BRAKING NEWS

ডাঃ হোমচৌধুরী জীবন দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য সেবার অন্তঃসার শূণ্যতার প্রমাণ দিলেন

৷৷ অনুপ নাগ৷৷ আগরতলা, ১৮ জুন৷৷ ‘দিন যায় কথা থাকে৷’ শুরুটা এভাবেই করি৷ গতায়ু হলেন একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক, নাম এ কে হোমচৌধুরী৷ ৭৪ বছরে তাঁর জীবনের সবগুলি দিন ফুরিয়ে গেল৷ শুক্রবার আগরতলায় বিশ্বমানের হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় প্রবীন চিকিৎসক ডঃ হোমচৌধুরীর৷ চিকিৎসক এ কে হোমচৌধুরীর সাথে আমার পরিচয় সেই বহু বছর আগে যখন আমি অন্য একটি দৈনিক খবরের কাগজে কাজ করতাম৷ মাঝে মাঝে মনে হয় কী যেন এক ধূমকেতুর মায়াজালে পড়ে, এমন কিছু ব্যক্তিবিশেষের সাথে আচমকাই পরিচয় হয়ে যায়, যা মরমে মর্মস্পর্শী হয়ে থাকে প্রতিক্ষণে৷ এ কে হোমচৌধুরী এমন কোন বিশেষ ব্যক্তি নন যাঁকে নিয়ে একটি নিবন্ধ তৈরী করতে হবে৷ কিন্তু, ঐ যে বললাম মরমে মর্মস্পর্শী সেটাই বড় কথা, বড় আক্ষেপের৷ নিজের কাছে নিজেই জানতে চাই কেন এমনটা হল৷ কেন হল পরিচয়৷
এ কে হোমচৌধুরীকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁরই স্ত্রী মানসী হোমচৌধুরী৷ তিনিও এখন আর বেঁচে নেই৷ প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে তাঁর (মানসী) ছিল নিত্যদিনকার আনাগোনা৷ আমি পত্রকার, আর এজন্যই মানসীদির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাই৷ তিনি কংগ্রেস করতেন৷ কিন্তু, জীবনে কিছুই পাননি৷ বরং, নানাভাবে সহায়তা করেছেন এমন অগুণতি ব্যক্তি বিশেষকে৷ হায়রে! দলটি কংগ্রেস বলেই বোধহয় এমন হয়৷ তারপরতো জীবন প্রবাহ বহুদূর গড়িয়ে যায়৷ একদিন শুনলাম দিদি আর নেই৷ দল তাঁকে সম্ভবত দু’টি ফুলের পাপড়িও দেয়নি৷ জানি না ভুল বললাম কি না৷
যাক, চলে আসি এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যারাতে৷ ডাঃ হোমচৌধুরীবাবু আমার কাছে আসলেন, মাথায় ছাতা৷ বললাম এমন দুর্যোগের সন্ধ্যায় বেরিয়েছেন৷ ধারে কাছে চা তো কোথাও পাব না৷ বললেন, না না আজ আর চা কোথায় পাবেন৷ আপনার কাছে একটি কথা বলব বলে এসেছি৷ বললাম, কী কথা বলুন তো৷ বললেন, আমার ঘরে ফ্রীজ নেই৷ আমাকে ইস্টলমেন্টে একটি ফ্রীজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন৷ আমি তো অবাক৷ একজন চিকিৎসক যাঁর এত যশ তিনি কিনা আমার মতো এক নগন্য কলমচীর কাছে এমন একটি অদ্ভুত দাবী নিয়ে এসেছেন! পরদিন নিয়ে গেলাম আমারই পরিচিত এক শোরুমে৷ সেখান থেকে তিনি নিয়ে গেলেন সেই ফ্রীজ৷ স্মৃতি সততই মধুর, সত্যি মধুরই বটে৷ কারো পারিবারিক জীবন নিয়ে আমার কোন কৌতুহল নেই৷ কিন্তু, তা সত্বেও বলতে পারি হোমচৌধুরীর পরিবারে কোথাও যেন একটি অভিশপ্ততা বরাবর বিরাজ করে চলছিল৷ আগেই বলেছি মানসীদি রাজনীতি করতে গিয়ে কিছুই পাননি৷ তাঁর স্বামী চিকিৎসক হোমচৌধুরীও ব্যক্তি জীবনে কিছুই পাননি৷ কর্মস্থলে অনেক সুনাম, অনেক যশ, অনেক প্রতিপত্তি, অনেক ভালবাসা পেয়েছেন, সেবা করেছেন আর্তের, সেবা করেছেন পিড়ীতের, কিন্তু পারিবারিক জীবনটি ছিল বড়ই বেদনা বিদূর৷ এখানে একটু বলে নেই, বাংলার সাংসৃকতিক জগতের কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী যাঁর নাম অরুন্ধতী হোমচৌধুরী চিকিৎসক হোমচৌধুরীর আপন সহোদরা৷ নিজের পরম স্নেহের কন্যার আকস্মিক প্রয়াণ তাঁকে এক সময় নির্মুখ করে দিয়েছিল৷ আজ তিনিও চিরবিদায় নিলেন৷ শেষ বেলায় আমিও বেদনাক্লান্ত চিত্তে তিনি ও তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই৷
জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক পরিতোষ বিশ্বাসের সাথে চিকিৎসক হোমচৌধুরীর ছিল চিরমধুর সম্পর্ক৷ আজ থেকে মাস ছয়েক আগে রাজধানীরই কোন এক স্থানে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে আচমকাই দেখা হয়ে যায় তাঁদের দু’জনের৷ কত ফেলে আসা কথা, কত ফেলে আসা স্মৃতি যেন গুরুদেবের সেই গানের কলির মতো ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়৷’ ধলাই জেলার কুলাই হাসপাতালে কর্মজীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন৷ তাঁর হাতে অনেক অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে পুণর্জীবন ফিরে পেয়েছেন৷ তাঁর উদার মানসিকতায় মুগ্দ গোটা জেলার মানুষ৷ এক কথায় তিনি ছিলেন চিকিৎসক পরিচয়ে এক ভিন্ন মনুষ্যত্বের অধিকারী- বলছিলেন জাগরণ সম্পাদক পরিতোষ বিশ্বাস৷ কিন্তু, যে চিকিৎসক লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, তিনি জীবন শায়াহ্ণে তথাকথিত বিশ্বমানের আইএলএস হাসপাতালে গিয়ে এক কথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছেন৷ ঐদিন এই হাসপাতালটিতে তাঁকে দেখার জন্য কোন চিকিৎসক ছিলেন না বলে অভিযোগ৷ তা থেকেই প্রমাণ হয় রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার কি জরাজীর্ন দশা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *