BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় জাগ্রত রোজভ্যালী

ত্রিপুরাতেও এখন রোজভ্যালী চিটফান্ড সগৌরবে বিরাজিত৷ ব্যবসায়ও চলিতেছে যথারীতি৷ আমতলীতে রোজভ্যালী পার্কটি যে এখনও মানুষের মনোরঞ্জনে নিয়োজিত আছে তাহাই তো প্রশংসার দাবী রাখিতে পারে৷ রোজভ্যালী পার্ক বলিয়া বন্ধ করিয়া দিতে হইবে তাহার তো কোনও যুক্তি নাই৷ রোজভ্যালী আমানতকারীদের টাকা মারিয়াছে ইহার পিছনে অন্য খেলা৷ আর এই চিটফান্ডে টাকা রাখিতে তো আমাদের জনপ্রতিনিধিরাই পরোক্ষে প্ররোচিত করিয়াছেন৷ এই পার্কটি যখন উদ্বোধন হয় তখন তো শুধু মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারই নহেন কংগ্রেস বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক দিলীপ সরকারও উদ্বোধন মঞ্চ আলো করিয়া বসিয়াছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গে রোজভ্যালীর এই রকম অনুষ্ঠানে যেসব গণ্যমান্যরা উপস্থিত হইয়াছিলেন এবং ভাষণ রাখিয়াছিলেন তাঁহাদের যদি সিবিআই গারদে পুরিতে পারে সেখানে ত্রিপুরায় ভিন্ন কান্ড হইবে কেন? অনুষ্ঠানে হাজির থাকিলে গ্রেপ্তার করিতে হইবে এমন যুক্তি মানিয়া নেওয়া যায় না৷ যদি তাঁহাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় তখনই ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিবিআই উদ্যোগী হইতে পারে৷ তবে, একথা ঠিক, রোজভ্যালীর পার্ক উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী ও বিধায়কদের উপস্থিতির কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হইয়াছে৷ রোজভ্যালী এইসব অনুষ্ঠানের প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাইয়া মানুষের টাকা হাতাইয়াছে৷ মানুষের মনে বিশ্বাসের ভিত রচনা করিয়াছে এইসব অনুষ্ঠানগুলি৷
কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথ গুরুতর অভিযোগ তুলিয়াছেন৷ অভিযোগে বলা হইয়াছে, রোজভ্যালীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সখ্যতা আছে৷ গত সতের মাস যাবৎ রোজভ্যালী পার্ক হইতে কোনও বিনোদন কর নিতেছে না রাজ্য সরকার৷ রোজভ্যালীকে কেন রাজ্য সরকার কর ছাড় দিতেছে তাহার তদন্ত হওয়া দরকার৷ তিনি অভিযোগে আরও বলিয়াছেন যে, অতীতেও রোজভ্যালীকে নানা ভাবে মদত দিয়াছে রাজ্য সরকার৷ খাস জমি ও তিনজন উপজাতির জমি দখল করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে এই বিনোদন পার্ক৷ রতনবাবুর মতে, চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হইতেই তাহাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গে ও ভুবনেশ্বরে রোজভ্যালীর বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইয়াছে৷ বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রোজভ্যালীর বিনোদন পার্ক বন্ধ করিয়া দিয়াছে৷ অথচ এই রাজ্যে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করিয়া চলিয়াছে রোজভ্যালী৷ তিনি আরও অভিযোগ করিয়াছেন রাজ্যে সিবিআই তদন্ত যাহাতে না হয় সে জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন পন্থা পদ্ধতি গ্রহণ করিয়াছে৷ রাজ্য সরকার এমন ভাবে রিপোর্ট পাঠাইয়াছে যে, ডেফোডিল, কসমিক, প্রগতি শিল্ড সহ পাঁচটি চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে রাজী হইয়াছে৷ সেখানে তালিকায় রোজভ্যালী হাওয়া৷ অথচ সবাই জানে রাজ্যে চিটফান্ডের নামে সবচাইতে বেশী ডাকাতি করিয়াছে রোজভ্যালী৷ রাজ্য সরকার খুব সুচতুর ভাবে কেন রোজভ্যালীকে বাঁচাইতে চাহিতেছে তাহা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে সাধারণ মানুষের কাছে৷ খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিধায়ক রতন নাথের অভিযোগ গুরুতর বিষয়টি সামনে নিয়া আসিয়াছে৷ এক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষের মনে যে গুরুতর প্রশ্ণ দেখা দিয়াছে এবং আমনতকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা উদ্ধারের প্রশ্ণে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ এই তদন্তের ক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থই মুখ্য না হয়৷ পশ্চিমবঙ্গে যদি একের পর এক সিবিআই অভিযান চালু থাকে, অনেক সাংসদকে কাঠগড়ায় তোলা হয়, সেক্ষেত্রে ত্রিপুরায় রোজভ্যালীর কেলেংকারীর জোরদার তদন্ত হইবে না কেন? এই দ্বিচারিতায় সিবিআই’র ভূমিকাই সন্দেহজনক হইয়া উঠিয়াছে৷ কয়েকদিন পরপরই সিবিআই আসিতেছে সিবিআই আসিতেছে বলিয়া একটি মহল হইতে হঠাত প্রচার চালাইতেছে৷ ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপির কর্মকর্তারও এখন সিবিআাই তদন্তের ব্যাপারে যে যথেষ্ট আগ্রহী সেই প্রচারে মনযোগী হইতে দেখা গিয়াছে৷ প্রশ্ণ উঠিয়াছে, এই তদন্তের জন্য কোথায় কি পার্ক বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে সে জন্য ত্রিপুরার আমতলীর পার্কটি বন্ধ করয়িা দিতে হইবে এমন কোনও যুক্তি নাই৷ এটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করিয়া পার্ক চালু রাখার উদ্যোগ নিলে ভালই হইবে৷ ত্রিপুরাতে বিনোদনের তেমন কোনও জায়গা নাই৷ এই পার্ক কিছুটা হইলেও মানুষকে বিনোদনের সুযোগ দিতেছে৷ বিনোদন কর আদায় না করা, ইত্যাদি সব বিষয়েই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হউক৷ আর এই তদন্তের ভার দেওয়া হউক উচ্চ ক্ষমতার তদন্ত ব্যুরোকেই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *