BRAKING NEWS

প্রশ্ণের মুখে ব্যাঙ্ক পরিষেবা

জাতীয় বা রাজ্য সরকারের নিজস্ব ব্যাঙ্কগুলি যদি নিরাপদ না হয়, আমানতকারীদের জমানো টাকা যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহা হইলে মানুষ কোথায় দাঁড়াইবে? প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কৈলাসহরের গৌরনগর শাখা হইতে তেত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ হইবার এক বছর পরও আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বিষয়ে তালবাহানা চালানোতে ক্ষোভের আগুন জ্বলিতে থাকে৷ ওই ব্যাঙ্কের জনৈক অস্থায়ী কর্মী স্বাক্ষর জাল করিয়া আমানতকারীদের টাকা গায়েব করে৷ ওই কর্মীর সঙ্গে আর কোনও চ্যানেল যুক্ত কিনা পুলিশ সেই তদন্তও চালাইয়াছে৷ প্রতারক ওই কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করিয়াছে৷ প্রতারিত আমানতকারীরা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সহ অন্যান্য কর্মীদেরও গ্রেপ্তারের দাবী তুলিয়াছে৷ দীর্ঘ দৌড়ঝাপের পর প্রতারিত আমানতাকীরা ব্যাঙ্কে তালা ঝুলাইয়া দিয়া ব্যাঙ্ক ঘেরাও করে শুক্রবার৷ তখন গৌরনগর ব্রাঞ্চে ছুটিয়া যান লিড ম্যানেজার এন মির্জা সর্দার৷ তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলে ব্যাঙ্কের তালা খুলিয়া দেয়৷ ২০১৫ সালের ৯ই আগষ্ট আমানতকারীরা ব্যাঙ্কে টাকা তুলিতে গিয়া দেখিতে পান তাহাদের স্বাক্ষর জাল করিয়া সেভিংস একাউন্ট হইতে তেত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা লোপাট হইয়া গিয়াছে৷ এইরকম ভাবে পঁয়ত্রিশ জন গ্রাহকের একাউন্ট হইতে টাকা তুলিয়া নেওয়া হয়৷ অভিযোগ যে, ব্যাঙ্কেরই এক কর্মী গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল করিয়া এই ডাকাতি করিয়াছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার জড়িত সন্দেহ অমূলক হইতে পারে না৷ পুলিশ ঘটনার মূল অভিযুক্ত কর্মীকে গ্রেপ্তার করিলেও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই৷
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল যে, ব্যাঙ্কে টাকা রাখা কতখানি নিরাপদ৷ দিনে দিনেই মানুষ ব্যাঙ্ক নির্ভর হইয়া পড়িতেছে৷ কষ্টার্জিত টাকা ব্যাঙ্কে রাখা নিরাপদ বলিয়াই মানুষ জানে৷ আজ এই বিশ্বাসেও যেন প্রশ্ণ চিহ্ণ আঁকিয়া দিল৷ আদি যুগে মানুষ টাকা পয়সা, মোহর ইত্যাদি কলসী ইত্যাদিতে জমাইত৷ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে লোহার সিন্দুকে টাকা রাখা হইত৷ এখন কালো টাকা ছাড়া সব টাকার বৃহদ অংশই এখন ব্যাঙ্কে রাখা হয়৷ ব্যাঙ্কের কাজকর্মেরও অভাবনীয় বা বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন সূচিত হইয়াছে৷ নগদ টাকা ছাড়াই এখন কেনা কাটা করা যায়৷ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বা অনলাইন লেনদেন হইতেছে৷ মোবাইল নেটে এখন লেনদেনের ঘটনা, আমাদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে সুযোগ সম্প্রসারিত হইয়াছে, যে পরিষেবার উন্নতি ঘটিয়াছে সেখানে ব্যাঙ্ক হইতে আমানতকারীদের জমানো টাকা লোপাট হইয়া যাইতেছে? এই সমস্ত ঘটনা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক তেমন সাফল্য কি পাইতেছে না? কিন্তু, ইহাই কোনও ব্যাঙ্কের পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হিসাবে চিহ্ণিত করা উচিত৷ ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থের পূর্ণ নিরাপত্তা যতদিন না থাকিবে ততদিন ব্যাঙ্কের পরিষেবার বিশাল রূপান্তর বা সাফল্যের গর্ব ধুলায় লুটাইতে বাধ্য৷
ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্য্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি ছিল বেসরকারী হাতে৷ তখন প্রায়ই ব্যাঙ্কগুলি ফেল মারিত৷ তখন আজকের চিটফান্ডের টাকা মারিংয়ের মতো ব্যাঙ্কের টাকাও গায়েব হইয়া যাইত৷ আমানতকারীরা কপাল চাপাড়াইতেন৷ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীই দেশের সমস্ত বেসরকারী ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করিয়া দেশ জুড়িয়া সাড়া জাগাইয়াছিলেন৷ সেই সময় দেশের শত শত রাজাদের ভাতা বন্ধ করিয়াও এক বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ নিয়াছিলেন৷ দেশ স্বাধীন হইবার পর যেসব দেশীয় রাজা ভারতে অন্তর্ভূক্ত হয় সেই সব রাজ্যের রাজাদের ভারত সরকার মোটা টাকা ভাতা প্রদান করিত৷ ইন্দিরা সেই রাজন্য ভাতার বিলোপ সাধন করিয়া জনমনের গভীরে স্থান করিয়া নিয়াছিলেন৷ দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে জাতীয়করণ করার কারণেই ব্যাঙ্ক পরিষেবার বিপুল অগ্রগতি সম্ভব হইয়াছে৷
সেই বিপুল অগ্রগতির মাঝে ব্যাঙ্ক পরিষেবা এক গভীর প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া গিয়াছে৷ ইউবিআই’র গৌরনগর শাখায় গ্রাহকদের তেত্রিশ লক্ষ টাকারও বেশী লোপাট হইবার ঘটনা জনমনে গভীর প্রশ্ণ আনিয়া দিয়াছে৷ যদি গ্রাহকদের জমানো টাকার সুরক্ষা না থাকে, স্বাক্ষর জাল করিয়া ব্যাঙ্কের কর্মী তাহা হাপিজ করিয়া দেয় তাহা হইলে ব্যাঙ্কের উপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা কতখানি থাকিবে? একটি জাতীয়কৃত ব্যাঙ্কের শাখার এই লোপাটের ঘটনা তো গ্রাহকদেরও চোখ খুলিয়া দিয়াছে৷ ব্যাঙ্কের পরিষেবার ক্ষেত্রে যে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন সূচিত হইয়াছে, যেভাবে পরিষেবায় দিনকে দিন নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত হইতেছে সেখানে গ্রাহকদের জমানো টাকার একশ শতাংশ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে না পারিলে সমস্ত কৃতিত্বই অসার হইয়া যাইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *