নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ নির্বাচনের প্রতি জনআস্থা আনতে রাজনৈতিক দলগুলিকে নৈতিকতায় অগ্রণী হতে হবে বলে মনে করেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভাশিষ তলাপাত্র৷ এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না৷ নির্বাচন তাঁদের কাছে কোন অর্থ রাখে না৷ তাই নির্বাচনী সংস্কারে প্রধান শর্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নৈতিকতার সংস্কার করতে হবে৷ এই দেশটা ভালভাবে চলবে কি না তাদের দেখতে হবে৷
শনিবার আগরতলায় একটি গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভাশিষ তলাপাত্র নির্বাচন নিয়ে বাস্তব পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন৷ দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি আস্থা যে অনেকটাই কমেছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিয়ে এই গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মিহির কান্তি দেবও৷ অতীত দিনে নির্বাচনের একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ভোটের কাজ করতে গিয়ে রাত দশটা পর্যন্ত তাঁকে বন্দী থাকতে হয়েছে৷ তিনি জানান, বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হলে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এসে তাঁকে যে ভোট পড়েনি সেই ব্যালট প্যাপারগুলি তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন৷ এই নির্দেশ না মানায় তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল৷ একসময় একজন পরিদর্শক এসে খোঁজ খবর নিয়ে চলে যান৷ কিন্তু, কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অধ্যাপক মিহির কান্তি দেব অনেকটা ক্ষোভের সুরে বলেন এই বিষয়টি প্রিসাইডিং অফিসারের ডাইরিতে উল্লেখ করা হয়েছিল৷ কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তিনি বুঝতে পারেন প্রিসাইডিং অফিসার ডাইরি আদতে কেউ খুলেও দেখেন না৷ এদিন, সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্তও বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর জনগণের আস্থা অনেকটাই কমে গিয়েছে৷
ফলে, নির্বাচন সম্পর্কে ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভাশিষ তলাপাত্রের ধারণা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক বলেই মনে হয়েছে৷ এদিন তিনি বলেন, নির্বাচন ক্রমশ ভয়ানক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবে, পরিসংখ্যানের সাথে এই পর্যবেক্ষণ মেলানো যাচ্ছে না৷ কারণ, ভারতে ক্রমাগত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বাড়ছে৷ আগে ভারতে ভোটের হার গড়ে ছিল ৩৫-৪০ শতাংশ৷ কিন্তু, গত লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে ভোটের হার গড়ে ৬৫-৭৫ শতাংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তা সত্বেও তিনি মনে করেন দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না৷ এবিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি সেই পরিমান গণতান্ত্রিক কি না যে, নাগরিক তাদের উপর যে আস্থা রাখছেন সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে৷ এমন কোন রাজনৈতিক দল নেই যারা সত্যিকার অর্থে বুক উঁচিয়ে বলতে পারবে নির্বাচনে তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করেনি৷ নির্বাচনে দুর্নীতির বহু অভিযোগ উঠে৷ পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে গোটা পৃথিবীতে ভারতেই নির্বাচনে দুর্নীতির সবচেয়ে বেশী মামলা রয়েছে৷ এক্ষেত্রে সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি মনে করেন, সেজন্য সমাজ সংস্কারের দরকার রয়েছে৷ মূলগত ভাবে গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে সেগুলির মধ্যে যদি প্রভূত সংস্কার না আসে, শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন এবং তার প্রণালী সংস্কার করে এই দেশের জনপ্রতিনিধিত্বকে সত্যিকারের প্রতিনিধিমূলক করা যাবে না৷ তিনি মনে করেন, এটার জন্য সকলকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে৷ অবশ্য গণতন্ত্র বাঁচাতে নির্বাচন কমিশনকেও আরও শক্তিশালী করতে হবে৷ কিন্তু, এই পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র বিকশিত করতে মানুষকেই শিকর ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে৷ তবেই নির্বাচনে দুর্নীতি প্রভাবমুক্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷