BRAKING NEWS

বঙ্গ রাজনীতির শিক্ষা

অগ্ণিকন্যা আবারও ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিতা হইলেন৷ চৌত্রিশ বছর টানা ক্ষমতায় থাকা সিপিএম বা বামফ্রন্ট এমন ভাবে চুপসাইয়া যাইবে ভাবা যায় নাই৷ রাজনৈতিক ইতিহাস ইহাই স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে যে, অগ্ণিকন্যা মমতা ছাড়া এই অসম্ভবকে সম্ভব করা যাইত না৷ মমতা বুঝিয়াছেন, অত্যাচারিত মানুষ সময় ও সুযোগ পাইলেই যথাযথ জবাব দিয়া দেয়৷ দ্বিতীয় বারও মানুষ যেভাবে মমতাকে বিশ্বাসের বরণ ডালা উপহার দিয়াছেন, তাহার মর্যাদা দিতে না পারিলে পরিণতি যে শুভ হইবে না তাহা জোরের সঙ্গেই বলা যাইতে পারে৷ চিটফান্ড কেলেংকারী, ঘুষ কান্ড ইত্যাদি ঘটনা ঘিরিয়া তৃণমূল সরকার ও দলের বিরুদ্ধে সাড়াশী আক্রমণ চলিয়াছে৷ সারদা কান্ডে রাজ্যের মন্ত্রী পর্য্যন্ত জেলে৷ এই আক্রমণের মুখে শুধু ব্যক্তি মমতাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বুঝাইতে পারিয়াছেন যে তিনি নিষ্কলঙ্ক৷ তাঁহার বিরুদ্ধে আঙুল তুলিবার কোনও সুযোগ নাই৷ এত পরিচ্ছন্ন, একেবারেই সহজ সরল জীবন ধারা বাংলার মানুষকে কতখানি আকর্ষণ করিয়াছে নির্বাচনী ফলাফল তো চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছে৷
westbengalমানুষের উপর জুলুম অত্যাচার, ক্ষমতার দম্ভ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার জোরে বিভিন্ন অবৈধ কাজে কর্মী ও নেতাদের জড়াইয়া যাওয়ার ঘটনা রোধ করিতে না পরিলে মানুষের সেই বিশ্বাস হারাইয়া যাইবে৷ তৃণমূলের একশ্রেণীর কর্মী ও নেতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের প্রতি এমন ব্যবহারের অভিযোগ আছে যে, বাণিজ্য ছাড়া ও নগদ নারায়ণ ছাড়া কাজকর্ম সুচারু রূপে করা যায় না৷ এই অভিযোগ একদিন ব্যাপক অংশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করিতে পারে৷ এইভাবে চাপা ক্ষোভ ক্ষমতাসীন দলের পায়ের তলার মাটি সরাইতে থাকে৷ উন্নয়ন বা প্রগতি নিশ্চয়ই মানুষের বড় চাহিদা৷ তাহা প্রত্যাশিত মতো না হইলেও মানুষের মনে ক্ষোভ তেমন আছড়াইয়া পড়ে না৷ কিন্তু ক্ষমতার দম্ভ, জোর জুলুম ইত্যাদির ঘটনায় ক্ষুব্ধ মানুষ সুযোগ পাইলেই জবাব দিয়া দেয়৷ মমতা ব্যানার্জী এইসব ছোটখাটো ঘটনার বিষয়ে কতখানি খোঁজ খবর নিতে পারেন, ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কতখানি উদ্যোগ নিতে পারেন এই বিষয়ে প্রশ্ণ আছে৷ দুর্নীতি ও বিভিন্ন কেলেংকারীর ঘটনা যাহাতে দলকে একেবারেই স্পর্শ করিতে না পারে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে সেই নিশ্চয়তাই সবচাইতে বড় কাম্য৷ এই বিষয়ে সতর্ক না হইলে পায়ের তলার মাটি কোন্ সময় সরিয়া যাইবে তাহা বলা মুশকিল৷ তাই, আজ সারা রাজ্যের যাবতীয় ঘটনার খোঁজ খবর নিতে হইবে৷ সেই মতো দলকে উজ্জীবিত করিতে হইবে৷ মানুষের কাছে ছুটিয়া যাওয়া, ভুল পথে কর্মীদের পদচারণা ইত্যাদির বিষয়ে সতর্ক থাকিবার তাগিদ তো আছেই৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির দিকে বিভিন্ন রাজ্য তাকাইয়া আছে৷ বিশেষ করিয়া কমিউনিস্ট দূর্গ বলিয়া পরিচিত ত্রিপুরা এক্ষেত্রে সারা দেশেই আলোচিত৷ মমতা কি ত্রিপুরার দিকে হাত বাড়াইবেন? কংগ্রেসের বিদ্রোহীরা তৃণমূলে যোগদান করিয়া কতখানি রাজ্য কাঁপাইবেন, মানুষকে কতখানি টানিতে পারিবেন এই প্রশ্ণ তো আছেই৷ পশ্চিমবঙ্গে দুইবার ক্ষমতা দখলের ঘটনা হইতে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ যে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছেন, সেখানে নতুন করিয়া প্রশ্ণ থাকিতেই পারে৷ একথা আজ অনেক বেশী সত্যি যে, আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল বড় ভূমিকা নিতে পারে৷ কেন্দ্রের সরকারকে চাপে রাখা ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারাকে ধরিয়া রাখার ঘটনায় সংখ্যালঘুদের খুশী করার রাজনীতি মমতা ভালোই জানেন৷ সব মিলিয়া জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলিষ্ট আসন করিয়া নিতে চলিয়াছেন৷ বিরোধী দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা হুজ্জুতি ইত্যাদি চালাইয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে যাহারা তলে তলে নিঃশেষ করিতে চায় সেই সব কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হইবে৷ পশ্চিমবঙ্গে যাহাতে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়া না উঠে সেখানে মমতাকে বিশেষ উদ্যোগ নিতেই হইবে৷ গণতন্ত্রকে আরও সাবলীল করা ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়া নতুন উদ্যোগে যাত্রা শুরুর এই ইতিহাস বাংলার মানুষ সারা দেশকে পথ দেখাইতে পারে৷ মমতা কি পারিবেন বাংলার শ্রেষ্ঠত্বের গরিমা পুনরুদ্ধার করিতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *