BRAKING NEWS

বিপিএল ব্যাখ্যায় দ্বিচারিতা

Golden Tripura Wideবিপিএলের প্রকৃত ব্যাখ্যা নিয়া রাজ্য সরকার বছরের পর বছর যে তথ্য প্রদান করিয়া আসিতেছে তাহা নিয়া জনমনে বিভ্রান্তির অন্ত নাই৷ সরকারী তথ্যে একদিকে বলা হইতেছে রাজ্যে মানুষের আর্থিক সংগতি বাড়িয়াছে, আবার অন্যদিকে পরিসংখ্যানে দেখানো হইতেছে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের চাইতেও বিপিএলের সংখ্যা অনেক বেশী৷ সত্যিকার অর্থেই যদি রাজ্য উন্নয়নের শিখরে পৌঁছিয়া থাকে তাহা হইলে তো বিপিএলের সংখ্যা ক্রমশ নীচে নামিয়া আসিবার কথা৷ কিন্তু, তাহা সরকারী তথ্যে লক্ষ্য করা যাইতেছে না৷ ইহা নিয়া বিভিন্ন মহল হইতে নানা সমালোচনার ঝড় বইলেও সরকার কিন্তু সুবিধাবাদী অবস্থানে অনঢ় রহিয়াছে৷ ইহার পিছনে মূল রহস্য হইল বিপিএলের দোহাই দিয়া কেন্দ্র হইতে অধিক সুবিধা হাসিল করা৷
দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীদের সংখ্যা নিয়া বিবাদ নতুন নহে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের আমল হইতেই এই সংখ্যা নিয়া কেন্দ্র রাজ্য কলহ চলিয়া আসিয়াছে৷ আজও সেই কলহের অবসান হইয়াছে এমন কথা কি জোর দিয়া বলা যাইবে? রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দারিদ্র সীমার নীচের সংখ্যা ছিল আশী শতাংশ৷ আজ এতদিন পর রাজ্যে এই বিপিএল এর সংখ্যা প্রকৃতই কত তাহা সরকার কি বলিতে পারিতেছে? রাজ্যে বিপিএল এর হার যেখানে কমিবার কথা সেখানে বাড়িতেছে কেন, এই প্রশ্ণ উঠিতেছে৷
একথা তো অস্বীকার করা যাইবে না যে, ত্রিপুরার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র চোখে পড়ে৷ রাস্তাঘাট, সুউচ্চ বিল্ডিং ইত্যাদি তো উন্নয়নের জানান দিয়াছে৷ এখন এরাজ্যে ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক কমিয়া গিয়াছে৷ রাজ্যের গ্রাম পাহাড়গুলিতে জন সাধারণের জীবন যাত্রার মান বাড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়৷ বাড়ীঘরে কৌলণ্য দেখা দিয়াছে৷ সুতরাং উন্নয়ন হয় নাই এমন কথা বলা যাইতে পারে না৷ কিন্তু কাগজেপত্রে, রেকর্ডে কোন্ চিত্র আছে? বিপিএল সংখ্যা বাড়িলে উন্নয়নের দাবী ধোপে টিকিবে না৷ আসলে, সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে বিপিএল নয় এমন পরিবারও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি পাইয়াছে৷ পাকা বাড়ী, সরকারী চাকুরী আছে, স্রেফ ক্ষমতাসীনদের দৌলতে এই পরিবারও বিপিএল ভুক্ত ভাগ্যবান তালিকায় আছে৷ ফলে এর সংখ্যা কাগজে পত্রে বাড়িয়াই আছে৷ মাঝে মাঝে এই বিপিএল নিয়া তদন্ত হয়৷ কিন্তু পরিস্থিতির খুব বেশী পরবির্তন হইয়াছে বলিয়া মনে হয়না৷ পার্টিবাজী যত প্রকট হইবে ততই এই বিপিএল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুবিচার হইবে না৷ পার্টির অনুগত নহে এমন অনেক গরীব পরিবার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত হইতেছেন বলিয়া অভিযোগ আছে৷
একসময় বিপিএল সংখ্যার বা হারের উপর বিচার করিয়া কেন্দ্রের বরাদ্দ স্থির হইত৷ বিশেষ সহায়তাও মিলিত৷ সেজন্যই এক সময় এমন কি এখনও এই সংখ্যা কমানোর পক্ষে থাকিতে চায় না রাজ্য৷ ত্রিশ বছর আগে রাজ্যে যেখানে বিপিএল হার ছিল ৮০ শতাংশ এখন সারা রাজ্যে কমিয়া হয়তো হইয়াছে ৬৭ শতাংশ৷ এত বছর পর এই হারও তো অনেক বেশী, অস্বাভাবিক৷ রাজ্যে এত এত উন্নতির দাবী যেখানে করা হইতেছে, বিপিএল হার তো আরও বেশী কমিবার কথা৷ কিন্তু তাহা লক্ষ্য করা যাইতেছে না কেন৷ ইহাই দুর্ভাগ্যের বিষয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *