BRAKING NEWS

চিটফান্ডের সম্পত্তি ক্রোক

চিটফান্ড ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তেমন তৎপরতা নাই৷ রাজ্যের মানুষের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা নিয়া নির্বিঘ্নেই পালাইয়াছে চিটফান্ড কোম্পানীগুলি৷ এইসব বেআইনী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সিবিআই তদন্তের দাবীতে কংগ্রেসের আন্দোলন এক সময় তীব্র ছিল৷ এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎকার চাহিয়া ব্যর্থ হইয়া ত্রিপুরার কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল দিল্লীর যন্তর মন্তরে ধর্ণাও দিয়াছিলেন৷ এই অভিযান ও ধর্ণাতেই শেষ হয় নাই৷ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে ত্রিপুরা কংগ্রেসের বিক্ষোভকারীরা সাক্ষাৎ করিয়া রাজ্যের চিটফান্ড কেলেংকারীর সিবিআই তদন্তের দাবী জানান৷ রাষ্ট্রপতিও তাহাদের দাবীপত্র কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রকে পাঠাইয়াছেন বলিয়া জানাইয়া দিয়াছেন৷ চিটফান্ড নিয়া এই দিল্লী অভিযানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কংগ্রেসের পূর্বতন বিরোধী দলনেতা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সুদীপ রায় বর্মন৷ ত্রিপুরায় চিটফান্ড ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেস তখন তেমন মুখ খুলেন নাই কিংবা কোনও আন্দোলনেরও ঘোষণা নাই৷ এই ইস্যু ধরিয়া রাখিতে চেষ্টা করিতেছে কংগ্রেস৷ মাঝে মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিন্হা চিটফান্ড কেলেংকারীর সিবিআই তদন্তের চিৎকার চালাইয়া যাইতেছেন৷ বিক্ষিপ্ত ভাবে আন্দোলনও জারী রাখিয়াছেন৷ রাজ্য সরকারও এই কেলেংকারীর সিবিআই তদন্তের দাবীতে ট্যু শব্দও করিতেছে না৷ আসলে, কেচোঁ খঁুড়িতে যদি সাপ বাহির হইয়া যায় এই আশংকা তো আছেই৷ কিভাবে এত এত বছর চিটফান্ড সংস্থাগুলি মনের সুখে জনগণের কষ্টার্জিত টাকা লুট করিয়া নিল৷ আর এই সব চিটফান্ড সংস্থাগুলির বিভিন্ন লোক ঠকানো প্রকল্পগুলির উদ্বোধনেও গিয়াছেন রাজ্যের বাম সরকারের মন্ত্রীরা৷ সাধারণ মানুষ মন্ত্রীদের উপস্থিতি দেখিয়া ভরসা ও বিশ্বাস বাড়িয়াছিল৷ কিন্তু, আসলে এইসব ঘটনা যে মানুষ ঠকানোর বড় কৌশল সে বিষয়ে এখন আর সন্দেহ নাই৷
এইসব চিটফান্ডগুলিকে ধুইয়া কাহারা বিস্তর অর্থ বিত্তের, এমন কি ফ্ল্যাটের মালিক বনিয়াছেন তাহা ত্রিপুরার মানুষের কাছে গোপন নাই৷ কাহারা ঋণ নিবার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাফিজ করিয়াছেন এইসব তথ্য তো তদন্তে অনায়াষেই বাহির হইয়া আসিত৷ আসলে, সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের অভিযোগ, থানায় কত টাকা তছরূপের মামলা আছে খতাইয়া দেখা হয়৷ রাজ্য সরকার থানাগুলিতে যে মামলা করিয়াছে সেগুলি অর্থ লুন্ঠনের গুরুতর অভিযোগের স্বপক্ষে বক্তব্য নাই৷ কোটি কোটি টাকা লোপাট হইয়া গেল৷ কিন্তু পুলিশী মামলার ক্ষেত্রে একেবারেই সাদামাটা অভিযোগ৷ সিবিআই সেই অভিযোগের তদন্তভার নিবে কি করিয়া? এইসব প্রশ্ণ আসিয়াছে, কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের তেমন কোনও উদ্যোগ নাই৷ বিরোধী দলগুলিও তেমন জোরদার আন্দোলন করিবার মুরোদ নাই৷ কংগ্রেস তো ক্ষীণবল হইয়া পড়িয়াছে৷ আন্দোলনের তেজ, শক্তি নাই৷ এখন কংগ্রেসের আন্দোলনও যতটা না দাবী আদায়ের জন্য তাহার চাইতেও বেশী নিজেদের অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখিবার তাগিদে৷ আর এই চিটফান্ড কেলেংকারীর বিরুদ্ধে যিনি রাজ্যে কিছুটা হইলেও ঝড় তুলিয়াছেন, দিল্লী পর্য্যন্ত নিয়া গিয়াছেন সেই সুদীপ বাবু তো এখন নতুন দল তৃণমূলের ঘর গোছাইতেই ব্যতিব্যস্ত৷ আন্দোলনের সুযোগ ও সময় হইয়া উঠিতেছে না৷
রাজ্য সরকার ইহা খুব ভাল করিয়াই জানেন যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে চিটফান্ড কেলেংকারী বড় ইস্যু করিয়া তুলিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে চিটফান্ড কেলেংকারী নিয়া বিরোধীরা যেভাবে আদা জল খাইয়া লাগিয়াছিল তাহার পাল্টা যে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের কাছে নিয়া যাইবে সেই বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷ সম্ভবত সেই দিক চিন্তা করিয়া চিটফান্ড সম্পর্কে রাজ্যের বাম সরকার নড়িয়া চড়িয়া বসিতে পারে৷
চিটফান্ড কেলেংকারীর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যে হাটু কাঁপে তাহা তো রাজ্যবাসী দেখিতেই পাইতেছেন৷ অবশেষে আদালতের নির্দেশে না মানিয়া আর উপায় রহিল না৷ শনিবার সকালে চিটফান্ড বেসিল ইন্টারন্যাশনালের সম্পত্তি ক্রোক করা হইয়াছে৷ শহর আগরতলার কৃষ্ণনগরে বেসিল অফিসে অভিযান চালানো হয়৷ এই অফিসটি মোট বার গন্ডার জমি নিয়া৷ যাহার বাজারমূল্য চার কোটি টাকার উপরে৷ বেসিলের সাতটি দামী গাড়ীর হদিশও পাইয়াছে পুলিশ৷ গাড়ীগুলিও ক্রোক করা হইবে৷ আগরতলা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে চিটফান্ডের বিস্তর সম্পত্তি আছে৷ রেসপন্স কোম্পানির হোটেল আছে শহর আগরতলায়৷ এই হোটেলের বাণিজ্য এখন কাহারা করিতেছে রাজ্য সরকারকে তাহা খতাইয়া দেখিতে হইবে৷ এই হোটেলটিও রাজ্য সরকার কেন ক্রোক করিতেছে না তাহাই আশ্চর্য্যের৷ ত্রিপুরায় সব চাইতে বেশী আমানতকারী রোজভ্যালির৷ এই কোম্পানীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকে রাজ্য সরকারের বিলম্বের পিছনে কী দূর্বলতা কাজ করিতেছে সেই প্রশ্ণও উঠিয়াছে৷ বেসিলের সম্পত্তি ক্রোক করায় আমানতকারীদের মধ্যে খুশীর আবহাওয়া দেখা দিতে পারে৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিটফান্ডগুলির কেলেংকারী তদন্ত করানো উচিত৷ এই ইস্যুতে ভারতীয় জনতা পার্টিও মৌণব্রত পালন করিতেছে৷ সবগুলি রাজনৈতিক দলকেই এই ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার নৈতিক দায়িত্ব অস্বীকার করিতে পারে না৷ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা যতটা সম্ভব ফিরাইয়া দেওয়ার দায় রাজ্য সরকার অস্বীকার করিতে পারেন না৷ কারণ, রাজ্য সরকারের চোখের সামনে এবং মন্ত্রীদের স্নেহচ্ছায়ায় এই চিটফান্ডগুলি মানুষের পকেট কাটিয়াছে৷ মানুষকে বিভ্রান্ত হইবার সুযোগ পরোক্ষে রাজ্য সরকারই দিয়াছে৷ চিটফান্ড কেলেংকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়া নৈতিক দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে পালন করা উচিত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *