BRAKING NEWS

শিক্ষা পর্ষদে কেলেংকারী

TBSEত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আবার এক কেলেংকারীর রেকর্ড তৈরী করিয়া বিখ্যাত হইয়া গেল৷ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে যে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ দিন দিন বাড়িয়াছে তাহা শেষ পর্য্যন্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে গ্রাস করিয়াছে৷ ইতিপূর্বে ফলাফল কেলেংকারীর ঘটনা আছে৷ এইসব ঘটনাগুলির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়া বরং তাহা ধামাচাপা দেওয়া হইয়াছে৷ ফলে, সেই সুবিধাবাদী এবং দায়িত্বহীন চক্র পর্ষদে বেশ পাকাপোক্ত ভাবেই ঘাঁটি গাড়িয়া আছে৷ কৃতিত্ব দেখাইতে গিয়া পর্ষদ রাজ্যের দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের এমন ভাবে বিড়ম্বনায় ফেলিবার ঘটনা বুঝাইয়া দিয়াছে যে, আমাদের রাজ্যের শিক্ষার মাথায় কি ভয়ানক মাথাওয়ালারা বসিয়া আছেন৷ কোনও পর্ষদ বা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় যদি দায়িত্বশীল লোকদের সন্নিবেশ করা না যায় তাহা হইলে নানা রকম কেলেংকারীর সম্ভাবনা থাকিতে বাধ্য৷ দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ফল প্রকাশের দিন শনিবার বাছিয়া নেওয়ার ক্ষেত্রে উর্বর মস্তিস্ক কাজ করে নাই, বরং বলা যায় দায়িত্বহীনরাই এমন স্পর্শকাতর পর্ষদকে সর্বনাশের শেষ সীমায় নিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত আছে৷ সকালে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া ফল প্রকাশ করিবার পরই পর্ষদ সভাপতি দাবী করিয়াছিলেন রেকর্ড সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হইয়াছে৷ বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন কলেজ ইত্যাদিতে যাহাতে ভর্ত্তির আবেদন করিতে পারেন৷ কিন্তু, বিসমিল্লাতেই তো গলদ৷ কৃতিত্ব দেখাইতে গিয়া ভুল ফল প্রকাশ করিয়া পর্ষদ একেবারে ল্যাজে গোবরে হইয়া গেল৷ প্র্যাকটিকেল পরীক্ষার নম্বর যোগ না করিয়াই কি করিয়া পাশের হার ৮১.৪১ শতাংশ হইয়াছে বলা হইল? পর্ষদ সভাপতি এই ভুল স্বীকার করিয়া দুয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন পাঠাইয়াই দায়িত্ব পালন করেন৷ অথচ সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্য সংবাদপত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে তো তাঁহার ভুলের সংশোধনী প্রচারিত হইল না৷ আসলে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি বদল করা হইয়াছিল অনেক কেলেংকারীর ঘটনার পর৷ সেখানে কয়েক বছর আগে বসানো হইয়াছে বাম আদর্শের অনুসারী অধ্যাপক মিহির দেবকে৷ এইসব পদে বসানোর ক্ষেত্রেও রাজনীতির পরিচয়টাই অগ্রাধিকার পায়৷ মিহির বাবুও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কেলেংকারীর ভুত তাড়াইতে ব্যর্থ হইয়াছেন৷ এত এত ছাত্রছাত্রীদের ভাগ্য নিয়া ছিনিমিনি খেলার দায়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তো বার বারই দুঃখ প্রকাশ করিয়া নিজেদের জান বাঁচাইতেছে৷
সিবিএসই লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের ফল যথাসময়ে প্রকাশ করিয়া দেয়৷ এই সিবিএসইর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মজা তো পর্ষদ সভাপতি হারে হারে বুঝিয়াছেন৷ আসলে নিজের ওজন বুঝিয়া না চলিলে পরিণতি ভয়াবহ হইতে বাধ্য৷ সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া আজ সকালে ওয়েবসাইটেও ফলাফল দেওয়া হয়৷ তাহা দেখিয়াই তো পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চক্ষু চড়ক গাছ৷ ফলাফলের সঙ্গে প্র্যাকটিকেলের নম্বর যুক্ত হয় নাই৷ এই জগাখিচুরী ফলাফল রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের মাথাই হেট করিয়া দিয়াছে৷ পর্ষদ সভাপতির কেলেকারীর দায় স্বীকার করাই কি শেষ কথা হইতে পারে? তাঁহার তো পর্ষদ সভাপতি পদ হইতে পদত্যাগ করা উচিত৷ ইহাই তো নৈতিকতা৷ পর্ষদ নৈতিকতার ধারে কাছেও না থাকিয়া একের পর এক ভুল করিয়া পাড় পাইয়া যাইবে কি কারণে? অতীতে বিভিন্ন কেলেংকারীর ঘটনা ঘটিয়াছে, সেখানে পর্ষদ সভাপতি ও কর্মকর্তারা নৈতিক দায়িত্ব মাথায় নিয়া দায়ও স্বীকার করেন নাই৷ সুতরাং রাজ্যের শিক্ষার স্বচ্ছতার স্বার্থে রাজ্য সরকারকে এই ব্যাপারে অনুকরণীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ কেলেংকারীর ঘটনা যে পর্ষদ রোধ করিতে পারে না, রাজ্যের মাথা হেট হইয়া যায়৷ সেই পর্ষদ মানুষের, শিক্ষানুরাগীদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়াছে৷
সংবাদ মাধ্যম হইতে ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল ঘোষণার তথ্য আসার পরই পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেবের সম্বিত ফিরে৷ সঙ্গে সঙ্গে ভুল স্বীকার করিয়া তিনটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পাঠাইয়া দায় মুক্ত হন৷ ভাবা যায়? ছাত্রছাত্রীর ভাগ্য নিয়া কতবড় ছেলেখেলা চলিতেছে৷ কলকাতার যে সংস্থা এই ফলাফল সিডি তৈরী করেন সেখানে কি রহস্য আছে তাহার উচ্চপর্য্যায়ের তদন্ত করা উচিত৷ পর্ষদ সভাপতিই জানাইয়াছেন কলকাতা হইতেই ভুল রেজাল্টের সিডি আসিয়াছে৷ তাহা পরীক্ষা বা যাচাই না করিয়া কেন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হইল? কেন ওই সংস্থা ভুল সিডি পাঠাইল? ইহার পিছনে গুরুতর রহস্য আছে বলিয়াই মনে হয়৷ রাজ্য সরকারের উচিত এই বিষয়ে উচ্চ পর্য্যায়ের তদন্ত করানো৷ রাজ্য সরকার যে এই পথে আগাইবেন না তাহাও রাজ্যবাসী জানেন৷
তাই, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠিবে যে, ৩৩১৯ জন (রেগুলার) বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীর ফল দিতে গিয়াই যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নাকানি চুবানি অবস্থা সেখানে আরও বড় দায়িত্ব এই পর্ষদ পালন করিবে কি করিয়া? মধ্যশিক্ষা পর্ষদে মান্ধাতার আমলের ঘূণে ধরা ব্যবস্থার সংস্কার করিতে হইবে৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করিতেছেন না৷ সাধারণ কর্মচারীদেরও আরও বেশী কর্মমুখীন হইবার তাগিদ আসিয়াছে৷ এই মুহুর্তে রাজ্য সরকারকেও গুরুত্ব দিয়া ভাবিতে হইবে৷ সময় আসিয়াছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের খোল নলচে পাল্টানোর৷ যদি তাহা করা না হয় এবং কেলেংকারী ঘটিতে থাকে তাহা হইলে রাজ্য সরকারকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অসংগত হইবে না৷ ত্রিপুরার শিক্ষার স্বার্থে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ফলাফল প্রকাশের কেলেংকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হইবে৷ তাহা না হইলে কেলেংকারী বা ছেলেখেলা বন্ধ হইবে না৷ রাজ্য সরকারও দায় অস্বীকার করিতে পারিবে না৷ কারণ পরোক্ষে রাজ্য সরকারই পর্ষদ পরিচালনা করেন৷ রাজ্য সরকার পর্ষদের সভাপতি নিযুক্ত করিয়া থাকেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *