কথায় আছে যত গর্জে তত বরষে না৷ ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং ধরিয়াছেন কংগ্রেসের নেতারাই৷ নতুন নেতারা সক্রিয় হইতে পুরাতন নেতারা, যাহারা দলের সাইনবোর্ড ধরিয়া রাখিয়াছিলেন তাঁহারা যেন ময়দান ছাড়া হইয়া যান৷ যে রেতন চক্রবর্ত্তী দলের সাইনবোর্ড ধরিয়া বাখিয়াছিলেন তিনি আরও বেশী ঘরবৈঠা হইয়া পড়েন৷ কংগ্রেসের ছয় বিধায়ক একযোগে তৃণমূলে যোগ দিবার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে ঘুমন্ত বা সাইনবোর্ড সর্বস্ব তৃণমূল ত্রিপুরা কাঁপাইবে বলিয়া ধারণাই নসাৎ হইয়া যায়৷ গত কয়েকটি নির্বাচনে তূণমূলের কম্পন দেখা যায় নাই৷ বরং শোচনীয় পরিস্থিতিই দলকে চিহ্ণিত করে৷ কেন মমতার এই দল সারা রাজ্যে দাপাইতে পারে নাই তাহা সাধারণের কাছে স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে৷ অথচ বিজেপি অনেক বেশী তৎপর ও ভোটের মার্জিনেও অগ্রসর৷ এই দলের উত্থানে শংকিত সিপিএমও৷ তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসও স্বস্তিতে নাই৷ একথা স্পষ্ট করিয়াই বলা যায় যে, অবাম ভোট ভাগাভাগির ফলে লাভবান হইবে সিপিএম বা বামফ্রন্ট৷ আর এই জন্যই অবাম জোট গঠনের দাবী রাজ্যে জোর পাহিয়াছে৷ উপজাতি ভোট নিয়াও দরকষাকাষি চলিতেছে৷ সোজা কাথায়, বাম বিরোধী জোর হাওয়া এখনও উঠিতেছে না৷ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল কোন্ পথের অনুসারী হয় তাহা বলা মুশকিল৷ তবে, একথা ঠিক, এই ভোট ফল রাজনীতির গতি প্রকৃতির উপর জোর প্রভাব ফেলিবে৷ ত্রিপুরায় এখনই ২০১৮ সালের বিধানসভার ভোটের প্রস্তুতি কার্য্যত শুরু হইয়া গিয়াছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরাতেও বাম রাজত্বের অবসানে জোর ভূমিকা নিবে বলিয়া এতদিন জোর আশা দিয়াছেন, নেতারা অনেক স্বপ্ণ দেখাইয়াছেন৷ কিন্তু, না তৃণমূল শুরুতেই ধাক্কা খাইয়াছে৷ রাজ্যের মানুষ তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের উপর খুব বেশী আস্থা রাখিতে পরিতেছেন না৷ বিভিন্ন ঘটনায় তাহা অনেকে বেশী স্পষ্ট৷ তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুরজিৎ দত্ত সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অখুশীর অনেক কারণ আছে৷ রাজ্য সভাপতির পদ নিয়া সুরজিৎ দলের জন্য খুব তৎপরও ছিলেন না৷ দলকে একেবারে ডুবাইয়া ছাড়িয়াছেন৷ নির্বাচনের সময়ে তিনি বহির্বাজ্যে অবস্থান করেন৷ চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তীর সঙ্গে তাহার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে৷ এই পরিস্থিতিতেই, সুদীপ রায় বর্মন হিসাব করিয়া দেখিয়াছেন যে কংগ্রেসে থাকিয়া কোনও সময়ই সিপিএম বা বামফ্রন্টকে ক্ষমতা হইতে সরানো যাইবে না৷ কারণ, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সিপিএম দলের সঙ্গে বন্ধুত্বের মাখামাখিতে ছিল৷ সুতরাং সুরজিৎ দত্তকে আবার কংগ্রেসে ফিরাইয়া নেওয়ার সুযোগ নাই৷ কংগ্রেসের বিক্ষুদ্ধরা অনেকেই আশ্রিত হইয়াছেন বিজেপিতে৷ তৃণমূল হঠাৎ যেন ঝিমুনী রোগে আক্রান্ত হইয়াছে৷
ত্রিপুরায় ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম হঠাইবার যে শপথ তৃণমূল কংগ্রেস ঘোষণা করিয়াছে তাহা কিভাবে, কোন অংকে সফল হইবে? কারণ, তৃণমূল রাজ্যবাসীর মনে নির্ভরতার জায়গা দিতে পারিতেছে না৷ অবাম জোট গড়িতেও নানা সমস্যা৷ কোনও অবস্থাতেই বিজেপির সঙ্গে আঁতাতে বা আসন সমঝোতাতে তৃণমূল যাইতে পারিবে না৷ প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, আগামী মে মাসে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জী ত্রিপুরায় আসিবেন৷ বর্তমানে দলের শীর্ষনেতা মুকুল রায় রাজ্য সফর করিবেন৷ প্রশ্ণ উঠিয়াছে, দলের সামনে রাজনৈতিক কৌশল কি হইবে৷ পশ্চিমবঙ্গে দল ক্ষতির মুখে পড়ে এমন পদক্ষেপ ত্রিপুরাতে দলনেত্রী নিতে চাহিবেন না৷ সুতরাং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ তো রুদ্ধ হইয়া থাকিবার সম্ভাবনা৷ ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদায় অভিষিক্ত হইয়াছে৷ কিন্তু এই অভিষেকে গৌরব নাই৷ কারণ, দলত্যাগী বিধায়করা কার্য্যত ভোটারদের বিশ্বাসের অবমাননা করিয়াছেন৷ নৈতিকতার প্রশ্ণেও দলত্যাগকে কতখানি মানিয়া নেওয়া সংগত? সুতরাং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই সব নানা প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া যাইবে তৃণমূল৷ ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস মাথা তুলিয়া দাঁড়াইবার ক্ষেত্রে তো বহুমুখী অন্তরায় দেখা দিয়াছে৷ এই পরিস্থিতিতে মমতা ব্যানার্জী ত্রিপুরায় সিপিএম হঠাইবার ক্ষেত্রে সামান্য ভূমিকাও কি নিতে পারিবেন? যদি দলনেত্রী যথেষ্ট সময় ব্যয় করিয়া ত্রিপুরা চষিয়া বেড়াইতে পারেন তাহা হইলেও ফল কতখানি আগাইবে সেই প্রশ্ণ থাকিয়া যায়৷ একথা অস্বীকার করা যাইবে না যে, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের মৃতদেহে যে প্রাণ সঞ্চার হইয়াছিল তাহা যেন কেমন থমকাইয়া গিয়াছে৷ ত্রিপুরায় রাজনীতির আকাশে এখন নানা রঙের তারা৷ কখনও এই আকাশ গাঢ় অন্ধকারে ডুবিতে থাকে৷ এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস কোন্ পথে আগাইবে, না দিশাহীনতায় আক্রান্ত হইবে, তাহাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ণ৷