BRAKING NEWS

দল ভাঙ্গানোর খেলা

গণতন্ত্রে দল বদলও একটি গণতান্ত্রিক ধারা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়৷ ইহাও গণতন্ত্রেরই স্বাধীনতা৷ কিন্তু এক দলের টিকিটে আইন সভায় নির্বাচিত হওয়ার পর দলত্যাগ করিতে হইলে আইন সভার সদস্যপদ হইতে ইস্তফা দেওয়াই সংগত এবং নৈতিকতার ক্ষেত্রে ইহাই বাঞ্চনীয়৷ এই বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন না থাকায় সংসদ বা বিধানসভার সদস্যরা ইচ্ছামত দল বদল করিতে থাকেন৷ পরিস্থিতি এমন বিপজ্জনক হইয়া উঠে যে, এক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করিতে হয়৷ দলত্যাগের ক্ষেত্রে আইনসভার সদস্যদের পায়ে বেড়ি লাগানোর লক্ষ্যে দলত্যাগ করিতে দলত্যাগ বিরোধী আইন সেক্ষেত্রে কার্য্যকর হইবে না৷ সেই ফাঁক দিয়াই দলত্যাগ করিয়াও আইন সভার সদস্যপদ বজায় রাখিতেছেন৷ যে দলের প্রার্থী হিসাবে ভোটাররা জয়ী করিয়াছেন সেই দল ত্যাগ করা তো ভোটারদের মতামতকে উপেক্ষা ও অমর্যাদা করা৷ ইহা তো নৈতিকতা বিরোধী৷ রাজনীতি এমনিতেই নৈতিকতার ধারে কাছেও থাকিতেছে না৷ ইহা গণতন্ত্রের নৈতিকতার সামনে বড় বেশী দূর্যোগই ডাকিয়া আনিতে পারে৷ লক্ষ্য করিবার বিষয়, কেন্দ্রে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী দলের হাত হইতে বিধায়কদের দল ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে নগ্ণ ভাবে নামিয়া পড়িতে দেখা গিয়াছে৷ ঘোড়া কেনা বেচার এই ঘটনা গণতন্ত্রের সামনে বড় বেশী প্রশ্ণ চিহ্ণ আনিয়া দিয়াছে৷
এই ত্রিপুরাতে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হওয়া আইন সভার সদস্যরা একযোগে অন্তত ছয়জন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়াছেন৷ তাহারা বিধায়কপদ বহাল রাখিয়াই তৃণমূল কংগ্রেসে যুক্ত হইয়া গেলেন৷ এক্ষেত্রে নীতির প্রশ্ণটাই বড় হইয়া দেখা দিলেও তাহার তোয়াক্কা করেন না রাজনীতির ব্যাপারীরা৷ তাহাদের কাছে রাজনীতির ব্যবসাটাই নীতি৷ কংগ্রেস ভাঙ্গিয়াই তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধির ঘটনা শুধু ত্রিপুরায় নহে৷ তাহা চলিতেছে রাজ্যে রাজ্যে৷ যেখানে বিজেপির হাত প্রসারিত, দল ভাঙ্গাইয়া বিজেপি রাজ কায়েমের নগ্ণ প্রয়াস শুরু হইয়া গিয়াছে৷ অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভায় সেই খেলা নতুন নহে৷ শুক্রবার কংগ্রেস দলের ৪৪ জন বিধায়কের মধ্যে ৪৩ জন কংগ্রেস ছাড়িয়া যোগ দিয়াছেন বিজেপির সহযোগী দল পিপলস্ পার্টি অব অরুণাচল প্রদেশ বা পিপিএ দলে৷ কংগ্রেস ছাড়িয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু৷ অরুণাচলে কংগ্রেস শিবরাত্রির সলতের মতো একজনই আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবম টুকি৷ রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের বাতি কোথাও নিভিয়া গিয়াছে, কোথাও নিবু নিবু৷ ইহা নতুন কিছু নয়৷ অরুণাচলে ৬০ সদস্যের বিধানসভায় পিপিএর শক্তি এখন ৪৪৷ তাই সরকার গড়িবার ক্ষেত্রে অসুবিধা নাই৷ মাস দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অরুণাচল প্রদেশের শাসন ক্ষমতা হইতে সরিতে হইয়াছিল বিজেপিকে৷ কিন্তু ছাড়িবার পাত্র নহে এই দল৷ সহযোগী দলের ক্ষমতারোহণ করাইয়া ছাড়িয়াছে৷ এই সব ঘটনা তো নতুন নহে৷ এই নীতিহীন খেলা তো কংগ্রেসের আমলে সগৌরবে চলিয়াছে৷ সেই ১৯৮০ সালের দিকে ফিরিয়া তাকাইলে তো সেই নগ্ণ চিত্রই দেখা যায়৷ সেই সময় ইন্দিরা যখন ক্ষমতায় ফিরিলেন তখন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল জনতা দলের সঙ্গে গাঁটছাড়া ভাঙ্গিয়া দিয়া সদলবলে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ সেদিনের কংগ্রেসের আত্মহারা ভাব তো আজকের বিজেপিরও হইবার কথা৷ অরুণাচল প্রদেশে আয়ারাম গয়ারাম কান্ডের ঐতিহ্য প্রবাহমান৷ এই রাজ্যে বছরে কয়েকবার দল বদল করিয়া থাকেন বিধায়করা৷ কোটি কোটি টাকার খেলা চলে৷ মন্ত্রীত্বের টোপ তো থাকেই৷ গণতন্ত্রের এই খেলা ছিল আরও বিপজ্জনক৷ দল ভাঙ্গানোর খেলাতে সমর্থনকারী ত্রিশ বিধায়ককেই উপ মুখ্যমন্ত্রী করিয়া দেওয়া হইয়াছিল৷ অরুণাচল প্রদেশের এই ইতিহাস, দল ভাঙ্গানোর খেলায় খেলাতে সমর্থনকারী ত্রিশ বিধায়ককেই উপমুখ্যমন্ত্রী করিয়া দেওয়া হইয়াছিল৷ অরুণাচল প্রদেশের এই ইতিহাস, দল ভাঙ্গানোর খেলায় একেবারে শীর্ষে৷ সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মুকুট মিথি একজনকে চিফ ডেপুটি চিফ মিনিস্টারও বানাইয়াছিলেন৷ সেই সময় যতখুশী মন্ত্রী নিতে পারিতেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মন্ত্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফর্মুলা বাধিয়া দিলেও দল ভাঙ্গানোর নীতিহীন খেলা কিন্তু প্রবল ভাবেই অব্যাহত৷ গণতন্ত্রের পক্ষে ইহাও আজ বড় অশনি সংকেত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *