BRAKING NEWS

শিশু পাচারের নৃশংসতা

মানবিকতার এত বড় বিড়ম্বনা ভাবনারও অতীত৷ শিশু পাচারের ঘটনা নতুন নহে৷ কিন্তু, এমন ব্যাপক হারে মানব শিশু পাচার বাণিজ্যের ঘটনা সম্পর্কে জনমনে ধারণাই ছিল না৷ পাচারের জন্য মুরগী ছানার মতো ব্যবহার করার ঘটনাও আবিসৃকত হইয়াছে৷ পশুদের উপর নির্মমতার বিরুদ্ধে পশুপ্রেমীরা প্রতিবাদী হইতেছেন৷ কিন্তু চুরি করিয়া বা প্রতারণার মাধ্যমে মানব শিশুদের নিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই নির্মম ঘটনা সম্পর্কে এতকাল সরকার, প্রশাসন একেবারেই ঘুমে ছিল? কাকপক্ষীও টের পায় নাই মানব শিশুদের উপর এমন জঘন্য আচরণের৷ শিশুরা ফুলের মতো পবিত্রতায় মোড়া৷ অনেকে আবার ভগবান হিসাবে দেখিতে চান৷ সেই মানব শিশুদের মুরগীর মতো নৃশংস ভাবে রাখিবার ঘটনা আমাদের মানবতার গর্বকে চুরমার করিয়া দিয়াছে৷ এই কিছুদিন আগে চৌদ্দই নভেম্বর শিশু দিবস পালিত হইয়াছে৷ শিশুদের নিয়া কোথাও কোথাও সারগর্ব আলোচনাও হইতে পারে৷ কিন্তু, শিশু কল্যাণে তেমন পরিকল্পনা গ্রহণ বা রূপায়নের উদ্যোগ দেখা যায় নাই৷ শিশুদের নিযা যতখানি গালভরা কথা শোনা যায়, বাস্তবে তাহার ছিঁটে ফোঁটাও নাই৷ এখনও বহু শিশু অশিক্ষা, অপুষ্টিতে ভোগে৷ শিশু শ্রম তো দিব্যি চলিতেছে৷ শিশুদের প্রতি এই যে অবজ্ঞা তাহারই সুযোগে শিশু বিক্রি শিশু পাচার দিব্যি চলিতেছে সরকার ও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়া৷

পশ্চিমবঙ্গে শিশু পাচার চক্রের হদিশ পাইয়াছেন গোয়েন্দারা৷ কলকাতার ঠাকুর পুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম হইতে ১০টি শিশু উদ্ধারের ঘটনা সাধারণের চোখ বিস্ফারিত হইয়াছে৷ ঘটনার বিবরণ তো এত বেশী অমানবিক, নিষ্ঠুর যে তা ভাবিলেও গা কাঁটা দিয়া উঠিবার কথা৷ পাচারের জন্য আনা সদ্যোজাত শিশু যেন মুরগীর ছানা৷ মাংসের দোকানে পাঠাইবার আগে মুরগী ছানাকে খাওয়াইয়া দাওয়াইয়া যেভাবে বড় করা হয় সেভাবেই নাকি এই শিশুদের হৃষ্টপুষ্ট ও বড় করিয়া পাচার করা হয়৷ শিশু পাচারের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল মানবতা আজ কতখানি বিপন্ন৷ প্রকাশিত সংবাদে ভয়ংকর চিত্র পাওয়া গিয়াছে৷ এই শিশু পাচার চক্রের কাজকর্ম চলিতেছে ত্রিশ বছর যাবৎ৷ এইসব শিশুদের ছয় সাত লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হইত৷ এই পাচার চক্রের হদিশ পাইতে এতদিন লাগিয়া গেল? শত শত শিশু পাচার করিবার ঘটনা তো অপরাধী স্বীকার করিয়াছে৷ কলকাতায় বৃদ্ধাশ্রমের আড়ালে এই শিশু পাচার চলিত৷ বিভিন্ন নার্সিং হোমে এই শিশুদের নানা ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে কব্জা করা হইত৷

এই শিশু পাচারের ঘটনা শুধু কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ এমন ভাবিবার কারণ নাই৷ ঘটা করিয়া যে দেশে শিশু দিবস পালনের উদ্যোগ চলে সেই দেশে শিশুরা কতবেশী নিষ্ঠুরতার শিকার তাহা ভাবিলেও তো আতকিয়া উঠিতে হয়৷ এই ফুলের মতো মানব শিশুরা পাচারকারীদের হাতে কোথায় নিরুদ্দেশে চলিয়া যায়৷ তাহাদের ভাগ্যে কোন্ ভবিষ্যৎ নামিয়া আসে কে বলিতে পারিবে৷ তাহারা কোনদিন জানিতে পারিবে না তাহাদের মাতৃ পিতৃ পরিচয়৷ এই ঘটনাকে কোনও ভাবেই খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷ যত শীঘ্র সম্ভব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে মানব শিশু পাচার রোধে উদ্যোগী হইতে হইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *