BRAKING NEWS

রেগার সাফল্য ও রাজনীতি

MGNREGA_Logo_smallআর্থ সামাজিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টা নতুন নহে৷ অতীতে, ষাট সত্তরের দশকেও দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী জন সমষ্টির জন্য প্রকল্প চালু ছিল৷ ‘কাজের বদলে খাদ্য’ প্রকল্পে কেন্দ্রে বিস্তর অর্থ সেই সময় বরাদ্দ করিয়াছে৷ দরিদ্র অংশের মানুষকে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্র সহায়তার হাত বাড়াইয়াছে৷ আশীর দশকে ত্রিপুরায় দারিদ্র সীমার নীচের জনসংখ্যা ছিল আশী শতাংশের উপরে৷ আর এজন্য দারিদ্র দূরীকরণ বিভিন্ন প্রকল্পে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বরাদ্দও কম পায় নাই৷ দারিদ্র সীমার নীচের হার নিয়াও এক সময় কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত বাড়িয়াছিল৷ কেন্দ্রের প্রদত্ত অর্থে বিভিন্ন দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচী রূপায়ণের মাধ্যমে রাজ্যে দারিদ্র সীমার নীচের (বিপিএল) হার কমিতে থাকে৷ ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী রাজ্যের দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীর সংখ্যা ৪০.৬০ শতাংশ৷ রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ১৯৯৭ সালের হিসাব অনুসারে রাজ্যে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৬৬.৮১ শতাংশে অবিচল৷ বিপিএল কান্ডও আরেক প্রতারণার ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছে৷ বহু বিত্তশালীরাও বিপিএল পরিবার ভুক্ত হইয়া আছেন৷ রাজ্যে দারিদ্র সীমার নীচের হার এখন ৪০ শতাংশ হইবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ৷ রাজ্য সরকারই দাবি করিতেছেন যে, রাজ্যে ভিক্ষুক নাই৷ রাজ্যের উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণের সাফল্যের বর্ণনা দিতে গিয়া রাজ্য সরকারই রাজ্যে দারিদ্র শ্রেণীর হার যে শূন্যের কোটার দিকে আগাইতেছে তাহা পরোক্ষে স্বীকার করিতেছেন৷ এই বিপিএল হার নিম্নমুখী হইবার কারণে কেন্দ্রের বরাদ্দ হ্রাসের ঘটনাও ঘটিতেছে৷
ত্রিপুরায় বিপিএল জন সংখ্যার হার কমিতে থাকার ঘটনা একটি বড় সাফল্য এই কথা অস্বীকার করা যাইবে না৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কৃতিত্ব রীতিমতো উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ ত্রিপুরার আর্থ সামাজিক অবস্থা দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় অনেক ভাল৷ আর কেন্দ্রীয় সরকার সেই যুক্তিতেই চলতি বছরে রেগায় শ্রমদিবস কমাইয়া দিয়াছে৷ প্রকাশিত সংবাদে দেখা গিয়াছে, চলতি বছরে প্রথম কিস্তি অনুযায়ী ষাট কোটি টাকা ইতিমধ্যেই মঞ্জুর করা হইয়াছে ত্রিপুরার জন্য৷ কিন্তু, ত্রিপুরার সাংসদরা রেগায় এখন পর্য্যন্ত রাজ্যের জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হয় নাই এবং শ্রমদিবস বাড়ানো নিয়া কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে দরবার করিবার ঘটনায় বিস্মিত হইয়াছেন রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীও৷ জানা গিয়াছে, কেন্দ্রীয় সরকার রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস বৃদ্ধি করিবার ক্ষেত্রে শর্ত রাখিয়াছে, যেসমস্ত রাজ্যে ভূমিদাস, মেথর কিংবা আদিম জনগোষ্টি থাকিবে সেই রাজ্যগুলিকেই বিবেচনা করা হইবে৷ ত্রিপুরায় তাহার খামতি আছে৷ ফলে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মতে, যেহেতু রাজ্যের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন হইয়াছে তাই রেগায় শ্রমদিবস বৃদ্ধির আপাতত কোনও প্রয়োজন নাই৷
আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতির এই তথ্য ত্রিপুরাবাসীকে নিঃসন্দেহে স্বস্তি আনিয়া দিয়াছে৷ পিছাইয়া পড়া রাজ্যের মানুষ দীর্ঘ লড়াই করিয়াছে৷ দারিদ্রের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করিয়াছে৷ সেখানে সাফল্য আসিয়াছে৷ ত্রিপুরায় বছরের পর বছর দারিদ্র দূরীকরণে টাকা ঢালিবার পিছনে কোনও যুক্তি থাকিতে পারে না৷ একথা কে না জানে, রেগার কল্যাণে এরাজ্যে মানব সম্পদের সামনে নতুন করিয়া সমস্যা আনিয়া দিয়াছে৷ দেশের অন্যান্য রাজ্যে রেগার শ্রমিকও পাওয়া যায় না৷ কারণ এত স্বল্প মজুরীতে পোষায় না৷ কিন্তু, ত্রিপুরাতে রেগার প্রতি শ্রমিকদের এত অংশগ্রহণের রহস্য বা কারণ অনেকেরই জানা আছে৷ সুতরাং মানব সম্পদের অপচয়, নামমাত্র শ্রম করিয়া মজুরী নেওয়ার মধ্যে তো থাকে হীনমন্যতা৷ ফাঁকিবাজীর ধান্দা৷ ইহাতে মানুষকে প্রকৃত পক্ষে কর্ম বিমুখতার প্রবণতা বাড়াইয়া দেয়৷ আর সম্ভবত এজন্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা কমিতেছে৷ এই ত্রিপুরায় যেসব শিল্প, কারখানা গাড়িয়া উঠিতেছে সেখানে বহিঃরাজ্যের শ্রমিকই বেশী৷ রাজ্যের ইট ভাট্টাগুলিতে তো একচেটিয়া বহিঃরাজ্যের শ্রমিক৷ মুটে মজুর, ঠেলা গাড়ী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচুর বিহার ও অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিক কাজ করিতেছে৷ বিভিন্ন শিল্প কল কারখানায় ত্রিপুরার শ্রমিক নাই বলিলেই চলে৷ বহিঃরাজ্যের শ্রমিক ছাড়া এই সংস্থাগুলিতে তালা ঝুলিবে৷ রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প, বাণিজ্যিক সংস্থার মালিক পরিচালকরা শ্রমিক সমস্যা নিয়া তিতি বিরক্ত৷ তাই তাহারা বহিঃরাজ্যের শ্রমিকদেরই অগ্রাধিকার দেন৷ সামান্য মিষ্টির কারিগরও আনা হয় বহিঃরাজ্য হইতে৷ একথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, রাজ্যের শ্রমিকদেরকে কর্মবিমুখতায় আক্রান্ত করিয়াছে৷ নামমাত্র কাজ করিয়া বা কাজ না করিয়া অর্থ রোজগারের ধান্দা পরিহার করিতে হইবে৷ রেগার বরাদ্দ নিয়া শ্রমিক দরদের রাজনীতি আখেরে শ্রমজীবী মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াইবার সুযোগ হইতে বঞ্চিত করা হইতেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *