কংগ্রেস ও তৃণমূলে সখ্যতা

বড়ই জটিল পরিস্থিতির দিকেই রাজ্য রাজনীতি৷ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির মাথায় এইবার বসানো হইয়াছে বিধায়ক আশীষ সাহাকে৷ রাজনীতিতে তাঁহার উজ্জলতা আছে৷ কিন্তু তবু, তাঁহার নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে বিক্ষোভ দেখা দিল৷ একথা তো ঠিক যে, সুদীপ বর্মনের ঐকান্তিক চেষ্টাতেই কংগ্রেসে এতবড় ভাঙ্গন হইয়াছে৷ ছয়জন কংগ্রেস বিধায়কই চলিয়া গেলেন তৃণমূল কংগ্রেসে৷ তাহার পুরস্কার দলের হইকমান্ড সুদীপ বর্মনদের না দিলে চরম অবিশ্বাসের কাজ হইবে৷ আশীষ সাহা বর্মন শিবিরের অতি বিশ্বস্ত হইলেও নিজে অনেক বিতর্কের উর্দ্ধে এবং তুলনামূলক স্বচ্ছ রাজনীতির পক্ষে৷ তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন৷ সুতরাং, প্রদেশ সভাপতি পদে আশীষ সাহার নিযুক্তিকে খুব বেশী অযৌক্তিক বলা যাইবে না৷ সাংগঠনিক নির্বাচনের নাটক না করিয়া সরাসরি কমিটি গঠন করিয়া তৃণমূল সুপ্রিমোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তো অন্য উপায় নাই৷ প্রদেশ কমিটিতে বর্মন শিবিরের আধিপত্য খর্ব হইয়াছে এমন বলা যাইবে না৷ আসলে, রাজ্য রাজনীতি অনেক দ্বিধা দ্বন্ধের মধ্যে চলিতেছে৷ তৃণমূলের পালের হাওয়া কি বিজেপি কাড়িয়া নিতেছে না? বড়জলা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল তো চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল তৃণমূল মানুষের মনকে টানিতে পারে নাই৷ ভোটাররা কার্য্যত রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থাই জানাইয়া দিল৷
বিজেপি প্রদেশ নেতৃত্বে দবে বলিষ্ট নেতৃত্ব নাই৷ তবু, রাজ্যের বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপির উত্থান লক্ষ্য করা যাইতেছে৷ এই গেরুয়া দল যখন রাজ্যের প্রায় সর্বত্র সংগঠন শক্তিশালী করিতে তৎপর তখন তৃণমূলে কংগ্রেস সবে মাত্র প্রদেশ কমিটি ঘোষিত হইল৷ দলকে মানুষের কাছে নিযা যাইতে হইলে প্রয়োজন সংগঠন, কমিটি গঠন৷ তৃণমূল সেক্ষেত্রে বিজেপির চাইতে অনেক বেশী পিছাইয়া আছে৷ গোটা দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডল পরিবর্তনমুখী৷ যে কংগ্রেস পঃবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে জোট করিয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে কোতল করিতে সক্রিয় হইয়াছিল আজ সেই রাজনীতি কোন পথে? তৃণমূলনেত্রী ও কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী এক মঞ্চে, কাছাকাছি৷ জাতীয় রাজনীতিতে দুই দল এক সূত্রে গাঁথা৷ কংগ্রেস ও তৃণমূল কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সিপিএম নিজেকে সরাইয়া নিয়াছে৷ জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট যখন দ্রুত বদলাইতেছে তখন এই ত্রিপুরায়ও তৃণমূল কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাইতে তো বাধা থাকিবার কথা নহে৷ দিল্লীতে দোস্তি রাজ্যে কুস্তি এই দ্বৈত রাজনীতি তো কাম্য হইতে পারে না৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে ত্রিপুরায় কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের জোট গঠনের তাগিদ বাড়াইবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ বিজেপির সঙ্গে এই দুই দলের সমঝোতার সম্ভাবনা আছে মনে হয় না৷ তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন প্রদেশ সভাপতি আশীষ সাহার সামনেও বিরাট পরীক্ষার দিন আগত৷ দলের বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভ প্রশমনেও কি ভূমিকা নেওয়া যায় সেই চেষ্টা নতুন সভাপতি কতখানি নিতে পারিবেন তাহা দেখিবার বিষয়৷
একথা সত্যি যে, ত্রিপুরায় অবাম শক্তি বহুধা বিভক্ত৷ আর এজন্যই এরাজ্যে সিপিমে দলের ক্ষমতারোহণের ক্ষেত্র অনেকটাই নিশ্চিত৷ বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস এখনও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় শক্তিশালী সংগঠন গড়িয়া তুলিতে পারে নাই৷ সেখানে আগামী দিনে রাজ্য দখলের স্বপ্ণ দেখিবে কি করিয়া? জাতীয় রাজনীতিতে, মোদি বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মধ্যমণি হিসাবে অভিষিক্তা হইতে দেখা গিয়াছে৷ মোদি বিরোধী আন্দোলনের এই পরিণতি কোন্ পথে তাহাও আজ লক্ষ্য করিবার বিষয়৷ একথা আজ স্পষ্ট যে, রাজনীতিতে বিজেপি এবং সিপিএম এই দুই দলই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী শক্তি৷ এই দুই দলের সঙ্গেই লড়াই’র মাধ্যমে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান কতবেশী কঠিন নতুন প্রদেশ সভাপতি নিশ্চয়ই তাহা হাড়ে হাড়ে বুঝিবেন৷ আগামীদিনে ত্রিপুরার রাজনীতির পথ সহজ সরল ভাবে তৈরী হইবে না৷ একথাও আজ উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না যে, নীতি আদর্শের চাইতে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ই প্রধান লক্ষ্য৷ এক্ষেত্রে যে দল সুবিধা দিতে পারিবে সেই দলেই জন জোয়ার দেখা দিতে পারে৷ এই সুবিধার লক্ষ্যে বড় ধরনের দল বদলের ঘটনাও ঘটিবার সম্ভাবনা আছে৷ রাজনীতির এই টানাপোড়নের মধ্য দিয়াই রাজ্য রাজনীতিতে ভাঙ্গা গড়া চলিবে৷ আর এই পথেই কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মৈত্রীর পথ প্রশস্ত হইলে রাজ্য রাজনীতি কিছুটা হইলেও নতুন খাতে প্রবাহিত হইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *