BRAKING NEWS

অবরোধের অন্তরালে

পৃথক রাজ্যের দাবীতে খামতিংবাড়ীতে আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়িয়া ক্ষমতাসীন সিপিএম দল সারা রাজ্যে প্রতিবাদ আন্দোলনের যে তুফান ছুটাইয়াছে, সেখানে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল বা অন্যান্য দলগুলিরও কোনও প্রতিবাদ আন্দোলন নাই৷ তবে, ‘আমরা বাঙালী’ দল আইপিএফটির পৃথক রাজ্যের দাবীর এবং সড়ক ও রেল অবরোধের তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছে৷ সভা সমাবেশে পৃথক রাজ্যের দাবী যে কত অসার তাহা তুলিয়া ধরিয়াছে৷ পৃথক রাজ্যের দাবীর বিরুদ্ধে সিপিএম তীব্র প্রতিবাদে সামিল হইয়া এবং অবরোধের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়া জনমনে বিশ্বাসের ভিতকে আরও মজবুত করিয়াছে বলা যাইতে পারে৷ দশই জুলাই হইতে সড়ক ও রেল অবরোধের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়া বিরোধীতায় সামিল না হওয়ায় বিজেপি সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ণ উঠিয়া আসিয়াছে৷ ত্রিপুরার একশ ভাগ অউপজাতি ও সত্তর আশী ভাগ উপজাতি অংশের মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবীকে সমর্থন করে না৷ ত্রিপুরার আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থান তো কোনও মতেই পৃথক রাজ্যের দাবীকে সমর্থন দিতে পারে না৷ বরং এই পৃথক রাজ্যের দাবীর কারণে কোনও অংশের মানুষই স্বস্তিতে নাই৷ অউপজাতি অংশের মানুষ যাহাদের জ্ঞান গম্যি যথেষ্ট আছে তাহারা তো পৃথক রাজ্যের দাবী জানাইতে পারে না৷
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা যখন বাজিয়া উঠিয়াছে, রাজনৈতিক তৎপরতা যখন প্রায় তুঙ্গে তখন উপজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল আইপিএফটি দশই জুলাই হইতে সড়ক ও রেল অবরোধ ডাকিয়া সিপিএম দলেরই রাজনৈতিক সুবিধা আনিয়া দিল৷ এই মুহুর্তে আন্দোলনে নামিবার তেমন কোনও ইস্যুই ছিল না সিপিএমের৷ আইপিএফটি এক দারুন অস্ত্র তুলিয়া দিয়া ক্ষমতাসীন সিপিএম দলকে উজ্জীবিত করিবার রসদ দিয়াছে৷ একথা তো একশ ভাগ সত্যি যে, ত্রিপুরার জাতি উপজাতির সিংহ ভাগ মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবীর বিরোধী৷ বিজেপি পৃথক রাজ্যের দাবীর বিরোধী তাহা প্রকাশ্যে জানাইয়া দিয়াছে৷ সিপিএম গুরুতর অভিযোগ করিয়াছে যে, আইপিএফটির এই অবরোধ আন্দোলনের পিছনে বিজেপির হাত রহিয়াছে৷ বিজেপি তাহার প্রতিবাদ করিলেও সিপিএমের রাজ্যব্যাপী উত্তাল আন্দোলন রাজ্যবাসীকে ভাবাইতেছে৷ সোজা কথায়, বলা যায় যে, পৃথক রাজ্যের দাবীতে আইপিএফটির অবরোধ আন্দোলন সিপিএম দলেরই রাজনৈতিক সুবিধা দিয়াছে বলা যাইতে পারে৷ কোনও কোনও মহল অবশ্য অভিযোগ করিতেছেন যে, সিপিএমের মদতেই আইপিএফটি সড়ক ও রেল অবরোধের ঘোষণা দিয়াছে৷ কিন্তু, সিপিএমের উত্তাল মিছিল সমাবেশ সাধারণ মানুষকে নতুন করিয়া ভাবাইতেছে৷
ত্রিপুরায় এই মুহুর্তে যে পদক্ষেপ নেওয়া হইবে সবই বিধানসভার নির্বাচনকে লক্ষ্য রাখিয়াই৷ পৃথক রাজ্যের দাবীতে এই সড়ক ও রেল অবরোধের সিদ্ধান্ত ত্রিপুরায় এই প্রথম৷ এই অবরোধ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নাই এমন বলা যাইবে না৷ মণিপুরে এই রকম অবরোধ আন্দোলন চলিয়াছে৷ সেখানে রাজ্য সরকার গুলি চালাইতে বাধ্য হইয়াছিল৷ সেই গুলিতে কয়েকজন আন্দোলনকারীর মৃত্যুও হইয়াছিল৷ পরবর্তী সময়ে এই অবরোধ আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক সুবিধা অনেকে আদায় করিয়া নিয়াছেন৷ মণিপুরে বিজেপি সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ত্রিপুরায় আইপিএফটির অবরোধ মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ন্যুনতম শক্তিও প্রয়োগ করিবে না৷ কোনও রকম প্ররোচনার ফাঁদেও সিপিএম সরকার পা রাখিবে না৷ এইরকম সিদ্ধান্তই নিয়াছে সিপিএম সরকার৷ কোনও ভাবেই এই অবরোধের ইস্যু হাতে তুলিয়া দিতে চাহিবে না সিপিএম৷ এই অবস্থায়, আইপিএফটির এই অবরোধ আন্দোলন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন্ দলের পক্ষে সহায়ক হইবে তাহাই এখন বড় হইয়া উঠিয়াছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *