/বিজয় দিবস

বিজয় দিবস

ষোলই ডিসেম্বর বিজয় দিবস৷ ১৯৭১ সালের এই দিনেই পাকিস্তান বাহিনী পরাজয় বরণ করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে৷ ৯৩ হাজার পাক সেনা তখন বন্দী হয় ভারতীয় বাহিনীর হাতে৷ সেই দিনের যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়াছিলেন মেজর জেনারের জগদিশ সিং আরোরা৷ তিনি আজ নাই৷ বার্ধক্যের কারণে তিনি প্রয়াত হইয়াছেন৷ কিন্তু তাঁহার শৌর্য্য গাঁথা ইতিহাসে স্বার্ণাক্ষরে লিখা আছে৷ এই ঐতিহাসিক ষোলই ডিসেম্বর ভারতের সেনা জওয়ানদের কাছে একটি স্মরণীয় দিন৷ উজ্জল ইতিহাসের এই ক্ষণটিকে ভারতীয় সেনা বাহিনী বিনম্র চিত্তে স্মরণ করিয়া থাকে৷ সেনা বাহিনী এই দিনটি নানা অনুষ্ঠানে প্রতিপালনও করিয়া থাকেন৷ প্রকৃত পক্ষে এই দিনেই বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের বিজয় ঘোষিত হয়৷ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে ত্রিপুরাতেই ষোল লক্ষাধিক শরণার্থী আশ্রয় নিয়াছিলেন৷ ভারত মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়াছিল৷ কিন্তু পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়া পড়ে৷ শরণার্থীদের বিষয় নিয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের নজর আকর্ষণ করিয়াছেন৷ বিভিন্ন দেশে সফর করিয়া তিনি পাকিস্তানের ভূমিকা ও বাংলাদেশের শরণার্থী আগমনের বিষয় তুলিয়া ধরিয়াছিলেন৷ মুুক্তি যোদ্ধারা যখন প্রাণপন লড়াই চালাইয়াছিল তখন পাক সেনারা ভারতের উপরই আক্রমণ শুরু করে৷ এই আগরতলা শহর উড়াইয়া দেওয়ার সমস্ত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যদি ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ না শানাইত তাহা হইলে এই শহর শ্মশান হইয়া যাইত৷ ১৯৭১ সালে গভীর রাতে পাক হামলার আগেই ব্রহ্মাস্ত্র চালায় ভারতীয় বাহিনী৷ আখাউড়া তখন রণক্ষেত্র৷ শহর আগরতলার মানুষ তখন ব্যাংকারের ভিতর৷ অনেকেই তখন শহর ছাড়িয়া অন্যত্র আশ্রয় নিয়াছেন৷ সেই অতর্কিত আক্রমণে পাক বাহিনী দিশাহারা হইয়া যায়৷ ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ ভারতের এই ঐতিহাসিক জয় হইয়াছিল৷ এই ষোলই ডিসেম্বর৷ তাই এই দিনটি গভীর শ্রদ্ধায় বিজয় দিবস হিসাবে পালিত হইয়া আসিতেছে৷
আজও বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয় নাই৷ মুসলীন মৌলবাদীদের চক্রান্তে সেই দেশের সার্বিক প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি হইতেছে৷ এখনও সেখানে ভারত বিরোধী শ্লোগান পঁুজি করিয়া ক্ষমতার মসনদ দখলে মরিয়া৷ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা সেনাধ্যক্ষ পারভেজ মুশারফ এই সেদিন স্বীকার করিয়াছেন বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের শোধ তুলিতেই পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধে নামিয়াছিল৷ পাকিস্তান এখনও ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি চালাইয়া রাখিয়াছে৷ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা তো বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখিবেই৷ আর এজন্যই হাসিনা সরকার সদা সতর্ক৷ মৌলবাদী চক্রান্তের নায়কদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার প্রতিনিয়ত নজরদারী রাখিতেছে৷ বাংলাদেশে কোনও কোনও রাজাকার বাহিনীও সক্রিয় আছে৷ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে তাহারা বিরোধীতাই শুধু করে নাই পাক বাহিনীকে সাহায্য করিয়াছে৷
দূর্ভাগ্যের হইলেও ইহাই সত্যি যে, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের বিরোধীতায় এই ভারতে যাহারা সক্রিয় ছিল আজ তাহাদের অবস্থা কি? তাহাদের অনেকেই এখন মুক্তি যুদ্ধের অবদানের জন্য সম্মানীত হইতেছেন৷ কাহারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করিয়াছেন এই ত্রিপুরা তথা ভারতবর্ষের মানুষ জানেন৷ যুগে যুগে এই সুবিধাবাদীরাই ঝোপ বুজিয়া কোপ মারিয়া থাকে৷ আজকের এই বিজয় দিবসে সুবিধা ভোগীদের মুখোশ উন্মোচনের শপথ নেওয়াই হইবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মহৎ কর্ম৷