BRAKING NEWS

নির্বাচনে স্বচ্ছতা

ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়া আলোচনা বিতর্ক সভা আগরতলায় সম্পন্ন হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য৷ নির্বাচন গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করিতেছে৷ সেই নির্বাচনের স্বচ্ছতা, প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা, টাকার খেলা ইত্যাদি বন্ধ করার প্রয়াস তো চলিতেছেই৷ কিন্তু অবাধ স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম হইযাছে এমন দাবী মানিয়া নেওয়া কতখানি যুক্তিগ্রাহ্য হইবে সেই প্রশ্ণ আছে৷ বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হিসাবে ভারত ইতিমধ্যেই পরিগণিত হইয়াছে৷ এমন কি বিভিন্ন দেশ ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা হইতে শিক্ষা নিতে চাহিতেছে৷ দেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৪৭ সালে সংবিধান গ্রহণের মধ্য দিয়া ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়া গণতন্ত্রের যে জয়যাত্রা সূচিত হইয়াছিল আজ তাহা অনেক বেশী পরিণত অবস্থায় উন্নীত হইয়াছে৷ সাতের দশকে বা তার পরের বেশ কয়েক বছর পর্য্যন্ত ভারতের নির্বাচন কমিশনেরই স্বাধীন সত্তা ছিল প্রশ্ণের মুখে৷ কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের অঙ্গুলী নির্দেশেই চলিত নির্বাচন কমিশন৷ একথা হয়তো অস্বীকার করা যাইবে না যে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষাণই কার্য্যত নির্বাচনী সংস্কারে হাত দিয়াছিলেন৷ কমিশনের স্বাধীন সত্তা, ক্ষমতা ইত্যাদির বিষয়ে তিনিই অনেক কিছুরই বন্ধ দুয়ার খুলিয়া দিয়াছিলেন৷ শেষাণই নির্বাচনের স্বচ্ছতা আনিতে, টাকার খেলা রোধ করিতে, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বচ্ছতার সার্টিফিকেইট, সম্পদের ঘোষণা ইত্যাদি চালু করিয়া ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসানে উদ্যোগী হইয়াছিলেন৷ তবু, আজও, ভারতের নির্বাচন ষোলআনা অবাধ, স্বচ্ছ হইতেছে এমন দাবী মানিয়া নেওয়া কঠিন৷ একথা জোর দিয়া বলা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ সত্বেও নির্বাচনে মাশল শক্তি, টাকার শক্তির অবসান হয় নাই৷ আর এই জন্যই, ভোটারদের একটা অংশ টাকার কাছে, মাশল শক্তি, হুমকির কাছে নতজানু হয়৷ নিজের বিবেক, বিচার হরাইয়া নিজেকেই বিকাইয়া দেয়৷ আজ ধর্ম জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতি হয়৷ এমন কোনও রাজনৈতিক দল খঁুজিয়া পাওয়া যাইবে না যে দল জাতপাত সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে আছে৷ এই যখন অবস্থা তখন এই নির্বাচন ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া নিয়া রাজনৈতিক দলগুলি তেমন কোনও উদ্যোগ নিতে উৎসাহী নয়৷ কারণ সব রাজনৈতিক দলই কম বেশী অস্বচ্ছতার কাছে নতজানু হয়৷
একথা খুব আনন্দের যে, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারেরও দাবী উঠিয়াছে৷ নির্বাচনের প্রতি জন আস্থা কমিতেছে৷ আর এজন্য দায়ী রাজনৈতিক দলগুলির অবক্ষয়৷ রাজনৈতিক দলগুলির নৈতিকতাবোধ আজ তলানীতে গিয়া পৌঁছাইতেছে৷ এই অবস্থা চলিতে থাকিলে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি মানুষের ন্যুনতম বিশ্বাসও থাকিবে না৷ আর এজন্য ‘নোটা’ ভোটারের সংখ্যাও বাড়িতেছে৷ দেশে যতদিন জাতপাতের, ধর্মের রাজনীতি থাকিবে ততদিন নির্বাচনে সৎ ও স্বচ্ছতার দেখা মিলিবে না৷ একথা তো স্বীকার করিতেই হইবে যে, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জাতপাত ও ধর্মের সুড়সুড়ি আছে৷ এই ধর্মকে ব্যবহার করিয়া ভোট আদায়ে সচেষ্ট৷ সুতরাং, একথা খুব জোরের সঙ্গেই বলা যাইতে পারে জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতির হাত ধরিয়া গণতন্ত্রের সর্বনাশ ত্বরান্বিত হইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *