মহাত্মা আজ কোথায়?

কথায় আছে ‘রাজা যত বলে পারিষদ বলে তার শতগুন’৷ রাজনীতির কর্তাভজা কাহিনীর অভাব নাই৷ হরিয়ানার বিজেপি সরকারের মন্ত্রী অনিল ভিজ মন্তব্য করিয়াছেন মহাত্মা গান্ধীর চাইতেও বড় ব্র্যান্ড নরেন্দ্র মোদি৷ তিনি খাদি ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের ডায়েরি, ক্যালেন্ডার হইতে মহাত্মা গান্ধীর ছবি সরাইয়া প্রধানমন্ত্রীর ছবি বসানোর পক্ষে যুক্তি হাজির করিয়া গান্ধীর ভূমিকাকে নস্যাৎ করিয়া বলিয়াছেন ‘যেদিন হইতে গান্ধীর নাম জড়াইয়াছে আর খাদি শিল্প মাথা তুলিতে পারে নাই৷ দেশের টাকায় গান্ধীর ছবি বসানোয় টাকার দামের পতন ঘটিয়াছে৷’ তাঁহার এই মন্তব্য ঘিরিয়া দেশজুড়িয়া জোর বিতর্ক দেখা দিয়াছে৷ যদিও হরিয়ানার এই মন্ত্রী বিতর্কের উত্তরে বলিয়াছেন, কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না৷ মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে যাহা বলিয়াছি তাহা একান্তই আমার নিজস্ব মত৷ তবে, কেউ যাহাতে দুঃখ না পান সে জন্য মন্তব্য ফিরাইয়া নিতেছি৷ ভিজের উৎসাহে মহাত্মা গান্ধীর ছবি সরাইয়া মোদির ছবি বসানোর ঘটনাকে বিজেপি কঠোর ভাবে নিন্দা করিতেছে বলিয়া দলীয় মুখপাত্র শ্রীকান্ত শর্মা জানাইয়াছেন৷ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী খাট্টা বলিয়াছেন ইহা ভিজের নিজস্ব মন্তব্য৷ তাহার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নাই৷ মহাত্মা গান্ধীকে ব্যবহার করিয়া কংগ্রেস দীর্ঘকাল রাজনীতির তাস খেলিয়াছে৷ গান্ধী এখন কংগ্রেসের হাতছাড়া হইয়াছে৷ গান্ধীকে নিয়া বিজেপি রাজনীতির ময়দান ব্যবহার করিতেছেন এমন ঘটনা আছে৷ সেখানে বিজেপির এক মন্ত্রী গান্ধীর চাইতে বড় আসনে মোদিকে বসাইয়া এখন বিতর্কে জড়াইয়াছেন৷ বিজেপি বুঝিয়াছে, ইহা হইবে আত্মঘাতি খেলা৷ এখনও দেশের বহু মানুষ গান্ধীর অনুরাগী৷ গান্ধীর বিরোধীদের সংখ্যাও কম নহে৷ অনেক যুক্তি তথ্য দিয়া গান্ধীর নীতি, পদক্ষেপের তীব্র সমালোচকও আছেন৷ গান্ধীর বিরুদ্ধে অনেক অনেক লেখক পুস্তক রচনাও করিয়াছেন৷ নাথুরাম গডসে গান্ধীর হন্তারক৷ এই নাথুরাম আসলে কে? কেন নাথুরাম গান্ধীকে হত্যা করিল? তাহা নিয়াও অনেক গবেষণা করিয়া যে বিশ্লেষণ দিয়াছেন তাহাতে গান্ধী সম্পর্কে নতুন করিয়া ভাবিবার তাগিদও বাড়াইয়াছে একথা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই৷
একথা ঠিক, হরিয়ানার মন্ত্রী ভিজ কিসের তারনায়, কোন্ যুক্তিতে গান্ধীর উপর এমন বিরূপ ও বীতশ্রদ্ধ ভাব পোষণ করিয়া তাহার স্থলে একেবারে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তুলিয়া আনিলেন? এই সম্পর্কে মোদির প্রতিক্রিয়া অবশ্য জানা যায় নাই৷ হরিয়ানার এই মন্ত্রী কি গান্ধীর প্রতি বিরাগ ভাজন হইয়া মোদিকে এই আসনে বসাইয়াছেন না মোদিকে তোয়াজ করিতে এত উৎসাহী হইলেন? রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা নিশ্চয়ই ভুলিয়া যান নাই যে সম্ভবত ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সূর্য্য তখন মধ্য গগনে৷ চারিদিকে তাঁহার জয়জয়কার৷ ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ’ বিজয় করিয়া বিশ্বময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার হাওয়া৷ গোটা বিশ্ব তাঁহার রাজনৈতিক দূরদর্শীতাকে তারিফ করিয়াছে৷ দেশ তাঁহাকে ভারত রত্ন উপাধিতে ভূষিত করে৷ ভক্তরা তাঁহাকে এশিয়ার মুক্তি সূর্য্য বলিয়া অভিহিত করে৷ আসামের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তো অতি উৎসাহী হইয়া বলিয়াই ফেলিয়াছেন ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া৷’ সেই ‘বিখ্যাত’ উক্তিতে ইন্দিরা সেদিন বিগলিত হইয়াছিলেন কিনা জানা না গেলেও বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা তাহার সমালোচনায় ‘মুখর হইয়াছিলেন৷ সেদিন কিন্তু ইন্দিরা বা তাঁহার দল কংগ্রেস দেবকান্ত বরুয়ার এই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ তো করেনই নাই এবং এই মন্তব্য প্রত্যাহার করিয়া নেন নাই৷ যুগে যুগে স্তাবকরা নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতাভানদের খুশী করিতে দেশের পক্ষে অসম্মানজনক মন্তব্য করিতে দ্বিধা বোধ করেন না৷ হরিয়ানার মাননীয় মন্ত্রী গান্ধীর জায়গায় মোদিকে বসাইয়া যে সাহস দেখাইয়াছেন তাহার জন্য নিশ্চয়ই বাহবা না দিয়া পারা যাইবে না৷ কারণ তিনি আগামী দিনের সম্ভাবনাকেই বোধ হয় তুলিয়া ধরিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *