BRAKING NEWS

বাংলাদেশে মৌলবাদী থাবা

প্রতিবেশী বাংলাদেশের যেকোনও ঘটনা প্রবাহ ত্রিপুরা বা ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ শনিবার ভোরে খোয়াই’র আশারামবাড়ী অঞ্চলের গুমসিংবাড়ী এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপাড়ে পঞ্চাশ নম্বর গেটে দেড় শতাধিক বাংলাদেশী নারী পুরুষ শিশু জড়ো হইয়া ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে৷ সে দেশের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা তাঁহারা৷ এইসব জড়ো হওয়া বাসিন্দারা সকলেই হিন্দুগোষ্ঠীর বলিয়া জানানো হইয়াছে৷ তাঁহাদের মধ্যে উপজাতি ও বাঙালী অংশের মানুষ রহিয়াছেন৷ তাঁহারা সরকারের অনুমতি নিয়াই কালেংগা ফরেস্ট রিজার্ভের অন্তর্গত পাঁচটি সীমান্ত গ্রামে বসবাস করেন৷ অভিযোগ যে, বনকর্মী ও একশ্রেণীর মৌলবাদীরা এইসব গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার অব্যাহত রাখে এবং গ্রাম ছাড়িতে হুমকি দিতে থাকে৷ অত্যাচারের সঙ্গে জরিমানাও দিতে হয়৷ তাহাদের বাড়ীঘরও ভাঙচুর করা হয়৷ বনকর্মী ও মৌলবাদীদের মারধরে আহত হইয়া অনেকে হাসপাতালে ভর্ত্তি৷ বেশ কয়েকজন নিখোঁজ বলিয়া অভিযোগ৷ খোয়াই সীমান্তে ভারতে আসার জন্য জড়ো হওয়া বাংলাদেশীদের বুঝাইয়া সুজাইয়া বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হইয়াছে৷ এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের তরফে রিজার্ভ ফরেস্টের চেয়ারম্যান এবং বিজিবির বাল্লা বিপিওপির কোম্পানী কমান্ডারও আতংকিত বাংলাদেশীেদের উপর আর নির্যাতন হইবে না বলিয়া কথা দেন৷ এর পরই নির্যাতীত বাংলাদেশীরা নিজ গ্রামে ফিরিয়া যান৷
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ কতখানি অসহায়৷ নির্যাতীত বাংলাদেশীদের অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহা হইলে এই সম্পর্কে যথেষ্ট ভাববার বিষয়৷ মানুষ কতখানি বিপন্ন ও অসহায় হইলে পরে ভিটে মাটি ফেলিয়া অন্য দেশে শরণার্থীর জীবন বাছিয়া নিতে পারে৷ তাঁহাদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহা হইলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অংশের মানুষের নিরাপত্তা ইত্যাদির বিষয়ে, ভারত সরকারকে যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী করার লক্ষ্যে, এরাজ্যের মানুষকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার তাগিদ বাড়ানো প্রয়োজন৷ একথা অনেক বেশী সত্যি যে, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উস্কানী ও ষড়যন্ত্র চলিতেছে৷ ইতিমধ্যেই দুই জন পুরোহিতকে হত্যা করিয়াছে৷ এইসব ঘটনা উস্কানী৷ যাহাতে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ছাড়িতে বাধ্য হয়৷ আর এই জন্যই মৌলবাদীদের থাবা দিনে দিনেই বিস্তৃত হইতেছে৷ খোয়াই সীমান্তে অত্যাচারিত বাংলাদেশীদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার ঘটনাকে খুব খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷ স্বাধীনতার পর সেই পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান হইতে শরণার্থীদের ঢল বহে ভারতে৷ পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) হইতে হিন্দু বাঙালীরা এক কাপড়ে ভারতে চালিয়া আসে৷ অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার সেই ছবি, সেই ইতিহাস তো ভুলিয়া যাইবার নহে৷ বাংলাদেশের হাসিনা সরকার মৌলবাদীদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিতে প্রচেষ্টা চালু রাখিয়াছে৷ কিন্তু, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াই তো প্রতিনিয়ত অন্যসুরে কথা বলেন৷ তাহার রাজনীতি হইতে মৌলবাদীরা আস্কারা পায়৷ এই বঙ্গদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের সম্পর্ক দিনে দিনেই উন্নতি হইতেছে৷ জল, সড়ক ও রেল পথে উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হইতে যাইতেছে৷ ইহা ছাড়াও উভয় দেশের বুদ্ধিজীবীরা সাংসৃকতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে মেলবন্ধন, আসা যাওয়ার আন্তারিক উদ্যোগ চালু রহিয়াছে৷ ভারত বাংলাদেশের মৈত্রীর সম্পর্ক আরও বেশী মজবুত হইবে সেই বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ কিন্তু মৌলবাদীদের উস্কানী, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস অনাস্থা সৃষ্টির চেষ্টা সর্বনাশ ঘটাইতে পারে৷
খোয়াই বাংলাদেশ সীমান্তে দেড় শতাধিক ‘অত্যাচারিত’ বাংলাদেশীদের ভারতে প্রবেশে বাধা দিয়া, নিজেদের গ্রামে ফিরাইয়া দেওয়ার উদ্যোগ যথাযথ হইয়াছে৷ কিন্তু, এই ঘটনাকে খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷ কোন্ পরিস্থিতিতে নিজেদের ভিটে মাটি ফেলিয়া ভারতে আসিতে চায়? বাংলাদেশ সরকারককে এইসব ছোট খাটো ঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়া দেখা উচিত৷ কারণ সামান্য স্ফুলিঙ্গই দাবানল সৃষ্টি করিতে পারে৷ মৌলবাদীদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া বাংলাদেশকে উন্নয়নের অভিমুখে নিবার যে শপথ উচ্চারিত হইয়াছিল, তাহাকে রক্ষা করিতে না পারিলে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতাই প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া যাইবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *