গঙ্গানগর ও মুঙ্গিয়াকামীতে ম্যালেরিয়ার থাবা , বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, ওঝার দ্বারস্থ আক্রান্তরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, আমবাসা, ২৮ মে৷৷ মারণব্যাধি ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন জলবাহিত রোগে আবারও সংবাদ শিরোনামে মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অন্তর্গত বিলাইহাম রিয়াংপাড়া সহ গোটা আঠারমুড়া পাহাড়৷ এবারও কোনো ব্যতিক্রম নেই৷ ম্যালেরিয়ার রোগ জীবাণুর থাবা বসাল আঠারমুড়া পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদগুলিতে৷ ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রতাপ শুরু হলেও জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনে কোনো খবর নেই৷ এই মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কোনো উপজাতির মৃত্যু হলে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিদ্রাভঙ্গ হয়৷ তখন প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য শিবিরের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে৷ সে যাই হোক না কেন গোটা আঠারমুড়া পাহাড়ের উপজাতি অধ্যুষিত জনপদগুলি মারণব্যাধি ম্যালেরিয়া জ্বরের কড়াল গ্রাসে জর্জরিত৷ এতে স্থানীয় উপজাতিরা দিশাহীন হয়ে পড়ছে৷ তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অন্তর্গত আঠারমুড়া পাহাড়ের vlcsnap-2016-05-28-14h04m42s229উপজাতি জনপদগুলিতে মারণব্যাধি ম্যালেরিয়া জ্বরের তীব্র দাপট চললেও স্বাস্থ্য প্রশাসনে খবর নেই৷ দীর্ঘদিন দরে এলাকাগুলিতে নেই কোনো স্বাস্থ্য শিবির৷ ফলে স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা চলছে৷
আঠারমুড়া এডিসি ভিলেজের এক নাবালিকা সহ আরো দুই উপজাতি মারণ ব্যাধি ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত৷ তারা বিশ্বলক্ষ্মী দেববর্মা(৫০), উষারাণী দেববর্মা(১১), সুকুমার দেববর্মা(৩৫) ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তেলিয়ামুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
এদিকে, এক ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত উপজাতি যুবক জানায় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য শিবির বন্ধ৷ অভিযোগ স্থানীয় মুঙ্গিয়াকামী প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও না থাকার মতো৷ এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিন জন চিকিৎসক থাকলেও তারা প্রতিদিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান না বলে অভিযোগ৷ তবে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ ফলে এলাকার মুমূর্ষ রোগীরা ওই মুঙ্গিয়াকামী প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে চিকিৎসক না থাকার কারণে৷ যার কারণে রোগব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য উপজাতিরা ওঝার সন্ধানে ছুটাছুটি করে৷
এলাকাবাসীরা জানায়, মারণব্যাধি ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হলে কয়লা গরম করে সেঁক দেয় রোগব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য৷
তবে অন্যদিকে মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অধীনে উত্তর গকুল নগর এডিসি ভিলেজের বিলাইহাম রিয়াং পাড়া ফের সংবাদ শিরোনামে চলে আসতে শুরু করেছে৷ এই উপজাতি অধ্যুষিত জনপদটিতে ফের জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে৷ ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে রতন জয় রিয়াং নামে এক শিশু তেলিয়ামুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গত দুদিন ধরে৷ এই জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক উপজাতি ঘরে বিনা চিকিৎসায় রয়েছে বলে খবর৷
এদিকে, এক রাজনৈতিক দলের নেতা জানান বর্তমানে আঠারমুড়া পাহাড়ের নোনাছড়া, কাঁকড়াছড়া, ৪৩ মাইল, ৪৮ মাইল, বিলাইহাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের কড়াল গ্রাস চলছে৷ এদিকে, রাজ্য পিজিপি দপ্তরের উদ্যোগে এলাকায় নেই কোনো সচেতনাতমূলক শিবির৷ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত উপজাতিরা মূলত চেতনাহীন৷ শূকর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবাদি পশুরা যেখানে বসবাস করে সেখানেই তারা অসচেতনভাবে চলাচল করছে৷ এছাড়াও অপরিশোধিত জল হল মুখ্য কারণ৷ ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচেছ উপজাতিরা৷ধলাই জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ চরম আকার ধারণ করেছে৷ গত ৮দিনে আমবাসা মহকুমার গঙ্গানগর ব্লক এলাকায় ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ ধলাই জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ চরম আকার ধারণ করেছে৷ গত ৮দিনে আমবাসা মহকুমার গঙ্গানগর ব্লক এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতরা হল চান্সমিলা রিয়াং, রাসমিতা রিয়াং, মুক্তাসিং রিয়াং, রেইলাবতি রিয়াং, প্রীতমজয় রিয়াং ও কার্যরাম রিয়াং৷ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের সমস্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল করে ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় মাঠে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ গঙ্গানগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক অরূপ বিশ্বাস জানান, গত ১৬ মে থেকে ২৩ মের মধ্যে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতদের মধ্যে ৪ জনের বাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কিলোমিটারের মধ্যে৷
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক প্রতিনিধি দল গঙ্গানগর ও গন্ডাছড়া এলাকায় ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন৷ ধলাই জেলার সিএমও মিলন কান্তি সাহা জানান, মনু ব্লক ও গন্ডাছড়া ব্লক এলাকায় দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন৷ চলতি মাসে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ যে বৃদ্ধি পেয়েছে তা অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন৷ ধলাই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে স্বাস্থ্য দপ্তর ধলাই জেলার ৩১ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৮১৬ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পেয়েছে৷
গঙ্গানগর ব্লকের বিডিও জানান, ৭টি ভিলেজ কমিটির অধিকাংশ গ্রামে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রচুর৷ এলাকার পরিস্থিতি ভাল নয় বলে ব্লক আধিকারিক জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *