BRAKING NEWS

পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, তিন বিধায়কসহ নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ আদালতের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জুন৷৷ ২০১১ সালে পুলিশ ও জনতার খন্ডযুদ্ধের ঘটনায় মামলার শুনানি শুরু হয়েছে৷ বিধায়ক রতন লাল নাথ, সুদীপ রায় বর্মন, গোপাল রায়, সুবল ভৌমিক সহ অভিযুক্ত ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ পাশাপাশি আগামী ৩০ জুন আদালতে সশরীরে হাজির থাকার জন্য অভিযুক্তদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে এমবিবি কলেজে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ১০ জুলাই ভিষণ গন্ডগোল হয়৷ তাতে, পুলিশ বহু মানুষকে বেধড়ক পিটিয়েছিল৷ অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন৷ এই ঘটনার জের পরদিন ১১ জুলাই পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়৷ গাড়ি পুড়ানো থেকে শুরু করে, চলে গুলিও৷
ঐদিন বিকালে প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল৷ মিছিলটি কংগ্রেস ভবনের সামনে থেকে সূর্য চৌমুহনী হয়ে মিটারসনের গলির সামনে দিয়ে কামান চৌমুহনী আসছিল৷ মিছিলটি সূর্য চৌমুহনীতে পৌছতেই জঙ্গী আকার ধারণ করে৷ পরিস্থিতি মুহুর্তের মধ্যেই উত্তেজনাকর হয়ে উঠে৷ আশেপাশের সমস্ত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ঝাপ ফেলে গণহারে বন্ধ করে দেন৷ মিটারসনের গলির মুখে একটি জুয়েলারি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল৷ অভিযোগ রয়েছে, ঐ জুয়েলারি দোকানে টিএসআর বাহিনীর এক পদস্থ আধিকারীক ও তার পত্নী কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন৷ তাদের সুরক্ষায় ছিলেন কয়েকজন টিএসআর জওয়ানও৷ মিছিলের জঙ্গী রূপ প্রত্যক্ষ করে পথচারীরা ছুটাছুটি শুরু করে দেয়৷ তখন ঐ এলাকারই পাপাই সাহা নামে এক যুবক দৌড়ে পালাতে গিয়ে টিএসআর জওয়ানের সাথে ধাক্কা খায়৷ কথিত অভিযোগ রয়েছে, ঐ টিএসআর জওয়ান তার সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালায়৷ গুলিবিদ্ধ হয় পাপাই সাহা৷ পরে তার মৃত্যু হয়৷ তৎক্ষনাৎ গুলির আওয়াজ পেয়ে প্রাণ চঞ্চল রাজধানীর জনগণ ও পথচারীরা আত্মরক্ষায় ছুটতে শুরু করেন৷ অভিযোগ, কংগ্রেসের মিছিলকে লক্ষ্য করে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা গুলি চালায়৷ সেই মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়৷ সূর্য চৌমুহনী থেকে মিছিল ফিরে যায় কংগ্রেস ভবনের সামনে৷ সেখানে দফায় দফায় চলে পুলিশ ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ৷ ইট বৃষ্টি, গাড়ি পুড়ানো, থানায় হামলা চলতে থাকে৷ টিএসআর জওয়ানদের লক্ষ্য করে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা ব্যাপক ইট পাটকেল ছুড়ে৷ তখন জওয়ানরা থানার ভেতরে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন৷ তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি৷ একসময় টিএসআর জওয়ানরা পশ্চিম থানার সামনে দাড়িয়ে এলোপাথারী গুলি চালাতে থাকেন৷ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন চারজন নিরিহ পথচারী৷ যদিও তাদের কারোরই প্রাণহানী ঘটেনি৷ জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা৷ সেদিন কংগ্রেস বিধায়ক তথা তৎকালীন বিরোধী দলনেতা রতন লাল নাথ উত্তেজিত পুলিশ ও টিএসআর বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে সাদা রুমাল দেখিয়ে শান্তি আলোচনার আর্জি জানিয়েছিলেন৷ তাতেও, কোন সুফল হয়নি৷ পরবর্তী সময়ে একপ্রকার জীবন বাজি রেখেই রতনবাবুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি দল পশ্চিম থানায় গিয়ে শান্তি আলোচনায় বসেন৷ তখন টিএসআর জওয়ানরা কংগ্রেস নেতৃত্বদের ঘেরাও করেন এবং অভিযোগ করেন কংগ্রেস ভবন থেকে গুলি চালানো হয়েছিল৷ তারই পাল্টা জবাব দিয়েছে টিএসআর জওয়ানরা৷ এই ঘটনায় পুলিশ অফিসার কান্তিলাল বৈদ্য একটি সুয়োমুটো মামলা করেন৷ বিধায়ক রতন লাল নাথ, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, বিধায়ক গোপাল রায়, তৎকালীন বিধায়ক সুবল ভৌমিক, সুশান্ত চৌধুরী, বিনয় দাস, দিলীপ দাস, সঞ্জয় দেব এবং শঙ্কর দেব’র বিরুদ্ধে বোমাবাজি, আগুন লাগানো এবং সন্ত্রাসের মদতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ সেদিনের ঘটনায় সিআইডি তদন্ত করে রিপোর্টও জমা দিয়েছে৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে সরকারী আইনজীবী দাবি করেন৷
সেদিনের ঘটনায় বাজবীর সিং চৌহান নামে এক টিএসআর জওয়ানের শরীরে গুলি লেগেছিল৷ তাছাড়া ২১ জন সাধারণ জনগণ আহত হয়েছিলেন৷ গুলি লেগে পাপাই সাহা’র মৃত্যু হয়েছিল৷ তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কমল চক্রবর্তী সহ ১০ জন পুলিশ কর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন৷
ঐ মামলায় শুক্রবার অতিরিক্ত সেশন জজ কোর্টে শুনানি শুরু হয়৷ আজ আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি তাদের আগামী ৩০ জুন আদালতে সশরীরে হাজির থাকতেও নির্দেশ দিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *