প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির চক্রান্তে যুব সমাজ রক্তদানে অনাগ্রহী ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মার্চ৷৷ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সংগৃহিত রক্তের ক্ষেত্রেও দেশের নিরাশাজনক হাল হওয়ার পেছনে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির চক্রান্ত কাজ করছে বলে অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ এই বিষয়ে তাঁর যুক্তি, যুব সমাজ রক্তদানে অনাগ্রহি৷ কারণ, তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা এবং স্বার্থপর মনোভাব খুব বেশী সক্রিয়৷ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যুব সমাজকে এই মনোভাবে উদ্বুদ্ধ করতে সচেষ্ট৷ তাই দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সংগৃহিত রক্তের হার নিরাশাজনক৷ তবে, এরাজ্যে ৯৭ শতাংশ রক্ত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সংগৃহিত হচ্ছে৷ এই ৯৭ শতাংশ রক্ত আসছে মাত্র রাজ্যের ২৫ শতাংশ লোকের মাধ্যমে, যাদের বয়স ১৮- ৬০ বছরের মধ্যে৷ মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ এদিন তিনি বলেন, দেশের শাসকরা মুষ্ঠিমেয় মানুষের জন্য কাজ করছে৷ যারা নির্বাচনে তাদের সাহায্য করেছেন৷ ফলে, সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন৷ তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই নীতি বদলাতে হবে৷ নইলে শুধুমাত্র রক্তদানের মাধ্যমে সংগৃহিত রক্তেই মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে না৷ তাঁর মতে, শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ এবং তাদের মন মানসিকতার উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে৷ অভিভাবক এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত দুদিনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ডোনার সি এম ই ভিজিল্যান্স, হিমোভিজিল্যান্স এবং ভলান্টারী ব্লাড ডোনেশান শীর্ষক কর্মশালার শেষ দিনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
তিনি বলেন, সমাজের যুব সম্প্রদায়কে মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে স্বেচ্ছায় রক্তদান সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও পুরোপুরি সফলতা আসবে না৷ সেদিক দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যারা আমাদের যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আত্মকেন্দ্রীক ও স্বার্থপর করে তোলার প্রতিনিয়ত যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা আরও বাড়বে৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসরকার সচেতনতার উপর জোর দিয়ে বলেন, আজকে যারা শিশু তাদেরকে এখন থেকেই ভালো মানুষ হওয়া, দেশপ্রেমী হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে৷ এরজন্য শিক্ষক সমাজসহ সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করে মোটিভেশনাল ক্যাম্পেইন আরও বেশী করে চালাতে হবে৷ তাদেরকে উৎসাহিত করে তুলতে হবে৷ তিনি রাজ্যের প্রথম বারের মতো এই ধরণের আলোচনাচক্রের আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখানে স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসা বিষয় বস্তুগুলিকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রাজ্যের মোটিভেটর-এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োলজিকেলস ও ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনস অব ইন্ডিয়া-এর উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের ত্রিপুরা ষ্টেট ব্লাড ট্রানফিউশান কাউন্সিল ও সোসাইটি অব ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স(আগরতলা) এর যৌথ সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সচিব স্বামী নিতকামানন্দজী মহারাজ, ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োলজিকেলস এর অধিকর্তা সুরিন্দার সিং ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা জে কে দেববর্মা সহ দেসের নানা প্রান্ত থেকে আগত মোটিভেটর বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানে এন আইবি-এর অধিকর্তা সুরিন্দার সিং স্বেচ্ছায় রক্তদানের ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্যের প্রশংসা করে একে পাথেয় করে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেবার উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সচিব স্বামী হিতকামানন্দজী মহারাজ স্বেচ্ছায় রক্তদানের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় মরণোত্তর চক্ষুদান, দেহদানে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করে তোলার জন্য আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ডোনার ভিজিল্যান্স ডকুমেন্টারী ফিল্ম-এর সিডি এর আবরণ উন্মোচন করেন৷ এছাড়া সোসাইটি অব ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়ের বিভিন্ন পুস্তিকা প্রদান করা হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *