয়সা খরচ করিয়া ব্যবসায়ীরা কোনদিন চাঁদা দেয় না৷ কৈ এর তেলেই কৈ ভাজিয়া থাকেন৷ স্বভাবতঃই দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি৷ বিভিন্ন সামাজিক ভাতা বা ভোটেরআগে বিগত নির্বাচনেগুলির ন্যায় অনুদান দিয়া সাধারণ মানুষের চিত্ত জয় করিবার প্রয়াস শুরু হইলেও জুজুধান প্রতিদ্বন্দ্বি শক্তির ক্ষমতা কোন অংশেই উপেক্ষিত নয়৷ তাই শাসক এবং বিরোধী উভয় শিবিরই ভোট নাম যুদ্ধে মরণ কামর দিতে বদ্ধ পরিকর৷ আর হরির লুটের ন্যায় টাকা উড়ানো যেন একটি ফ্যাসন হইয়া দাঁড়াইয়াছে৷ টাকার এই আদ্যশ্রাদ্ধের পরিণতি কিন্তু ভয়ংকর৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *