BRAKING NEWS

দলত্যাগ ও গণতন্ত্র

সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে দল বদলের হিড়িক চলিতেছে৷ গণহারে কংগ্রেস ছাড়িয়া তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দলে যোগ দিয়াছেন৷ শুধু কংগ্রেস নহে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল সিপিএম ছাড়িয়াও অন্যান্য দলে যোগ দিবার সংবাদ মিলিতেছে৷ এই ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে সিপিএম দল ছাড়িয়াও অনেকে তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপিতে নাম লেখাইতেছেন৷ এই দল বদলের ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করিয়া শক্তি বিন্যাস ঘটিবার সময় আসিয়াছে৷ এইসব দল ত্যাগের ঘটনায় সব চাইতে বেশী বিপন্ন কংগ্রেস৷ এখন এই দল কঙ্কালসার অবস্থায় আছে৷ এই অন্তসার শূন্যতায় প্রাচীন এই দল কর্তৃক জনমনে কোনও দাগ কাটা দূরের কথা অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে৷ ত্রিপুরায় কংগ্রেসের সংগঠন এখন ধুলায় গড়াগড়ি খাইতেছে৷ কিন্তু ক্ষমতাসীন সিপিএম দলেও ভাঙ্গন দেখা দিয়াছে৷ বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা না দিলেও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে, সম্প্রতি সিপিএম দল ত্যাগের ঘটনা বাড়িয়া গিয়াছে৷ সিপিএম দলের সাংগঠনিক অবস্থা যে দিনে দিনেই নড়েবরে হইতেছে তাহাই যেন স্পষ্ট হইতেছে৷
Golden Tripuraপাওয়াইয়া দিবার রাজনীতির ইহাই পরিণতি৷ নীতি আদর্শের টানে সিপিএম দল আকড়াইয়া আছেন এমন লোকের সংখ্যা এখন নগন্য৷ সুযোগ সুবিধা পাওয়া ইত্যাদির পিছনেই মানুষ ছুটিতে থাকে৷ এই চাহিদা যখন পরিপূর্ণ করা অসম্ভব হইয়া পড়ে তখনই দলত্যাগের ঘটনা বাড়িতে থাকে৷ রাজ্যের সিপিএম দল হইতে সরিয়া দাঁড়াইয়াছে এমন লোকের সংখ্যা কম নহে৷ ইহা বাস্তব সত্যি যে, রাজ্যে মার্কসবাদী দল অনেকটাই ধাক্কা খাইয়াছে৷ এই ধাক্কা কাটাইয়া উঠা সহ কাজ নহে৷ ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি দল বদলের ঘটনা বাড়িয়াছে৷ এই দল বদলের ঘটনায় সবচাইতে বেশী কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন সিপিএম৷ কংগ্রেস কার্য্যত নিশ্চিহ্ণ হইয়া যাইতেছে৷ আর সিপিএম দল তো নিজেদের কৃতকর্মের মাশুলও গুনিতে বাধ্য হইতেছে৷ রাজ্যে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপির সংগঠন বিস্তারের অর্থ ইহাই কি বুঝাইতে চাহিতেছে না যে তাহারা কিছু জায়গা দখল করিয়াছে৷ রাতারাতি যাহারা ফুলিয়া উঠিয়াছেন তাহাদের পরিণতি কোন্ পথে তাহা তো এই মুহুর্তে বলা মুশকিল৷ তবে একথা ঠিক, অবাম ভোট ভাগাভাগির সুযোগে সিপিএম বা বামফ্রন্ট ষোল আনাই পাইবে সন্দেহ নাই৷ সুতরাং রাজ্যে বিজেপি যেভাবে ডালপালা বিস্তারে অগ্রণী হইয়াছে সেখানে তৃণমূলের ভবিষ্যত কতখানি সুরক্ষিত থাকিতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত নহে৷
এই ঘটনা ছাড়াও বিরাট প্রশ্ণ, রাজ্যের তৃণমূল ও বিজেপিতে তো সেই কংগ্রেস নেতাদের মুখই জনমনে ভাসিয়া উঠে৷ এই সব নেতাদের সম্পর্কে তো রাজ্যবাসীর তেমন উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা নাই৷ জনমনে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে এমন নেতারা তো আসলে ঘরবৈঠা হইয়াই আছেন৷ কারণ তাহদের সততা নিষ্ঠা ইত্যাদির প্রচারও তেমন নাই এবং তাহাদের বিষয়ে নতুন করিয়া ভাবিবার তাগিদ আসিয়াছে৷ রাজ্যের মানুষের বিচার বিশ্লেষণ যে অনেক বেশী যুক্তিগ্রাহ্য সেই প্রমাণতো আছে৷ ত্রিপুরায় ৬ জন বিধায়ক যদি তৃণমূলের জন্য ঝাপাইয়া পড়েন তাহা হইলে নিশ্চয়ই আলোড়ন উঠিবে৷ এই অবস্থায়, ত্রিপুরায় শক্তিশালী অবাম দলকে জনপ্রিয়তার শিখরে উঠিতে না পারিলে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক বেশী কাঠ কয়লা পুড়াইতে হইয়াছে৷ একের পর এক দল বদল, ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে বিরাট আশার আলোতে নতুন করিয়া কত প্রশ্ণ নিয়া আসিয়াছে৷ আগামী দিনে ক্ষমতা দখলের প্রশ্ণে ত্রিপুরার রাজনৈতিক হিংসাকেও যেন আমন্ত্রণ জানাইতেছে৷ এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার ভাগ্য বিড়ম্বনার সম্ভাবনাই উকি ঝঁুকি মারিতেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *