BRAKING NEWS

ভোটমুখী রাজ্য বাজেট ভানুলালের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ ফেব্রুয়ারি৷৷ ভোটমুখী বাজেট পেশ রাজ্য বিধানসভায়৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১৫৯৫৬.৫৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ তাতে ঘাটতি ১৯৮ কোটি টাকা৷ এই বাজেটে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সরকারি শিক্ষক কর্মচারী ও পেনশনার্সদের৷ রাজ্যের সমস্ত স্তরের কর্মচারী ও পেনশনার্সদের বেতন কাঠামো এবং পেনশনার হার সংশোধনের লক্ষ্যে বাজেটে ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে৷ এবিষয়ে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা ঝেরে কাশেননি, তবে জানিয়েছেন আগামী ১এপ্রিল থেকেই সরকারি শিক্ষক কর্মচারী ও পেনশনার্সদের বর্ধিত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে৷ বাজেট পেশ করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পে কমিশন নাকি পে রিভিউ অথবা বিভাগীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি শিক্ষক কর্মচারী ও পেনশনার্সদের বেতন ভাতা এবং পেনশন পুনর্বিন্যাস করা হবে৷

এবছর বাজেটে নতুন কোন করের সংস্থান রাখা হয়নি৷ ১৯৮ কোটি টাকার ঘাটতি কর সংগ্রহে উন্নতি, ব্যয় সংকোচন এবং অতিরিক্ত উপায়ে সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে মোকাবেলার প্রচেষ্টা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে রাজ্য পুলিশ, টিএসআর, কারাগারের ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড স্টাফ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং হোমগার্ডসদের প্রতিমাসে বর্তমান রেশনভাতা ৭০০ টাকার সঙ্গে আরো ১০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন৷ এবিষয়টি কার্যকর করার জন্য ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এসপিওদের মাসিক সাম্মানিক ভাতা ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৫১৫৬ টাকা থেকে ৫৬৫৬ টাকা প্রতিমাসে করার প্রস্তাব করেছেন৷ রেশনসপ থেকে তেল ও ডালের জন্য যে ভর্তুকি দেওয়া হয়ে থাকে তা প্রতিমাসে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তাতে মাসে বর্তমানে ভর্তুকির পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হবে৷ এই ভর্তুকি ১ এপ্রিল থেকে প্রযোজ্য হবে এবং এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে বছরে ৯.৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এদিকে, এই বাজেটে বর্তমানের ২৮ টি সামাজিক ভাতা ও রাজ্য সরকারের অংশরূপে প্রদত্ত ৩টি সামাজিক ভাতা প্রকল্পে প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে বৃদ্ধির প্রস্তাব পেশ করেছেন৷ তাতে, প্রতিবছরে আনুমানিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং প্রায় ৩লক্ষ ২৫ হাজার সুবিধাভোগী উপকৃত হবেন৷ এছাড়াও লোকশিল্পী, কাষ্ঠশিল্পী, মৃৎশিল্পী, লৌহশিল্পী ও হরিজনদের জন্য ৫টি নতুন সামাজিক ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী৷ এই নতুন সামাজিক ভাতা প্রকল্পগুলিতে যাদের পরিবারে সরকারি চাকুরী নেই, বাৎসরিক উপার্জন ১ লক্ষ টাকার কম এবং বয়স ৫৫ বছরের নিচে নয় এমন পরিবারের সুবিধাভোগীকে মাসে ৭০০ টাকা ভাতা দেবার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তাতে, রাজ্য সরকারের ৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং আনুমানিক প্রায় ৯ হাজার সুবিধাভোগী উপকৃত হবেন৷

এদিকে, তপশিলী উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের পি ম্যাট্রিক ও পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, বোর্ডিং হাউজ স্টাইপেন্ড, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, মেধাবী উপজাতি ছাত্রছাত্রীদের মেধাবৃত্তি প্রদান এবং বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ কোচিং দেয়ার মত বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ বেকার উপজাতি যুবক যুবতীদেরও ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এই বাজেটে এসসি, এসটি ছাত্রছাত্রীদের বোর্ডিং হাউজ স্টাইপেন্ড, ক্লিনিং চার্জ সহ খাবারের জন্য জনপিছু প্রতিদিন বর্তমান বরাদ্দ ৪৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫৫ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ আগামী ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে৷ বাজেটে বেকারদের আরো উৎসাহী করতে স্বাবলম্বন প্রকল্পে প্রতি প্রকল্পের জন্য বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা ভর্তুকি রয়েছে তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এই বর্ধিত ভর্তুকি ২০১৭-১৮ সাল থেকে নতুন প্রকল্পের জন্য কার্যকরী হবে৷ দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পে প্রশিক্ষণের সময় প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকা সংস্থান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তাছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া মেয়েরা রাজ্য সরকারের পেনশনধারীদের পারিবারিক পেনশন পাওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷

এদিকে, বিধায়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও অর্থবরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ আরো ৫ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে এই প্রকল্পের জন্য বর্তমানে ৩০ লক্ষ টাকা থেকে প্রতি বছর ৩৫ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এজন্য রাজ্য কোষাগার থেকে বছরে ৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে৷

নির্বাচন সামনে, তাই নির্বাচন দপ্তরের খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় এবছর প্রায় ৪ গুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নির্বাচন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৯২৪ কোটি টাকা৷ এবছর বাজেটে ৩৬৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবছর বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে৷ শিক্ষাখাতে ২১.২৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে, স্বাস্থ্যখাতে এবছর সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ মোট বাজেটের ৪.৮৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে৷

এদিকে, তপশিলী জাতি ও তপশিলী উপজাতি কল্যাণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় এবছর সামান্য বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে তপশিলী উপজাতি কল্যাণ দপ্তরে ৩৮১৯৪.৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল৷ এবছর বাজেটে তা সামান্য বেড়ে ৩৮২২২.০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরে গত বাজেটে ৪২৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল৷ এবছর তা সামান্য বেড়ে ৪৬৫০.৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বরাদ্দে মারাত্মক কাটছাঁট করা হয়েছে৷ ২০১৬-১৭অর্থবছরে ১৯৬৯৭০ কোটি টাকা গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল৷ এবছর তা কমে ১২৮২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এদিকে, বেশ কয়েকটি দপ্তরে গত অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দে এবছর কাটছাঁট করা হয়েছে৷ প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, পরিবহন, বন, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক, অর্থ, অগ্ণিনির্বাপক, তথ্য প্রযুক্তি, পর্যটন এবং ওবিসি কল্যাণ দপ্তরের জন্য এবছর বাজেটে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷

এদিকে, ঋণ নেওয়ার পরিমাণ এবছরও বাজেটে বাড়ানো হয়েছে৷ বাজেট বরাদ্দে মোট ঋণ ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে খোলাবাজারে ১০৯১ কোটি টাকার ঋণ এবং বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা থেকে দলের বোঝাপড়ার মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ বিগত বাজেট গুলির তুলনায় এবছর ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে৷ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে খোলাবাজার এবং বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা থেকে ৮৫৮.৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল৷ স্বাভাবিকভাবেই এবছর বাজেটে ঋণ নেওয়ার হার অনেকটাই বেড়েছে৷ বাজেট প্রসঙ্গে বিরোধীরা রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷ সামনে নির্বাচন, তাই দাদন বিলির প্রতিশ্রুতি ছাড়া এই বাজেটে আর কিছুই ছিল না বলে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক রতনলাল নাথ৷ তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যবাসীকে বাজেটে টোপ দেওয়া হয়েছে৷ এদিন, রতনবাবু বলেন, গত বছরের বাজেটে রাজ্যের কি সুফল হয়েছে তার কোনটাই উল্লেখ নেই এবছর বাজেটে৷ বেকার কর্মসংস্থান এবং কৃষিতে স্বয়ম্ভর হয়েও ওঠার বিষয়ে কোন বক্তব্য নেই বাজেটে৷ বরং আরো ঋণ নেওয়া হবে, তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ এদিন তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যের ক্রমশ পরনির্ভরতা বেড়ে চলেছে৷ এক তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজ্যের নিজস্ব আয় ছিল ১৬ শতাংশ৷ তা কমে ২০১৪-১৫ তে দাঁড়ায় ১২.৮৩ শতাংশ৷ ২০১৫-১৬ তে সেই হার আরো কমে দাঁড়ায় ১১.০৬ শতাংশ৷ ঐবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭তে নিজস্ব আয় সামান্য বেড়ে হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১১.৫৪ শতাংশ৷ কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজ্যের আয় আবার কমে দাঁড়িয়েছে ১১.০৫ শতাংশ৷ তাঁর মতে, কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা আরো বেড়ে যাচ্ছে রাজ্যের৷ এবিষয়ে সুর চড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, এই বাজেটে ভিক্ষা দেওয়ার মনোভাব ফুটে উঠেছে৷ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি, বরং বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে কেবল ভাতা বাড়ানো হয়েছে৷ তাঁর দাবি, এই বাজেট রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *