BRAKING NEWS

রক্ত বিধৌত ত্রিপুরায় আবার ভয়ঙ্কর খেলা

দেবাশীষ ঠাকুর
এই ত্রিপুরার মাটি রক্ত ভেজা৷ কম রক্ত ঝরেনি৷ এক সময় উপজাতি উগ্রপন্থী নামধারী ঘাতকরা গণহারে মানুষের রক্তে স্নান করেছে৷ তাঁরা স্বাধীন ত্রিপুরার জন্য বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছিল৷ মুখে স্বাধীন ত্রিপুরার শ্লোগান আসলে লুটতরাজ৷ গণহত্যার বিভিষিকা কায়েম করে নিজেদের বীরত্ব প্রকাশের প্রতিযোগিতা৷ তাদের বীরত্ব গাঁথার মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক ঘটনা ত্রিপুরাকে পঞ্চাশ বছর পিছনে ঠেলেছে৷ শুধু উগ্রপন্থী নামধারী ঘাতকরাই নহে রাজনৈতিক হানাহানি, খুনোখুনির ঘটনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিও কম দায়ী নয়৷ গোটা রাজ্যই যদি উপদ্রুত হয়ে পড়ে তবু আশ্চর্য্য হবার নহে৷ ত্রিপুরায় রাজনৈতিক স্বার্থে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য রাজনীতির নেতারা কি কম রক্ত পান করেছেন৷ উগ্রপন্থীরা যখন একের পর এক হত্যা চালাত তখন তো মৃতদেহ নিয়েও কাড়াকাড়ি করতে দেখা গেছে৷ মানুষের মৃতদেহ নিয়া এই ত্রিপুরায় কম রাজনীতি হয়নি৷ আজও রাজনীতির নেতারা কি সেই পথেরই অনুসারী হতে চান? ত্রিপুরার মানুষ অনেক অশান্তির আগুনে পুড়েছেন৷ আর কত আগুন, আর কত রক্ত৷
ত্রিপুরা ছোট্ট পার্বতী রাজ্য হলেও তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড বহুমুখী৷ এখানেও দলের ছড়াছড়ি৷ নতুন নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে আবার তলিয়ে যায়৷ যেমন জাতীয় কংগ্রেস একেবারেই শক্তিহীন হয়ে পড়েছে৷ ষাট কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারবে কিনা সন্দেহ৷ সবচেয়ে বিচিত্র ঘটনা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসে৷ তৃণমূলের সভাতেই যে নেতা তৃণমূল করব না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরই নেতৃত্বে বুধবার মিছিল করে শক্তি দেখাল তৃণমূল৷ কারণ এই নেতারা বুঝে গেছেন বিজেপি দলে গিয়েও রাজনৈতিক অস্তিত্ব রাখা যাবে না৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা রাজ্যে বিজেপিকে নিয়ে অবাম জোট করতে পারবে না৷ কারণ, তৃণমূলের সামনে বড় শত্রু এখন বিজেপি৷ বিজেপি একের পর এক হুঙ্কার ছাড়ছে৷ আর তৃণমূল নেত্রী পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন৷ ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস সিপিএমের প্রতিদ্বন্ধি হতে পারল না৷ সেই স্থান নিয়েছে বিজেপি৷ বিজেপিও ক্যাডার ভিত্তিক দল৷ এই দলের মাথার উপরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস৷ এই সংঘ ছাড়া বিজেপির সঙ্গে অন্য দলের কোনও ফারাক নেই৷
সেই শক্তিধর দলের সঙ্গে সিপিএম এখন সম্মুখ সমরে৷ আজ বিজেপি দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ এই দল ভাল করে জানে সিপিএমের মতো দলের বিরুদ্ধে লড়াই খুব সহজ নয়৷ এটাও সহজ নয় যে, রাজ্যে এককভাবে বিজেপি ক্ষমতার মসনদ দখলে সমর্থ হবে৷ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ কি সত্যিই চায় রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতার মসনদে আরোহন করুক৷ এই প্রশ্ণই আজ বড় কথা৷ বিধানসভা নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসবে ততই পরিস্থিতি আরও বেশী অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠবে৷ রাজনীতিতে খুনের বদলা খুন কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে তা তো ভাবলে শিউরে উঠতে হয়৷ একথা ইতিহাস সত্যি যে সিপিএম খুনীরা অনেক মানুসের রক্তে স্নান করেছে৷ খুনের রাজনীতি, রক্ত ঝরানোর রাজনীতিতে এই দল অতীতে অনেক বেশী সিদ্ধহস্ত ছিল৷ সিপিএমের বর্ষিয়ান নেতা নৃপেন চক্রবর্তীর কি খুনের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন নাই? সিপিএমকে মনে রাখতে হবে সেদিন আর নাই৷ এখন বন্দুকের মুখে মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে না৷ সুতররাং প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলিকে শান্তি স্বস্তির জন্য প্রয়াস নিতেই হবে৷ বিজেপি সিপিএম সংঘর্ষ চলতে থাকলে ত্রিপুরার রাজনীতি বিষিয়ে উঠবেই৷ আর এই পরিস্থিতির শিকার হতে হবে রাজ্যের মানুষকে৷ এক অস্থির রাজনীতির মধ্যে ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নহে দলতন্ত্রের নাগপাশে বন্দী হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *