BRAKING NEWS

ভোটে টেক্কা দিতে কৌশলের খেলা জোর কদমে শুরু হয়ে গেল, রেগার টাকা বন্ধ ও কমিয়ে দেয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্য্যত যুদ্ধ ঘোষণা রাজ্যের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মার্চ৷৷ ভোটে টেক্কা দিতে বিজেপির অন্যতম তুরুপের তাস রেগা৷ বামেদের নাজেহাল করে ছাড়তে এখন সেটাই ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অনুমান করা যাচ্ছে৷ কারণ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় কমে গেছে শ্রম দিবস৷ তাই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ এরই সাথে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন৷ ত্রিপুরা স্টেট এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি কাউন্সিলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ক্ষোভের সুরে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নানা কৌশলে রেগার টাকা কমিয়ে দিয়ে রেগা বন্ধ করে দিতে চাইছে৷ তাই তিনি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে দিল্লিতে দরবার করতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তিনি গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, রেগা বরাদ্দ ক্রমাগত কমিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের তথ্য সম্বলিত বঞ্চনার চিত্র এবং এই সম্পর্কিত প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রী এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানান৷ এরই সাথে নির্দেশ দিয়েছেন, দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরুন৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছে, বিজেপি একদিকে তুরুপের তাস খেলছে৷ অন্যদিকে, রেগা নিয়ে চটে লাল মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আরো জটিল আকার ধারণ করবে বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞমহল৷
সোমবার মহাকরণে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরা স্টেট এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি কাউন্সিলের সভায় রেগা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবের প্রতি কড়া ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তাঁর বক্তব্য, নানা কৌশলে কেন্দ্র রেগার টাকায় যেভাবে ছাঁটতে শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে রেগা প্রকল্পটি বন্ধ করে দিতে চাইছে মোদি সরকার৷ দেশের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র ও শ্রমজীবী জনগণকে বঞ্চিত করতে এবং পঁুজিপতি ও ভূস্বামীদের অতি মুনাফার স্বার্থে রেগা আইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে এই সরকার৷ তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক ত্রিপুরার জন্য ৭৯ গড় শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই লক্ষ্যের বাইরেও কাজের নিরিখে রাজ্য টাকা পাবে৷ কিন্তু প্রথম বরাদ্দ অনুযায়ী অর্থ যথা সময়ে বন্টন না করে রাজ্যে রেগার শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্য অতিক্রমের সুযোগ কৌশলে বন্ধ করে রেখেছে৷ এরই প্রেক্ষাপটে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ত্রিপুরার জন্য সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত শ্রম দিবস হল মাত্র ৩৪৷ এদিন তিনি, অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মেটেরিয়াল কম্পোনেন্টের টাকাই এখনো পুরো দেয়নি কেন্দ্র৷ রাজ্য সরকার যদি অর্থ দপ্তরের মাধ্যমে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকে ১০০ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান না করত তাহলে রাজ্যে রেগার কর্মসূচী রূপায়ণ করাই সম্ভব হত না উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর বক্তব্য, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যতশ্রম দিবসের কাজ হয়েছে তার ভিত্তিতেই সমানুপাতে টাকা দেবে৷ কিন্তু সেই টাকা দেয়নি কেন্দ্র৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার মুখে বলছে এক কথা, কাজে করছে আরেকটা৷ তাদের এই ভূমিকা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী এবং কপট উদ্দেশ্যপূর্ণ, কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর৷ তাই তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন আগামী অর্থবছরের গড় শ্রম দিবস কমিয়ে দেবার অর্থই হল মেটেরিয়াল কম্পোনেন্টের টাকাও এই অনুপাতে কমানো হবে৷ রেগা নিয়ে কেন্দ্রের অপকৌশল কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি নির্দেশ দেন এই সভাতেই কেন্দ্রের ভূমিকা তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে৷ এবং তা প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর কাছে লিখে পাঠাতে হবে৷ এদিন এই সভায় উপস্থিত রাজ্যের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী নরেশ জমাতিয়াকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে বসে থেকে প্রতিবাদ জানালে চলবে না৷ দিল্লিতে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে৷ লোকসভা ও রাজ্য সভায় ত্রিপুরার যে তিনজন সাংসদ রয়েছেন তাঁদের হাতেও প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীকে লেখা প্রতিবাদ পত্র তুলে দিতে হবে৷ যাতে তাঁরা সংসদে এনিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে পারেন৷ প্রয়োজনে অন্য সাংসদদের কাছেও কেন্দ্রের এই জনবিরোধী ভূমিকার কথা তুলে ধরতে হবে, যাতে সমবেতভাবেই এবিষয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করা যায়৷ এদিন গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী নরেশ জমাতিয়াকে অবিলম্বে দিল্লি গিয়ে রাজ্যের সাংসদদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর সাথে দেখা করে রেগার বঞ্চনা নিয়ে রাজ্যের প্রতিবাদের কথা তথ্য সম্বলিতভাবে সবিস্তারে জানাতে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন৷ এমনকি দিল্লিতেই সমস্ত জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে রেগা নিয়ে সারা দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী ভূমিকার কথা তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে বলতেও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
রেগা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় প্রচন্ড রেগে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তিনি বলেন, রেগা নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অর্থের ৬০ শতাংশ খরচ হবে শ্রমিকদের মজুরিবাবদ এবং বাকি ৪০ শতাংশ খরচ হবে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী বাবদ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী এখন দিল্লি থেকে সরাসরি গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে৷ প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী অর্থাৎ মেটেরিয়াল কস্ট বাবদ যে টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেবে বলেছিল কথা দিয়েও এখন সেই কথা তারা রাখছে না৷ নানা পদ্ধতিতে টাকা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ রাজ্যে রাজ্যে সংবিধানসম্মত জননির্বাচিত সরকারগুলোকে কেন্দ্র অবিশ্বাস করছে৷ দুর্নীতি হলে ধরতেই হবে৷ কিন্তু অবিশ্বাস করলে কাজ কি করে হবে, প্রশ্ণ মুখ্যমন্ত্রীর৷ তাই তাঁর ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকার রেগা আর চালু রাখতে চাইছে না৷ সস্তায় শ্রম ক্রয়ের মাধ্যমে বড় বড় ভূস্বামী, জমির মালিক এবং বৃহৎ কলকারখানার মালিকদের মুনাফা বৃদ্ধির স্বার্থেই কেন্দ্র রেগা বন্ধ করে দিতে চাইছে৷ যাতে কাজ হারানো গ্রামীণ রেগা শ্রমিকরা সস্তায় শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হন৷
এদিন, কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত জেলা সভাধিপতিদেরও কেন্দ্রের এই জনবিরোধী ভূমিকার কথা মানুষদের ভালভাবে বুঝিয়ে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কারণ, মানুষকে কেন্দ্রের বিষয়ে বুঝিয়ে না বলা হলে রাজ্য সরকার সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হবে৷ রেগা নিয়ে কোথায় সমস্যা, তার কি কারণ এবং কিভাবে এই সমস্যার নিরসন করতে হবে, এসম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে বলে দৃঢ়তার সাথে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি এটাকে ভাবনায় রেখেই প্রথম পর্যায়ে যে টাকা আসবে তার উপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, রেগায় দুর্নীতির অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন এই সভায় গ্রামোন্নয়ন সচিব ড জি এস জি আয়েঙ্গার জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এমআইএস আপডেট অনুযায়ী রাজ্যে রেগায় ৭৯ গড় শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ যদিও এই সময়ে জাতীয় গড় শ্রমদিবস হল ৪৩৷ তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত এই শ্রমদিবস বেড়ে ৮২ থেকে ৮৩ হবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তিনি আরো জানিয়েছেন ২০১৬-১৭অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেগায় সেন্ট্রাল শেয়ার হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক বরাদ্দ করেছে ৯৯০ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরির পরিমাণ ৬৭৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা যা সরাসরি দিল্লি থেকে শ্রমিকদের একাউন্টে দেওয়া হচ্ছে৷ যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১১৫৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা৷ যার মধ্যে শ্রমিকদের মজুরির পরিমাণ হল ৭১৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা৷ রেগা প্রকল্পে ৮টি জেলায় সম্পদ সৃষ্টির পরিমাণ হল ৬৫ হাজার ৩৪০টি৷
এদিন কাউন্সিলের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত দপ্তরের মন্ত্রী মানিক দে, আদিম জাতি পুনর্বাসন দপ্তরের মন্ত্রী মণীন্দ্র রিয়াং, সমাজশিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিজিতা নাথ, স্বশাসিত জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রতিরাম ত্রিপুরা, ৮টি জেলার সভাধিপতিগণ, বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা, ললিত দেববর্মা ও অঞ্জন দাস, মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন, বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সচিব, সচিব ও পদস্থ আধিকারিক এবং আটটি জেলার জেলাশাসকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *