BRAKING NEWS

খোয়াই জেলা হাসপাতালে চলছে লুটের রাজত্ব, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়েও জনমনে চাপা ক্ষোভ

Ambulanceনিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ২৯ জুন৷৷ খোয়াই জেলা হাসপাতালে চলছে লুটের রাজত্ব৷ গরিব শ্রমিক মেহনতি মানুষের সাথে চিকিৎসা পরিষেবার নামে লুটের রাজত্ব যেমন চলছে তেমনি ডাক্তারবাবুদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিস নিয়েও কম জলঘোলা হচ্ছে না৷ খোয়াইয়ের বাইরে থেকে আগত ডাক্তারবাবুদের দ্বারা যেমন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগণকে নাজেহাল করা হচ্ছে, তেমনি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়েও জনমনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে৷ জনগণ বলছেন, বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০১০-১১ সালে খোয়াইয়ের বিধায়ক সমীর দেব সরকার খোয়াইবাসীর জন্য একখানা অ্যাম্বুলেন্স উৎসর্গ করেছিলেন৷ সে সাথে অ্যাম্বুলেন্সটির দেখভালের জন্য বর্তমান পুর পরিষদের কাছে দায়িত্বভার দেওয়া হয়৷ আগরতলায় রোগী নিয়ে যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৯০০ টাকা স্থির করে দেয় খোয়াই পুর পরিষদ৷ তার মধ্যে খোয়াই জেলা হাসপাতাল থেকে আগরতলা রোগী নিয়ে যাওয়া বাবদ ৮০০ টাকা, পুর এলাকার জন্য ৪০০ টাকা এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য ৫০০ টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া স্থির হয়৷ যে টাকা রোগীর ব্যাঙ্ক একাউন্টে প্রবেশ করে৷ কিন্তু বেসরকারি গাড়িগুলি ৭০০ টাকাতেই আগরতলায় রোগী নিয়ে চলে যায় বলে খোয়াইয়ের বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল চত্বরেই পরে থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে৷ মাসে ১টি বা ২টি রোগী নিয়ে যেতে এই অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার হয় মাত্র৷ অথচ সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে আগরতলা যাওয়া রোগীর সংখ্যা গড়ে ৮০-৮৫৷ এর মধ্যে পুর এলাকার ১৬-২০ এবং গ্রামীণ এলাকার ৭০-২০০ জন রোগীকে তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টের মাধ্যমে সে টাকা প্রদান করছে সরকার৷ অথচ খোয়াই পুর পরিষদের জ্ঞানীজনেরা যদি আগরতলা যাবার ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮০০ টাকা করে দিত তবে প্রতিদিনই ব্যবহার হত বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি৷ এতে করে প্রতি মাসে পুর পরিষদের আয় হত কমপক্ষে ৬০-৭০ হাজার টাকা৷ ধরে নেওয়া যাক প্রতি মাসে ৮০-৮৫ জন রোগী আগরতলায় যায় তার মধ্যে ৬০ জন রোগী নিতে পারত বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি৷ পুর এঢ়াকার ১৫ জন, গ্রামীণ এলাকার ২০০ জনের মধ্যে ১৫০ জন কমপক্ষে যায় তবেই ভাল একটা রেভিন্যু পেত পুর পরিষদ৷ কিন্তু জনগণ বলছেন বর্তমানে আগরতলা যাতায়াত করা গাড়িগুলি ৭০০ টাকায় আগরতলায় চলে যায়৷ কারণ একটি দালাল চক্র প্রতি যাতায়াতে ১০০ টাকা করে কমিশন খাচ্ছে৷ যদি প্রাইভেট গাড়িগুলি ৭০০ টাকায় আগরতলায় রোগী নিয়ে যেতে পারে এবং তাদের প্রফিটও হয়, তবে কেন পুর পরিষদের জ্ঞানীজনেরা বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটির ভাড়া ৯০০ টাকা ধার্য্য করে বসে আছে? নাকি এক্ষেত্রে অন্য কোন রহস্য রয়েছে? প্রশ্ণ জনমনে৷
সবচাইতে অবাক করার বিষয় হল, খোয়াইয়ের বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটিতে রোগী নিয়ে যাবার জন্য সর্বসুবিধা থাকলেও প্রাইভেট গাড়িগুলিতে সে সুবিধা যেমন নেই তেমনি ঐসব গাড়িগুলিতে রোগী নিয়ে যাওয়াও খুবই কষ্টকর৷ তারপরও পুর পরিষদ কেন মনগড়া ৯০০ টাকা গাড়ি ভাড়া ধার্য করে রোগীদের হয়রানির কারণ হয়ে উঠছে? প্রশ্ণ জনগণের৷ কেনই বা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রাইভেট গাড়িগুলির দালালচক্রের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে? যেখানে মাত্র ১০০ টাকা ভাড়া কমিয়ে দিলেই পুর পরিষদের ভাল একটা আয় হতে পারত, সেখানে রৌদ বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে থাকতে জনসাধারণের জন্য প্রদত্ত অ্যাম্বুলেন্সটি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচেছ? কেনই বা খোয়াইয়ের অধিকাংশ ক্লাব বা সামাজিক সংস্থা এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে না? কন্ট্রাক্টারি কাজে নিগোসিয়েশন বা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বা অপরাধমূলক কাজের বিচার নিয়ে ব্যস্ত থাকা অধিকাংশ ক্লাবগুলির সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ণ তুলেছেন খোয়াইয়ের আপামর জনসাধারণ৷ বলছেন, মাত্র একটি পূজা ছাড়া সারা বছর তেমন কোন সামাজিক কর্মসূচী গ্রহণ করতে দেখা যায় না অধিকাংশ ক্লাবগুলিকেই৷ খোয়াই শহরের জ্বলন্ত সমস্যা যেমন বিদ্যুৎ, জল, রাস্তাঘাট নিয়ে কোন ধরনের সমস্যায় কোন ধরনের উদ্যোগ নেই অধিকাংশ ক্লাবগুলির৷ অথচ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অধিকাংশ ক্লাবগুলিকে সারা বছরই কোনো না কোন কর্মসূচীতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়৷ মিডিয়ার কারণে এই উদ্যোগগুলি প্রত্যক্ষ করে শুধু আক্ষেপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না সাধারণ মানুষের৷ জনগণের সমস্যা ও চিন্তাভাবনার কদর করা এবং বাস্তবে প্রতিফলিত করার বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকায় থাকা ক্লাব বা সামাজিক সংস্থাগুলির নৈতিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান খোয়াইবাসীর৷ সে সাথে খোয়াই পুর পরিষদকে সুস্থিরভাবে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া হ্রাস করার বিষয়ে চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও দাবি জনগণের৷ খোয়াই পুর পরিষদ সাধারণ গরিব শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের জন্য সঙ্গতি রেখে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া হ্রাস করে কিনা তাই এখন দেখার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *